পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, জার্মানিতে প্রতি বছর এক হাজার অবৈধ শিকারের ঘটনা ঘটে৷ তবে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি৷
বিজ্ঞাপন
ভিলি হাইমেসের শখ বন্য প্রাণী পোষা৷ কোলনের বার্গিশেস লান্ডে ৪০ বছর ধরে লাল হরিণ পুষছেন তিনি৷ ৩৮টি হরিণ আছে তার৷ এখন তার অবসর জীবন৷ হরিণদের সঙ্গেই কাটে দিনের বেশিরভাগ সময়৷
গত জানুয়ারির ঘটনা৷ হরিণদের খাওয়াচ্ছেন ভিলি, হঠাৎ পাশেই চোখে পড়লো রক্তের ধারা৷ আতঙ্কে কেঁপে উঠলো বুক৷ একটু পরেই কয়েকজন হাইকার ছুটে এসে জানালেন, বেড়ার ওপারে এক জায়গায় তারা একটা হরিণের মৃতদেহ দেখেছেন৷ ভিলি গিয়ে অবশ্য দেহ পাননি, পেয়েছেন শুধু এমন কিছু অংশ যা মানুষ খেতে পারে না৷ ডয়চে ভেলের কাছে ভিলি তাই খুব বিস্ময় নিয়ে জানতে চান, ‘‘এমন কাজ করে কেন মানুষ? শুধু টাকার জন্য? ওইটুকু মাংস বিক্রির টাকার জন্য?’’
জার্মানির বন-জঙ্গল
জার্মানরা বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন৷ এভাবে অবসর সময় কাটাতে আর হাঁটতেও ভালোবাসেন তাঁরা৷ চলুন সে রকমই জার্মানির কিছু বনানির সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
জাতীয় পার্ক ইয়াসমুন্ড
ইয়াসমুন্ডের এই পার্কটি জার্মানির জাতীয় পার্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট পার্ক৷ বিখ্যাত ব়্যুগেন দ্বীপের একেবারে উত্তরে অবস্থিত এই পার্কের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে, করে মুগ্ধ৷ ইউনেস্কো ২০১১ সালে ইয়াসমুন্ড পার্কটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷
ছবি: Scoopshot/ac-images
এলবে নদীর নিসর্গ
প্রকৃতি সৃষ্ট নিসর্গের মধ্যে অন্যতম নদী পরিবেষ্টিত চরগুলি৷ নিয়মিত বন্যা হওয়ার কারণে এই সব চরে গাছপালা এবং পশুপাখিরা আনন্দে বেঁচে থাকে৷ যেমনটা এখানে, ব্রান্ডেনবুর্গের এলবে নদীতে৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এলবে নদীর এই চরটিকে ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যর অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
হারৎস
জার্মানির মধ্যভাগে অবস্থিত হারৎসের পাহাড়ি অঞ্চল শুধু জার্মানির সবচেয়ে বড় বনভূমি নয়, জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় বনাঞ্চলও বটে৷ ১৮২৪ সালে অন্যতম জার্মান লেখক হাইনরিশ হাইনে তাঁর ভ্রমণ কাহিনিতে এই অঞ্চলকে তুলে ধরেন৷ যাঁরা হাঁটতে পছন্দ করেন তাঁদের কাছে জায়গাটি খুবই প্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
হাইনিশ জাতীয় পার্ক
জার্মানির ট্যুরিঙ্গেন রাজ্যে রয়েছে ‘বুখেন’ বা বীচ গাছে ঘন জঙ্গল৷ এই বনের কয়েকটা গাছ আবার গত ৮০০ বছর ধরে এইভাবে একেবারে সাড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ এর জন্যই ইউনেস্কো ২০১১ সালে এই বনভূমিকে বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ এখানে বনবিড়ালের মতো অনেক বিরল প্রাণীও দেখা যায়৷
ছবি: DW/C. Hoffmann
স্পেসার্ট
জার্মানির দক্ষিণে অবস্থিত বাভারিয়া এবং হেসেন রাজ্যের মাঝামাঝি একটি পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই বনটি৷ আগে স্পেসার্ট ছিল ধনী ও বিশপদের শিকার করার জায়গা৷ শুধু তাই নয়, ঊনিশ শতকে এই জঙ্গলেই আস্তানা গড়েছিল জার্মানির কুখ্যাত ডাকাতরা৷ ১৮২৭ সাল থেকে ‘‘দাস ভির্টহাউস ইম স্পেসার্ট’’ নামে পরিচিতি লাভ করে এই ঘন বনাঞ্চল৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
ব্ল্যাক ফরেস্ট
ব্ল্যাক ফরেস্ট বা কৃষ্ণ অরণ্য নিয়ে নানা রকম ভূতের গল্প প্রচলিত আছে জার্মানিতে৷ আছে এই জঙ্গলের নামে একটি কেক-ও৷ সে জন্যই হয়ত এই কৃষ্ণ অরণ্যের জাতীয় পার্কের মর্যাদা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকে৷ আবার অন্যদের আশঙ্কা, জাতীয় পার্ক হলে এখান থেকে আর ফল সংগ্রহ বা গাছ কাটা যাবে না – জার্মানিতে পরিবেশ রক্ষা সত্যিই যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়!
ছবি: picture-alliance/Ronald Wittek
বাভারিয়ার জাতীয় পার্ক
রাখেল লেক বাভারিয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ হ্রদের মধ্যে একটি৷ লেকটি ঘিরে প্রায় ১০৭০ মিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই বন, যেখানে গত কয়েক দশকে একটি গাছও কাটা হয়নি৷ খুবই নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ এখানে৷ তাই হাঁটার জন্যও খুব উপযোগী এই অঞ্চল৷ ১৯৭০ সালে এই পার্কটিকে জার্মানির প্রথম জাতীয় পার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় পার্ক ব্যার্শটেসগাডেন
এটা আলপস পর্বতমালায় অবস্থিত জার্মানির একমাত্র জাতীয় পার্ক৷ পার্কটি উচ্চ পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থানের কারণে পর্যটকরা এখানে এলে বিরল প্রাণীর দেখা পান৷ তাই তো পক্ষীপ্রেমী আর বন্যপ্রাণী গবেষকদের জন্য এটা দারুণ একটা জায়গা৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
8 ছবি1 | 8
ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ এখনো ধরা পড়েনি৷ ভিলি হাইমেসের আশা কেউ হয়ত অচিরেরই ধরা পড়বে৷ আশা করার কারণও আছে৷ কয়েকদিন আগে রাতের আঁধারে একজনের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য ধরা পড়েছে ক্যামেরায়৷ তবু ভিলির মনে শান্তি নেই, আছে শুধু আতঙ্ক, ‘‘সে কি আবার আসবে? আবার এসে গুলি চালাবে? আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই, আমি শুধু ভাবি, একটা লোক অস্ত্র হাতে আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে!’’
অস্ত্রধারীরা এখন আর শুধু বন্য প্রাণীই শিকার করে না৷ মানুষের ওপরও গুলি চালায়৷
রাইনলান্ড-পালাটিনেটে অস্ত্রধারীর গুলিতে মারা যান দুই পুলিশ সদস্য৷ তদন্তকারীদের সন্দেহ, ঘটনার সঙ্গে বন্য প্রাণীর মাংসের অবৈধ ব্যবসার সম্পর্ক রয়েছে৷ ঘটনার পর স্থানীয় এক বাসা থেকে কয়েক টন বন্য প্রাণীর মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
পশুশিকারেরধরনওহার
জার্মানিতে বৈধভাবে পশু শিকারের সুযোগ রয়েছে৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর দশ লাখেরও বেশি হরিণ এবং নয় লাখের বেশি বুনো শূকর বৈধভাবেই শিকার করা হয় জার্মানিতে৷ সেই তুলনায় অবৈধভাবে পশু শিকারের ঘটনা অনেক কম- পুলিশের হিসেব অনুযায়ী বছরে এক হাজারের চেয়ে একটু বেশি৷ বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য মনে করেন, প্রকৃত হিসেবটা তার চেয়ে অনেক বেশি৷
তাছাড়া পুলিশের কাছে অভিযোগ করা মামলাগুলোর অধিকাংশই রাস্তায় কোনো বন্য প্রাণীর গাড়ির চাকায় চাপা পড়ার৷ হ্যাঁ, জার্মানির আইন অনুযায়ী, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বন্য প্রাণীর এমন মৃত্যুও অবৈধ পশু শিকার৷ প্রতি বছর সারা দেশে এভাবে ২৫০০-র মতো হরিণের মৃত্যু হয়৷ তার মধ্যে মাত্র হাজার খানেক ঘটনা অবৈধ শিকার হিসেবে পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়৷
লঘু শাস্তি
অবৈধ শিকারের শাস্তি নির্ধারণ করা আছে জার্মানিতে৷ তবে সেই শাস্তি খুব কঠোর নয়৷ রাইনলান্ড-পালাটিনেটের ওই ব্যক্তির মতো কারো কাছে প্রচুর অবৈধ মাংস পাওয়া গেলে তার বড়জোর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷