আফগান যুবককে পা ধরে টেনে নিয়ে অত্যাচার এবং এক মরোক্কানকে পিটিয়ে শূকরের মাংস খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে৷ তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছে জার্মান পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে পুলিশি নির্যাতনের রোমহর্ষক দুটি ঘটনা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করেছে নর্ডডয়েচ রুন্ডফুঙ্ক রেডিও (এনডেআর)৷ প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোবাইলে তোলা বেশ কিছু ছবি এবং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ হাতে পাওয়ার পর আইনজীবীরা তা খতিয়ে দেখছেন৷ ছবি এং মেসেজগুলোতে হ্যানোভার শহরের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিবাসী নির্যাতনের অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে৷ অ্যাটর্নি জেনারেল টোমাস ক্লিঙ্গে এনডেআরকে জানান, গত সপ্তাহে তাঁরা এ অভিযোগটি পেয়েছেন, এখন তদন্ত চলছে৷ তবে জার্মানির মানবাধিকার সংস্থা ‘প্রো অ্যাসাইল' ইতিমধ্যে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷ এক বিবৃতিতে হানোফার পুলিশকে ‘বর্ণবাদী' আখ্যা দিয়ে দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে তারা৷
সরকারি রেডিও ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনডেআর এক্সক্লুকিভ প্রতিবেদনে দুটি ঘটনা তুলে ধরেছে৷ প্রথম ঘটনাটি ২০১৪ সালের৷ সে বছরের মার্চ মাসে হ্যানোভার রেলস্টেশন থেকে এক আফগান যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ১৯ বছর বয়সি যুবকটির কাছে পাসপোর্ট বা অন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিলনা৷ পুলিশ তাঁর শেকল বাঁধা পা ধরে টেনেহেঁচড়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইরে নিয়ে যায়৷ থানায় নিয়ে পেটানো হয় তাঁকে৷ এনডেআর-এর কাছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এসেছে, যাতে এক পুলিশ কর্মকর্তা আফগান যুবকটিকে নির্যাতন করার খবর সানন্দে তাঁর এক সহকর্মীকে জানাতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘(জার্মানিতে) অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে আফগানটিকে আমি আচ্ছামতো ধোলাই দিয়েছি৷ নাকের ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়ায় ও চিৎকার করে উঠল৷ মজা লাগছিল আমার৷ তারপর আমি ওকে পায়ের শেকল ধরে টেনেটেনে স্টেশন থেকে বাইরে নিয়ে যাই৷ সে তখন শুয়োরের মতো চিঁ চিঁ করছিল৷''
দ্বিতীয় ঘটনাটি গত বছরের সেপ্টেম্বরের৷ পুলিশি নির্যাতনের এই শিকারের বয়সও ১৯৷ তবে সে আফগান নয়, মরোক্কান৷ বৈধ কাগজপত্রও ছিল তাঁর কাছে৷ তাঁর অপরাধ, বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠা৷ এই অপরাধে পুলিশ তাঁকে ধরে থানায় নিয়ে যায় এবং সেখানেই চলে অকথ্য নির্যাতন৷ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে নির্যাতন সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘‘(এক কর্মকর্তা) ছেলেটির শুয়োরের মতো চিঁ চিঁ আওয়াজ শুনেছে৷ জারজটা ফ্রিজ আর মেঝে থেকে শূকরের মাংস গপ গপ করে খেয়েছে৷''
জার্মানিতে বাড়ি সমস্যায় অভিবাসীরা
অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ তবে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷এ সমস্যা জার্মানিতে বসবসারত তুর্কিদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়৷ কারণ জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ তুর্কি আছেন৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
অভিবাসী তুর্কিদের সমস্যা বেশি
জার্মানিতে অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ এগুলোর মধ্যে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷ জার্মানিতে অভিবাসীদের মধ্যে তুর্কিদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ লাখ৷ কাজেই সমস্যাটাও ওদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট পায়
তুর্কিদের সাধারণত বাসা ভাড়া দেওয়া হয় পুরনো এলাকায় বহু বছরের পুরনো বাড়িগুলোয়৷ সেই সব বাড়িতে হয়ত দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় না বা জানালা দিয়ে বাতাস ঢোকে বা খানিকটা খোলা থাকে৷ অথবা শীতকালে হিটার কাজ করে না, অর্থাৎ ঠান্ডায় কাটাতে হয়৷ বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলেও ঠিক করানো যায়নি৷ এভাবেই জানান তিন দশক আগে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসা আহমেদ খালিফি৷
ছবি: DW/C. Ruta
বাড়ির অবস্থা অস্বাস্থ্যকর
আহমেদ খালিফির ছেলে আদেলের বাড়িতেও প্রায় একই সমস্যা৷ বাড়িটি ৪০ বছরের পুরনো হওয়ায় খুবই স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার এবং অস্বাস্থ্যকর৷ এ ব্যাপারে অবশ্য বাড়িওয়ালার মাথা ব্যথা নেই, কয়েকবার বলেও কোনো কাজ হয়নি৷
ছবি: DW/C. Ruta
অবশেষে নিজেই দায়িত্ব নেন
আবদাল ১৫ বছর এ বাড়িতে আছেন, কিন্তু একবারও রঙ করা হয়নি৷ আর সেকথা বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে তিনি যেন নিজেই এ কাজ করে নেন৷ তাই আবদাল এ কাজ ভালো না জানা সত্ত্বেও নিজেই করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
শীতের কথা ভেবে ভীত
একটি মাত্র ঘর আর সেখানেই বাচ্চাদের নিয়ে থাকেন আলিয়া৷ ঘরে যেসব জিনিসের জায়গা হয় না, সেসব জিনিস স্থান পেয়েছে বাড়ির বারান্দায়৷ কিন্তু শীতের সময় এসব প্রয়োজনীয় জিনিসের কি হবে – তা ভেবে অস্থির আলিয়া৷ এই অবস্থা অবশ্য শুধু আলিয়ার একার নয়৷
ছবি: DW/C. Stefanescu
অভিবাসীদের বেশি সন্তান
অভিবাসীদের বাড়ির বড় সমস্যা৷ তার কারণ, তাঁরা বড় শহরগুলোর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করতে পছন্দ করেন৷ তাছাড়া জার্মানদের তুলনায় অভিবাসীরা কম রোজগার করেন এবং তাঁদের সন্তান সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাড়ি পেতেও অসুবিধা হয়৷ এছাড়া একই ধরণের বাড়ির জন্য জার্মানদের তুলনায় তাঁদের কাছে বেশি ভাড়াও চাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বাড়ির অবস্থা করুণ
অভিবাসীদের বাসস্থান সমস্যা অবশ্য নতুন সমস্যা নয়৷ অভিবাসীরা যেসব এলাকায় থাকেন সেই পুরনো বাড়িগুলোকে ঠিকঠাক না করানোয়, দিনদিন সেগুলি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে৷ এই অবস্থা নিদিষ্ট কোনো শহরে নয়, প্রায় শহরেই এই একই অবস্থা৷
ছবি: Fars
আগুনে পরিবারের আট জনের মৃত্যু
প্রায় চার মাস আগে বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গের বাকনাং শহরে একটি বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন ছিল বিপজ্জনক এবং একথা বারবার মালিককে বলার পরও তা ঠিক করা হয়নি৷ যার ফল হয় মর্মান্তিক৷ ঘর গরম বা পানি গরমের জন্য ব্যবহার করা হতো কাঠের চুল্লি৷ ঐ বাড়িতেই আগুন লেগে একজন তুর্কি মা তাঁর সাত সন্তানসহ মারা যান৷ ছবিতে বাকনাং শহরের কিশোর-কিশোরীরা মৃত পরিবারের প্রতি ফুল আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ি মালিকদের মত
বাড়িওয়ালাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, তুর্কি পরিবারগুলো অনেক বড়, সবসময় হৈচৈ লেগে থাকে এবং তেমন পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন নয়৷ আর সেজন্যই তাঁদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা আপত্তি থাকে বাড়িওয়ালাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তরুণদের ভিন্নমত
বয়স্ক অভিবাসীরা বাসস্থানের ব্যাপারে যতটা বৈষম্যের শিকার হন বলে মনে করেন, এই প্রজন্মের তুর্কিরা তেমনটা মনে করে না৷ সম্ভবত এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা জার্মান ভাষা ভালো জানার কারণেই এমনটা ঘটছে৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
10 ছবি1 | 10
শূকরের মাংস মুসলমানদের কাছে হারাম৷ তাই মরক্কোর যুবকটিকে তা খেতে বাধ্য করা হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷ দুটি ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছে জার্মানির কেন্দ্রীয় পুলিশ৷
এদিকে এক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বাঁচানোর খবরও এসেছে সংবাদ মাধ্যমে৷ রবিবার লোয়ার স্যাক্সনির আরেক শহর লিঙ্গেনে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন ৩৬ বছর বয়সি এক মরোক্বান৷ পথচারীরা এসে তাঁকে মাটিতে ফেলে গায়ের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে৷ তারপর পুলিশ এসে দ্রুত নিয়ে যায় হাসপাতালে৷ আত্মহত্যা করতে যাওয়া লোকটিকে সোমবার মরক্কোয় জোর করে ফেরত পাঠানোর কথা৷ অভিবাসী হতে চাইলেও তাঁর কাছে বৈধ কাগজপত্র ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানোর একদিন আগে তাই আত্মহননের চেষ্টা করেন তিনি৷ তাঁর অবস্থা এখন বেশ সংকটাপন্ন৷