জার্মানিতে এই রবিবারে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জার্মানির জন্য বিকল্প বা এএফডি বলে পরিচিত অভিবাসনবিরোধী দলটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাবে বলে এক জরিপ বলছে৷ গতবছরের নির্বাচনে তারা তৃতীয় বৃহত্তম দল হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
সরকারি প্রচারমাধ্যম এআরডি ‘ডয়েচলান্ডট্রেন্ড’ নামে একটি জরিপ পরিচালনা করে৷ এই সময় উত্তরদাতাদের কাছে যে প্রশ্নগুলো জানতে চাওয়া হয় তার একটি হচ্ছে, আগামী রবিবার নির্বাচন হলে আপনি কাকে ভোট দেবেন?
জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এএফডি দল ১৮ শতাংশ ভোট পাবে৷ অর্থাৎ ৯ সেপ্টেম্বরে যে সবশেষ জরিপটি হয়েছিল তার চেয়ে দুই শতাংশ ভোট বেশি পাবে তারা৷ আর জোট সরকারের অংশীদার এসপিডি দল পাবে ১৭ শতাংশ ভোট৷ অর্থাৎ এএফডির চেয়ে তারা কম ভোট পাবে৷ সেই হিসেবে, রবিবার নির্বাচন হলে এএফডি দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হবে বলে জরিপ বলছে৷ প্রথম হবে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জোট সিডিইউ/সিএসইউ৷ তারা পাবে ২৮ শতাংশ ভোট, যা ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া এই জরিপে সিডিইউ/সিএসইউর সবচেয়ে খারাপ ফল৷
ইউরোপের কয়েকজন ডানপন্থি নেত্রী
ডানপন্থি পপুলিস্ট দলকে সমর্থন করার মতো নারীদের সংখ্যা ইউরোপে দিন দিন বাড়ছে৷ এক্ষেত্রে যে নারী নেত্রীরা ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের কয়েকজনের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/E. Gailard
ফ্রান্স: মারিন ল্য পেন
২০১১ সাল থেকে ফ্রান্সের চরম ডানপন্থি দল ‘ন্যাশনাল ব়্যালি’র প্রধান তিনি৷ দলটির নাম আগে ছিল ‘ন্যাশনাল ফ্রন্ট’৷ দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি দলের চরম ডানপন্থি ভাবমূর্তিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন৷ এবং তা করতে নিজের বাবাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন মারিন ল্য পেন৷ দেশটির সবশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমানুয়েল মাক্রোঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/E. Gailard
জার্মানি: ফ্রাউকে পেট্রি
মুসলমান ও অভিবাসীবিরোধী নীতি অনুসরণ করে চরম ডানপন্থি দল ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ বা এএফডিকে গত বছর জার্মান সংসদে নিয়ে যেতে সমর্থ হন এই নেত্রী৷ যদিও দলের কিছু নেতার উগ্র বিবৃতির প্রতিবাদ করে পরবর্তীতে দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি৷ পেট্রির অভিযোগ, এই ধরনের মন্তব্য ‘গঠনমূলক বিরোধিতা’র পরিপন্থি৷ বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংসদে স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/Eventpress
জার্মানি: আলিস ভাইডেল
ফ্রাউকে পেট্রি দল থেকে চলে যাওয়ার পর এএফডি দলের অন্যতম প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন ভাইডেল৷ ২০১৩ সালে তাঁর একটি ইমেল প্রকাশিত হয়েছিল৷ ঐ ইমেলে তিনি বলেছিলেন, আরব, সিনটি ও রোমাদের মতো বিদেশিরা জার্মানিতে ভরে গেছে৷ এছাড়া ইমেলে তিনি তৎকালীন সরকারকে ‘শূকর’ ও ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার মিত্রদের হাতের পুতুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
পোল্যান্ড: বেয়াটা শিডওয়া
তিনি বর্তমানে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ডানপন্থি দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান৷ ইউরোপে প্রবেশ করা শরণার্থীদের গ্রহণে যে কোটা ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল, তার বিরোধিতা করেছিল শিডওয়ার দল৷ ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সাবেক এক নাৎসি শিবিরে উপস্থিত হয়ে তিনি তাঁর অভিবাসন-বিরোধিতার বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images
নরওয়ে: সিভ ইয়েনসেন
দেশটির বর্তমান মধ্য-ডানপন্থি সরকারি জোটের অংশ প্রোগ্রেস পার্টির নেতা ইয়েনসেন৷ তিনি ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক এবং নরওয়ের দূতাবাস তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করেছেন৷ তাঁর রাজনৈতিক গুরুর মধ্যে একজন হলেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইটালি: জর্জা মেলোনি
রক্ষণশীল ‘ব্রাদার্স অফ ইটালি’ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি নব্য ফ্যাসিবাদ দল ইটালিয়ান সোশ্যাল মুভমেন্টের যুব দল ইয়ুথ ফ্রন্টে যোগ দিয়েছিলেন তিনি৷ মেলোনির দল বর্তমানে ইটালির জোট সরকারের অংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেনমার্ক: পিয়া কিয়ের্সগর্ট
১৯৯৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চরম ডানপন্থি দল ড্যানিশ পিপলস পার্টির প্রধান ছিলেন তিনি৷ এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও তিনি৷ ডেনমার্কে অভিবাসীদের প্রবেশ বন্ধ তাঁর অন্যতম আগ্রহের বিষয়৷ বহুসংস্কৃতিবিরোধী ও অভিবাসনবিরোধিতার জন্য পরিচিত কিয়ের্সগর্ট৷
ছবি: AP
7 ছবি1 | 7
সবশেষ জরিপে সিডিইউ ও এসপিডির ভোট কমায় লাভবান হয়েছে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত অভিবাসনবিরোধী দল এএফডি৷ গত সংসদ নির্বাচনে তারা ১২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷
জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা প্রধান হান্স গেয়র্গ মাসেনকে নিয়ে সম্প্রতি জোটের অংশীদার দুই দল সিডিইউ ও এসপিডির মধ্যে বিভাজন দেখা গেছে৷ মাসেনের বিরুদ্ধে ডানপন্থি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল৷ এই অবস্থায় তাঁকে গোয়েন্দা প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরো বেশি বেতনের পদে বসানোয় ম্যার্কেল সরকার সমালোচনায় পড়েছে৷
এই ঘটনায় জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে৷ কারণ, মাসেনের প্রতি তিনি পূর্ণ সমর্থন দিয়ে গেছেন৷ ফলে এখন মাত্র ২৮ শতাংশ ভোটার মনে করছেন, সেহোফার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে পারেন৷ অথচ গত এপ্রিল মাসের জরিপে ৩৯ শতাংশ ভোটার সেহোফারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি, ডিপিএ)
হিটলারের ভঙ্গিতে প্রতিবাদ জানাচ্ছে নেকড়ে
জার্মানির বিভিন্ন স্থানে এখন শোভা পাচ্ছে ব্রোঞ্জের তৈরি অসংখ্য নেকড়ে৷ হিটলারের ভঙ্গিতে স্যালুট জানাচ্ছে নেকড়েগুলো৷ হিটলারের ‘ভাবশিষ্য’দের রুখতেই এমন উদ্যোগ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
‘নেকড়েরা ফিরে এসেছে’
এ নামের এক উদ্যোগেই সারা জার্মানিতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ব্রোঞ্জের তৈরি ৬৬টি নেকড়ের মূর্তি৷ ভাস্কর রাইনার ওপলকা-র গড়া নেকড়েগুলোর মধ্যে কিছু আবার হিটলারের সেই ভঙ্গিতে ডান হাত সামনে বাড়িয়ে স্যালুট দিচ্ছে৷ এমন দশটি নেকড়ে মূর্তি স্থান পেয়েছে কেমনিৎসে৷ সম্প্রতি এক জার্মান নিহত হওয়ার পর শহরটিতেকয়েকটি ডানপন্থি সংগঠন রীতিমতো তাণ্ডব চালায়৷ তখন কয়েকজনকে হিটলারের সেই ‘নাৎসি স্যালুট’ দিতেও দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
নেকড়েদের জার্মানি সফর
২০১৫ সাল থেকে শরণার্থীর স্রোত নামে জার্মানিতে৷ শরণার্থীবিদ্বেষী সংগঠনগুলোর তৎপরতাও বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে৷ ওই উগ্র ডানপন্থিদের বিষয়ে সতর্ক করতেই সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে নেকড়ের ব্রোঞ্জ মূর্তি৷ শরণার্থীবিদ্বেষী সংগঠনগুলো সমাবেশ করেছে, মূলত এমন শহরগুলোতেই আপাতত চলে গেছে ব্রোঞ্জের নেকড়ে৷ উগ্র ডানপন্থিরা হিটলারের প্রোপাগান্ডা মন্ত্রী গ্যোবেলসের মতো নিজেদের ‘নেকড়ে’ হিসেবে বর্ণনা করতে পছন্দ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
মুখোমুখি
গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেমনিৎসে আরেক দফা বিক্ষোভ সমাবেশ করতে গিয়ে উগ্রডানপন্থিরা দেখেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দাঁড়িয়ে ব্রোঞ্জের নেকড়েগুলো যেন তাদের বিদ্রূপ করছে৷ কয়েকটি নেকড়ে ‘নাৎসি স্যালুট’ দিচ্ছিলো, কয়েকটি দাঁড়িয়ে ছিল রেগেমেগে তেড়ে আসার ভঙ্গিতে, কয়েকটির আবার চোখ ছিল কাপড়ে বাঁধা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
কেমনিৎসের ঘুরে দাঁড়ানো
সেপ্টেম্বরের শুরুতে উগ্র ডানপন্থিদের তাণ্ডবের প্রতিবাদ জানাতে কেমনিৎসবাসীদের একাংশ রাস্তায় নেমে আসে৷ উগ্র ডানপন্থিদের কারণে শহরের ক্ষুণ্ণ হওয়া ভাবমূর্তি আবার ফিরিয়ে আনতে আয়োজন করা হয় কনসার্ট৷ ‘উই আর মোর’ ব্যানারে আয়োজিত সেই কনসার্টে উপস্থিত ছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: Reuters/T. Schle
পর্যটকদের স্বাগত
শরণার্থী এবং মুসলিমবিদ্বেষী ডানপন্থিদের দূরে ঠেলে পর্যটকদের কাছে টানার জন্য আবার তৈরি হয়ে উঠছে কেমনিৎস৷ ‘প্রো-কেমনিৎস’, পেগিডা, এএফডির সমাবেশে যারা সহিংশতা ছড়িয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
‘হিটলারের স্যালুট’ নিষিদ্ধ
জার্মানিতে প্রকাশ্যে ‘নাৎসি স্যালুট’, স্বস্তিকা এবং হিটলারের আমলকে স্মরণ করিয়ে দেয়া যে কোনো প্রতীক প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা নিষিদ্ধ৷ কেমনিৎসের সমাবেশে হিটলারের মতো স্যালুট দেয়া এবং সহিংশতা ছড়ানোর অভিযোগে ছবির এই ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে৷