রোববার জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ ছয় কোটি ভোটারের মধ্যে অভিবাসী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৭৪ লাখ, অর্থাৎ ১২ শতাংশ৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু সমাজবিজ্ঞানী সাবরিনা মায়ের মনে করেন, দলগুলোর নির্বাচনি প্রচারণায় অভিবাসীদের বিষয় ও সমস্যাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না৷ অনেক অভিবাসী বাস করেন এমন এক শহর ডুইসবুর্গে অভিবাসীদের উপর একটি গবেষণা করছেন তিনি৷ নির্বাচনেরআগে শহরের প্রতিটি অংশ গাড়ি নিয়ে ঘুরেছেন সাবরিনা৷ কিন্তু অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার দেয়া পোস্টারের তেমন দেখা না পাওয়ায় অবাক হয়েছেন তিনি৷
এ কারণে অভিবাসী ভোটারদের ভোট দেয়ার হারও কম৷ ২০১৭ সালের নির্বাচনে অভিবাসীদের ভোট দেয়ার হার গড়পড়তার চেয়ে ২০ শতাংশ কম ছিল৷ এর সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মায়ের বলেন, ‘‘যদি একটা গোষ্ঠী মনে করে, তাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে, তাহলে তারা কম ভোট দেবে এবং সে কারণে দলগুলোরও ঐ ভোটারদের টানার আগ্রহ কমে যাবে৷''
অভিবাসী ভোটারদের বেশি করে ভোট দিতে যেতে উৎসাহ দিতে কাজ করছেন আলী চান৷ তিনি তুরস্কে জন্ম নেয়া একজন কুর্দি৷ ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি জার্মানিতে বাস করছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘অভিবাসী ভোটারদের আমরা এমন অনুভূতি দিতে ব্যর্থ হয়েছি যে তারাও জার্মানির অংশ৷''
জার্মান নির্বাচন ২০২১: জোট সরকারের সম্ভাবনা ও যত উপায়
২৬ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জার্মানির যে-কোনো দুটি দল জোট বেঁধেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷ মতামত জরিপ থেকে তেমন ইঙ্গিতই মিলছে৷ সেক্ষেত্রে তিন দলের অনেক ধরনের জোটেরই সম্ভাবনা রয়েছে৷ ছবিঘরে এক নজরে দেখুন পাঁচ বিকল্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hörhager
রংয়ের রহস্য
মধ্য ডানপন্থি দল খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটিক - সিডিইউ এবং তাদের বাভারিয়ান সহযোগী খ্রিস্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন - সিএসইউ-এর প্রতীকী রং কালো৷ মধ্য বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট - এসপিডি ব্যবহার করে লাল রং৷ অন্যদিকে মুক্ত বাজারপন্থি ফ্রি ডেমোক্র্যাটস-এফডিপির রং হলুদ৷ আর পরিবেশবাদী সবুজ দলের রং যে সবুজ তা তো বলাই বাহুল্য৷ জোট বোঝাতে জার্মানির গণমাধ্যমে অনেক সময় নামের বদলে দলগুলোকে তাদের রং দিয়ে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: Fotolia/photocrew
কালো, লাল, সবুজ-কেনিয়া জোট
খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাট এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জোট গত আট বছর ধরে জার্মানির ক্ষমতায়৷ আসন্ন নির্বাচনে যদি এই দুই দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে তাহলে সবুজ দলকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর জোট হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে তাদের জোটের রংটি কেনিয়ার পতাকার রংয়ের সঙ্গে মিলে৷ এই জোটের চ্যান্সেলর কে হতে পারেন তা এসপিডি ও সিডিইউ/সিএসইউ এর মধ্যে কাদের বেশি আসন থাকবে তার উপর নির্ভর করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/aaastocks
কালো, হলুদ, সবুজ-জ্যামাইকা জোট
আঞ্চলিক ও জাতীয় নির্বাচনে সিডিইউ গত কয়েক বছরে অপেক্ষাকৃত ছোট দল ফ্রি ডেমোক্র্যাট - এফডিপিরর সঙ্গেও জোট বেঁধেছে৷ তার সঙ্গে সবুজ দলকে নিয়ে আরেকটি বিকল্প জোটের সম্ভাবনাও অনেক সিডিইউ নেতার কাছে আকর্ষণীয়৷ এই তিন দলের রং রয়েছে জ্যামাইকার পতাকাতে৷ তবে সবুজ ও এফডিপির মধ্যে মতবিরোধের কারণে ২০১৭ সালে সরকার গঠনের এমন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কালো, লাল, হলুদ-জার্মানি জোট
মধ্য ডানপন্থি সিডিইউ/সিএসইউ ও মধ্য বামপন্থি এসপিডি এর সঙ্গে মুক্ত বাজারপন্থি এফডিপি যোগ দিলে এমন একটি জোট হতে পারে৷ এই তিন দলের রং জার্মানির পতাকার তিনটি রংয়ে৷ মতপার্থক্য দূর করে এক হতে পারলে তারা অনায়াসেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ব্যবসায়ী নেতা ও উচ্চ আয়ের মানুষের কাছে এটি কাঙ্খিত এক জোট৷
ছবি: imago/blickwinkel/McPhoto/K. Steinkamp
লাল, লাল, সবুজ
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা সবুজ দলের সঙ্গে জোট করেও যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে বামপন্থি দল ডি লিংকে-কে কাছে টানতে পারে৷ সেক্ষেত্রে পার্লামেন্টে যেতে ডি লিংকের অন্তত পাঁচ শতাংশ ভোট পেতে হবে৷ কিন্তু এসপিডি ও ডি লিংকের সম্পর্কের অতীত খুব একটা ভালো নয়৷ বিশেষ করে ডি লিংকের কট্টর পররাষ্ট্রনীতি এই সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে পারে৷
ছবি: Imago/C. Ohde
লাল, হলুদ সবুজ-ট্রাফিক লাইট জোট
মুক্ত বাজারের সমর্থক এফডিপি এর আগে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ও সবুজ দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী হয়নি৷ তবে এই বছর কোনো সম্ভাবনাই তারা বাতিল করছে না৷ বড় দলগুলো যেভাবেই হোক ক্ষমতায় ফিরতে চাইবে, তা যে রংয়ের জোটই হোক না কেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.Büttner
6 ছবি1 | 6
জার্মানির ৭৪ লাখ অভিবাসী ভোটারের বেশিরভাগই তুর্কি (২৮ লাখ), রুশ (১৪ লাখ) ও পোলিশ (২২ লাখ) বংশোদ্ভূত৷
গবেষকরা বলছেন, জার্মানিতে ভোটারদের ভোটদানেরক্ষেত্রে দলের চেয়ে ইস্যু বড় হয়ে উঠছে৷ অর্থাৎ, তারা ভোট দেয়ার জন্য সবসময় একই দল বেছে নিচ্ছেন না৷ সমাজবিজ্ঞানী মায়ের বলছেন, ‘‘দলের প্রতি আনুগত্য কমছে, টপিক বিবেচনায় ভোটাররা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷''
এমন পরিস্থিতিতে দলগুলো অভিবাসী ভোটার আকৃষ্ট করতে তাদের বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়ার কথা৷ কিন্তু তারপরও তা হচ্ছে না৷
অভিবাসন বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনকারী সংস্থা মিডিয়েনডিনস্ট ইন্টিগ্রেশন বলছে, অভিবাসীদের জন্য যেসব বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো নিয়ে রাজনীতিবিদরা তেমন কথা বলেন না৷