জার্মানিতে অভ্যুত্থান পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
অভিযুক্তরা প্রতিক্রিয়াশীল ‘রাইশব্যুর্গার' আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান পুলিশ ছয়টি অ্যাপার্টমেন্ট ও লাগোয়া তিনটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে৷ সেখানে অভিযুক্তরা বিরাট এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছিলেন৷ অভিযানে ৭০ জন পুলিশ সদস্য অংশ নেন৷
জার্মানির অতিডানপন্থি রাইশব্যুর্গার আন্দোলনের সঙ্গে এদের সংযোগ আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ রাইশব্যুর্গারের সদস্যরা বর্তমান জার্মান সরকারের কর্তৃত্ব মানতে নারাজ৷ তারা ১৮৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত জার্মান সাম্রাজ্যের পুনর্বহাল চান৷ এর আগে গত ডিসেম্বরে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করা এই আন্দোলনের সদস্যদের ধরতে দেশব্যাপী অভিযান চালায় পুলিশ৷ ছয় জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগ গঠন করা হয়৷ সেই অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবেই আবারো এই অভিযান চালানো হলো৷
ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ এই অভ্যুত্থানের প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত৷ তাদের অনেকেই অতিডানপন্থি দলগুলোর অংশ৷ মিউনিখের সরকারি তদন্তকারী দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাদীরা জার্মানিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ব্ল্যাকআউটের পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করেন৷ তারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরির পরিকল্পনাও করেন বলে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷
জেডএ/এসিবি (ডিপিএ/এএফপি)
জার্মান রাষ্ট্রবিরোধী ‘রাইশব্যুর্গার’ আন্দোলন!
বেশ কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে আসছে রাইশব্যুর্গার আন্দোলনের নাম৷ তারা করোনা সংক্রমণে নেয়া সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, এমনকি সরকারের বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করছেন৷ কিন্তু এই রাইশব্যুর্গার কারা? সরকার তাদের বিষয়ে কী করছে?
ছবি: picture-alliance/chromorange/C. Ohde
রাইশব্যুর্গার কারা?
রাইশ শব্দের অর্থ সাম্রাজ্য, আর ব্যুর্গার হচ্ছে নাগরিক৷ ফলে এই রাইশব্যুর্গাররা নিজেদের জার্মান সাম্রাজ্যের নাগরিক বলে দাবি করেন৷ আধুনিক জার্মানিকে নিজেদের রাষ্ট্র বলে মানতে রাজি নন তারা৷ তাদের দাবি, ১৯৩৭ বা ১৮৭১ সালের জার্মান সাম্রাজ্যের সীমানাই আসল জার্মানি৷ বর্তমান জার্মানির সরকার, পার্লামেন্ট, বিচারব্যবস্থা এবং নিরাপত্তাবাহিনীকেও তারা মিত্রশক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা পুতুল বলে মনে করেন৷
ছবি: picture-alliance/SULUPRESS/MV
রাইশব্যুর্গাররা কী করেন?
রাইশব্যুর্গাররা ট্যাক্স বা জরিমানা দিতে চান না৷ নিজেদের বাড়ি-ঘর, সম্পদ ইত্যাদিকে জার্মান প্রজাতন্ত্রের অধীনে নয়, বরং স্বাধীন বলে বিবেচনা করেন৷ তারা জার্মান সংবিধান ও আইন স্বীকার করেন না, কিন্তু সেই আইন ব্যবহার করেই সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অজস্র মামলা করেন৷ তাদের অধিকাংশই নিজেদের তৈরি পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করেন৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Ohde
কত বড় হুমকি?
জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮০-র দশকের দিকে রাইশব্যুর্গার আন্দোলন গড়ে ওঠে৷ বড় কোনো নেতা না থাকলেও এ আন্দোলনের সঙ্গে অন্তত ১৯ হাজার জার্মান জড়িত বলেও তথ্য রয়েছে৷ এদের মধ্যে ৯৫০ জন উগ্র ডানপন্থার সঙ্গে জড়িত এবং এক হাজার জনের লাইসেন্স করা অস্ত্রও রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এদের অনেকেই ইহুদিবিদ্বেষী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
কারা সদস্য?
জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী রাইশব্যুর্গার আন্দোলনে জড়িতদের বেশিরভাগই পুরুষ এবং তাদের গড় বয়স ৫০ বছর৷ তাদের বেশিরভাগই সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া৷ জার্মানির দক্ষিণ ও পূর্বের শহরগুলোতেই রাইশব্যুর্গারদের মূল কার্যক্রম৷ নামকরা রাইশব্যুর্গারদের মধ্যে একজন ছিলেন সাবেক মিস্টার জার্মানি আড্রিয়ান উরজাশে৷ ২০১৯ সালে গুলি চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে আহত করায় তার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Schmidt
নড়েচড়ে বসছে সরকার
দীর্ঘদিন রাইশব্যুর্গার আন্দোলনকে তেমন একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু ২০১৭ সালের একটি ঘটনা সরকারকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করে৷ ভোল্ফগাং পি নামের এক ব্যক্তি তার বাসায় তল্লাশি চালানোর সময় এক পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেন৷ এরপর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ভোল্ফগাং পি রাইশব্যুর্গার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বলে গোয়ন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
কী করছে কর্তৃপক্ষ?
রাইশব্যুর্গার আন্দোলন সহিংসতা উসকে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ কিন্তু ২০১৭ সালের আগে কখনোই তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি৷ ভোল্ফগাং পি-র ঘটনার পর থেকে নিয়মিতই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে৷ এমনকি পুলিশ এবং সেনাবাহিনীও নিজেদের মধ্যে কোনো রাইশব্যুর্গার সদস্য আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রতত্ত্ব
রাইশব্যুর্গার আন্দোলনকারীদের বেশ কিছু স্থানে রাশিয়ার পতাকা হাতে দেখা গেছে৷ ফলে রাশিয়াই এদের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে, এমন অভিযোগও রয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ফ্রিম্যান-অন-দ্য-ল্যান্ড নামের সংগঠন রয়েছে৷ তারও রাইশব্যুর্গারদের মতোই সরকার ও রাষ্ট্রের আইন অস্বীকার করেন৷