পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে জার্মানিতে সব ধরনের অপরাধ প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে৷ তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে অপরাধ বৃদ্ধির লক্ষণও দেখা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
‘ভেল্ট আম জোনটাগ’ পত্রিকায় ২০১৭ সালে জার্মানিতে অপরাধের পরিসংখ্যান সম্পর্কে যে বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ১৯৯৩ সালের পর থেকে এক বছরের মধ্যে অপরাধ এতটা কমার ঘটনা আগে দেখা যায়নি৷ অর্থাৎ গত ২৫ বছরের মধ্যে এটা একটা রেকর্ড৷
অপরাধের পরিসংখ্যান
- ২০১৭ সালে জার্মানিতে ৫৭ লাখ ৬০ হাজার অপরাধ নথিভুক্ত করা হয়, যা কিনা ২০১৬ সালের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম৷
- এই সব অপরাধের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছিল চুরির ঘটনা, যা ২০১৬-র তুলনায় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে৷
- বিপণী কিংবা বিভাগীয় বিপণীতে চুরির সংখ্যা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৩৮৪টি; পকেটমারির সংখ্যা ২২ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৭৬টিতে দাঁড়িয়েছে৷
ইউরোপের হোটেল থেকে যা চুরি করে অতিথিরা
হোটেল থেকে চলে যাওয়ার সময় আপনার উচিত কক্ষটি যেমন ছিল, ঠিক সেরকম রেখে চলে যাওয়া৷ কিন্তু অতিথিদের কয়েকজনের সুটকেস অনেকসময় বেশ ভারি হতে দেখা যায়, যেমনটা হোটেলের প্রবেশের সময় ছিল না এবং সেসব জিনিস কোনো স্মারক বস্তু নয়৷
ছবি: picture-alliance/Arcaid/J. Balston
শিল্পকর্ম
অভিজাত দামি হোটেলগুলো থেকে শিল্পকর্ম চুরি হওয়া একটা বড় সমস্যা৷ ভ্রমণ সাইট ‘ওয়েলনেস হেভেন’-এর এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর ৩৪ ভাগ জানিয়েছে, হোটেল কক্ষ থেকে দামি চিত্রকর্ম চুরি হয়েছে৷ সস্তার হোটেলে দামি শিল্পকর্ম থাকার সম্ভাবনা কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Hackenberg
কম্বল
একটা বড় কম্বল ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার সুটকেসটা কত বড় হতে হবে? এক হাজার হোটেলের মধ্যে ১৫ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের হোটেল কক্ষ থেকে কম্বল চুরি হয়ে গেছে৷ ১৩ ভাগ জানিয়েছে, তাদের বালিশ চুরির কথা৷ মাঝারি হোটেলের তুলনায় দামি এসব হোটেলের এই ধরনের চুরির পরিমাণ প্রায় চার গুণ৷
ছবি: picture-alliance/PhotoAlto/F. Cirou
টেলিভিশন
প্রায় সব হোটেলেই টেলিভিশন থাকে, যদি না হোটেলের অতিথিরা তা সরিয়ে ফেলেন৷ বড় বড় হোটেলগুলোতে টেলিভিশন চুরি একটা বড় সমস্যা৷ পাঁচ ভাগ হোটেল তাদের হোটেল কক্ষ থেকে টেলিভিশন চুরির অভিযোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
তোশক
আপনার কাছে হয়ত মনে হচ্ছে কম্বল বা টেলিভিশন চুরি করাটা ভীষণ কঠিন, কিন্তু তোশকের ক্ষেত্রে কী বলবেন? আশ্চর্য হলেও সত্যি কয়েকটি হোটেল অভিযোগ করেছে চোরেরা মধ্যরাতে এলিভেটর দিয়ে গ্যারেজের মধ্য দিয়ে তোশক নিয়ে যায়৷ পাঁচ তারকা হোটেলের ৫ ভাগই জানিয়েছে তোশক চুরির কথা৷
ছবি: picture-alliance/Arcaid/J. Balston
পিয়ানো
সবচেয়ে আশ্চর্য চুরির ঘটনাটি ঘটেছে ইটালির একটি হোটেলে৷ অভিজাত একটি হোটেলের লাউঞ্জে রাখা ছিল পিয়ানো, যা হঠাৎ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তিনজন অপরিচিত ব্যক্তি এটিকে হোটেলের বাইরে নিয়ে যায় এবং রাস্তায়ও তাদের দেখা গেছে পিয়ানোসহ৷ কিন্তু এরপর তারা অদৃশ্য হয়ে যায়, আর দেখা যায়নি তাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
5 ছবি1 | 5
- গাড়ি চুরির সংখ্যা ৮ দশমিক ৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২৬৩টিতে; সাইকেল চুরি ৯ দশমিক ৮ শতাংশ কমে হয়েছে ৩ লাখ ৬টি৷
- বাড়িতে ঢুকে চুরির সংখ্যা ২৩ শতাংশ কমে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৪০টি হয়েছে; তবে ৮০ শতাংশ চুরির ঘটনায় অপরাধী ধরা বা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি৷
- সহিংস অপরাধের সংখ্যা ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৪৬টি ঘটনায়, যার মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি ঘটনায় কোনো-না-কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন৷
- খুনের সংখ্যা ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৭৮৫টি হয়েছে৷
- মাদক সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৮০টিতে দাঁড়িয়েছে৷
- শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫১২টি৷
- অপরাধী হিসেবে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মধ্যে অ-জার্মান অধিবাসীদের সংখ্যা ২২ দশমিক ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৫-তে৷
মানুষ কম, তাই অপরাধও কম
জার্মান পুলিশ কর্মকর্তা সংগঠনের সভাপতি অলিভার মালকোভ ‘ভেল্ট আম জোনটাগ’ পত্রিকাকে এই পরিসংখ্যান থেকে দেশের ‘‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে আগেভাগে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর’’ ব্যাপারে সাবধান করে দেন৷
আলোচিত কয়েকটি শিল্পকর্ম চুরির কথা
২০১৭ সালের মার্চে জার্মানির বার্লিনের একটি মিউজিয়াম থেকে ১০০ কেজি ওজনের একটি স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়৷ ছবিঘরে থাকছে মূল্যবান কয়েকটি শিল্পকর্ম চুরির কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. K. Techt
মোনালিসার হাসি হারিয়ে গিয়েছিল
১৯১১ সালে ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত পোর্ট্রেট লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘মোনালিসা’ চুরি হয়ে গিয়েছিল৷ ভিনসেঞ্জো পেরুজ্জিয়া নামের ইটালির এক তরুণ মিউজিয়ামের কর্মীর পোশাক পরে নিজের কোটের মধ্যে পেইন্টিংটি লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিল৷ ১৯১৩ সালে পুলিশ এটি উদ্ধার করে৷
ছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library
সবচেয়ে বেশি চুরি হওয়া পেইন্টিং
ডাচ শিল্পী রেমব্রেন্ডট-এর আঁকা পোর্ট্রেট ‘জ্যাক থ্রি ডি গাইন’ ব্রিটেনের ডালউইচ পিকচার গ্যালারি থেকে এক বার, দু’বার নয়, চার বার চুরি হয়েছে৷ ১৯৬৬ সালে প্রথম বার চুরির পর ১৯৭৩, ১৯৮১ ও ১৯৮৬ সালেও চুরি হয়েছিল এই পোর্ট্রেট৷ তবে ভাগ্য ভালো যে প্রতিবারই এটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
পুলিশের বেশে চুরি
১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের ইসাবেলা স্টুয়ার্ড গার্ডনার মিউজিয়াম থেকে একসঙ্গে ১৩টি পেইন্টিং চুরি হয়ে যায়৷ দুই ব্যক্তি পুলিশের বেশে ঢুকে সেগুলো চুরি করেন৷ ছবিতে যেটি দেখতে পাচ্ছেন, তার নাম ‘কনসার্ট’৷ চুরি যাওয়া পেইন্টিংগুলোর মধ্যে এটিও ছিল৷ আজও মিউজিয়ামে চুরি যাওয়া পেইন্টিংগুলোর ফ্রেম খালি অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Gemeinfrei
ফান গখের শিল্পকর্ম চুরি
১৯৯১ সালে আমস্টারডামের ফান গখ মিউজিয়াম থেকে ২০টি পেইন্টিং চুরি হয়ে গিয়েছিল৷ অবশ্য মাত্র ঘণ্টাখানেক পরেই সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল৷ তবে চোরদের ধরতে কয়েক মাস লেগে যায়৷ এক ব্যক্তি প্রথমে নিজেকে মিউজিয়ামের একটি বাথরুমে আটকে রেখেছিলেন৷ পরে একজন প্রহরীর সহায়তায় সেগুলো চুরি করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Van Weel
নিরাপত্তা প্রহরীকে পরাভূত করে
২০০৩ সালে দুই ব্যক্তি স্কটল্যান্ডের ড্রামলানরিগ ক্যাসেলের প্রহরীদের পরাস্ত করে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘ম্যাডোনা অফ দ্য ইয়ার্নউইন্ডার’ নিয়ে যায়৷ ঐ শিল্পকর্মের দাম ছিল প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইউরো৷ প্রায় চার বছর পর ২০০৭ সালে গ্লাসগো থেকে এটি উদ্ধার করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিউজিয়ামে সশস্ত্র হামলা
এক্সপ্রেশনিস্ট এডভার্ড মুঙ্কের ‘দ্য স্ক্রিম’ ও ‘ম্যাডোনা’ নামের দুটি পেইন্টিং ২০০৪ সালে অসলোর মুঙ্ক মিউজিয়াম থেকে নিয়ে গিয়েছিল দুই সশস্ত্র ডাকাত৷ অস্ত্রের মুখে তারা দর্শণার্থীদের সামনে থেকেই পেইন্টিং দুটি নিয়ে গিয়েছিল৷ পুলিশ পরে সেগুলো উদ্ধার করতে পারলেও ‘দ্য স্ক্রিম’ এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে পরে সেটি আর সম্পূর্ণ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Munch Museum Oslo
ইউরোপের সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম চুরির ঘটনা
২০০৮ সালে সুইজারল্যান্ডের জুরিখের ব্যুরলে মিউজিয়াম থেকে চারটি পেইন্টিং চুরি গিয়েছিল৷ পেইন্টিংগুলোর মোট মূল্য ছিল ১৮২ মিলিয়ন ডলার৷ ছবিতে ক্লোদ মনে’র ‘পপি ফিল্ড নেয়ার ভিথেই’ দেখতে পাচ্ছেন৷ চুরি যাওয়া পেইন্টিংয়ের তালিকায় এটিও ছিল৷ পরে সবগুলোই উদ্ধার করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
স্বর্ণমুদ্রা চুরি
১০০ কেজি ওজনের এই মুদ্রা চুরি গেছে বার্লিনের বডে মিউজিয়াম থেকে৷ ২০১৭ সালের মার্চে এটি চুরি হয়েছে৷ ‘বিগ ম্যাপল লিফ’ নামে ক্যানাডায় তৈরি এই মুদ্রার উপাদানগত মূল্য প্রায় চার মিলিয়ন ডলার৷ ৫৩ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৩ সেন্টিমিটার পুরু এই মুদ্রার সামনের অংশে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবি রয়েছে৷ জানালা দিয়ে চোর মিউজিয়ামে প্রবেশ করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.May
8 ছবি1 | 8
মালকোভের মতে, অপরাধের সংখ্যা কমার একটা কারণ এ-ও হতে পারে যে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে অনেক কম রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী জার্মানিতে এসেছেন৷ তবে মালকোভ স্পষ্ট করে দেন যে, অভিবাসীদের অপরাধ প্রবণতা যে বেশি, তিনি এমন আভাস দিতে চাইছেন না৷
বরং পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে যে, দেশে যত মানুষ বাড়ে, তত অপরাধের সংখ্যাও বাড়ে৷ অপরদিকে বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা গেছে যে, সিরিয়া ও ইরাক থেকে আগত উদ্বাস্তুরা কম অপরাধ করে থাকেন, কেননা, তা বৈধভাবে জার্মানিতে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে৷
জার্মানরা কী ভাবেন?
ইতিপূর্বে একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, প্রায় অর্ধেক জার্মান বিশ্বাস করেন যে, এদেশে এমন সব আইন-শৃঙ্খলা বর্জিত জায়গা আছে, যেখানে পুলিশ পর্যন্ত যেতে ভয় পায়৷ অপরদিকে দেশে অপরাধের সংখ্যা বাড়ার জন্য প্রায়শই অভিবাসীদের দায়ী করা হয়ে থাকে, যদিও ফেডারাল অপরাধ দপ্তরের বিবরণ অনুযায়ী, যাবতীয় এ দেশে জন্ম নেয়া জার্মানদের অপরাধপ্রবণতা অভিবাসীদের চেয়ে বেশি৷
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট জেহোফার ৮ই মে তারিখে রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে অপরাধ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান পেশ করবেন৷