চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো ধর্মঘটের ডাক দিলো জার্মানির অন্যতম বৃহৎ শ্রমিক ইউনিয়ন ভ্যার্ডি৷ শুক্রবার তাদের ডাকে বিভিন্ন রাজ্য ও শহরে গণপরিবহণ আবার বন্ধ থাকবে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মধ্যে নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া, বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ , স্যাক্সনি, লোয়ার স্যাক্সনি এবং রাইনল্যান্ড পালাটিনেটে ধর্মঘট পালিত হবে বলে ঘোষণায় জানিয়েছে ইউনিয়নটি৷ এই রাজ্যেগুলোর বাইরে মিউনিখসহ কয়েকটি শহরেও আলাদাভাবে ধর্মঘট কার্যকরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তারা৷
এর আগে গত সোমবার জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেয় ভ্যার্ডি৷ এতে ড্যুসেলডর্ফ, কোলন, বন-সহ বিভিন্ন শহরে গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকে৷ ড্যুসেলডর্ফ ও কোলন-বন বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হয়৷
স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা গণপরিবহণ খাতের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ইউনিয়নটি৷ এদিকে শুক্রবার পরিবেশবাদীদের আন্দোলন ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার'-এর পূর্বঘোষিত ধর্মঘট কর্মসূচি ছিল৷ ভ্যার্ডির উপ-প্রধান ক্রিস্টিন বেহলে জানিয়েছেন, তার সাথে একাত্ম হয়ে তারাও গণপরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে জার্মানির সরকারের উদ্যোগের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘কর্মীদের উপর বিনিয়োগ না করে পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়৷''
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের অধীনে কর্মরত ২৫ লাখ কর্মীর সাড়ে দশ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে ভ্যার্ডি৷ জবাবে কর্তৃপক্ষ দুই ধাপে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি এবং এককালীন আড়াই হাজার ইউরো দিতে রাজি হয়েছে৷ এ নিয়ে আগামী মার্চে তৃতীয় ধাপের আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷ তার আগে চাপ বৃদ্ধির কৌশলের অংশ হিসেবে ধর্মঘট পালন করছে ইউনিয়নটি৷
এফএস/এসিবি (ডিপিএ)
৯০ বছরে জার্মানির গর্ব ‘অটোবান’
সারা বিশ্বের সঙ্গে জার্মানির সংযোগে সবার প্রথমে অটোবানের কথা মনে হয়৷ মসৃণ চওড়া রাস্তায়, দ্রুতগামী চ্যানেলে কোনো গতিসীমা নেই৷ ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় এসে দাবি করেন, অটোবান তৈরির পরিকল্পনা তার৷যদিও বিষয়টা তা নয়৷
ছবি: dpa/picture-alliance
প্রথম ছেদবিহীন রাস্তা
কোলন আর বন শহরের মধ্যে ‘এ ৫৫৫’ অটোবান তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ১৯২৯ সালে৷ জার্মানির প্রথম ‘ইন্টারসেকশন ফ্রি’ গাড়ি চালানোর রাস্তা এটি৷অটোবান শব্দটি যদিও পরে চালু হয়৷ এটিতে কোনোরকম ছেদ বা ট্রাফিক লাইট ছিল না, শুধুমাত্র বেরোনোর রাস্তা , জংশন এবং সবসময় কমপক্ষে দুটি লেন ছিল৷
ছবি: dpa/picture-alliance
নাৎসিদের তৈরি নয়
এই দৃশ্যটি ৯০ বছর আগের৷ অটোবানের প্রথম অংশ নির্মাণে তিন বছর সময় লেগেছিল৷ কোলনের মেয়র এবং পরবর্তীতে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ারের এটি উদ্বোধন করেন ১৯৩২ সালে৷ তারিখটা ছিল ৬ অগাস্ট৷ এই তারিখ দেখেই স্পষ্ট নাৎসিরা এটি তৈরি করেনি, কারণ তারা তখনো ক্ষমতায় আসেনি৷ তারা ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৩৩ সালে৷
অটোবানের গল্পটি স্বৈরাচারী শাসক অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে৷ ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে হিটলার ক্ষমতা দখলের পর তথাকথিত ‘থার্ড রাইখ’ অটোবান নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করেন৷ এই ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১৯৩৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে ফ্রাঙ্কফুর্ট/মাইন-মানহাইমের রাইখসঅটোবানের জন্য ভিত খনন করছেন তিনি৷
ছবি: akg-images/picture alliance
দ্রুত নির্মাণ
এই অটোবানের একটি অংশ মাত্র দুই বছর পরে খোলা হয়েছিল৷ এটিও প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, যেমনটি এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে৷ আনুষ্ঠানিকভাবে, নাৎসিদের যুক্তি ছিল, অটোবান তৈরি হলে ১৯৩০ সালের শুরু থেকে সারা বিশ্ব যে অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছিল, তা মোকাবেলা করা যাবে৷ কারণ জার্মানিও তখন এই সমস্যায় জর্জরিত৷বাস্তবে এই দ্রুত নির্মাণ আসলে হিটলারের যুদ্ধের প্রস্তুতির অংশ ছিল৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, বিশেষ করে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অটোবানগুলির পুনর্গঠন এবং সম্প্রসারণ কিন্তু বন্ধ হয়নি৷ অটোবানগুলির আধুনিকীকরণ করা হয় এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগ করা হয়৷ ১৯৬৯ সালের এই ছবিতে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির পরিবহন মন্ত্রী, জর্জ লেবারকে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি ‘রেডিও এমার্জেন্সি কল সিস্টেম’ উদ্বোধন করেন, তখন এই ছবিটি তোলা হয়৷
ছবি: dpa/picture alliance
অটোবান দিয়ে হাঁটা
এখানে আরেকটি ছবি রয়েছে যা জার্মান অটোবানের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত৷ ১৯৭৩ সালে সারা বিশ্বে তেল সংকট ছিল চরমে৷ তখন রোববারগুলোয় সারা দেশে গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়৷ তখন মানুষের হাঁটার জন্য অটোবান খুলে দেওয়া হয়েছিল৷
ছবি: dpa/picture alliance
ফাঁকা রাস্তা
এই ছবিও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ৷ জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হামবুর্গের অটোবানের একটি অংশে সেইসময় কোনো গাড়ি ছিল না৷ ১৯৭৩ সালের পর এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি৷
ছবি: Werner Baum/picture alliance
জার্মান ‘ইউএসপি’
বিশেষ একটি কারণে জার্মান অটোবানকে অনেকেই চেনে এবং বেশ ভালোবাসে৷ সেটি হলো সাধারণভাবে অটোবানে কোনো গতিসীমা নেই৷ গোটা ইউরোপের মধ্যে একমাত্র জার্মান মোটরওয়েতে যত খুশি স্পিডে গাড়ি চালানো যায়–অবশ্য ট্র্যাফিকের আইন মেনে এবং নিজের বা পরের জন্য কোনো বিপদ তৈরি না করে৷ তবে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ সমালোচকরা বলেন, সাধারণ গতিসীমা থাকা পরিবেশের জন্য ভালো৷ এটি রাস্তার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে৷
ছবি: dpa/picture alliance
চিরন্তন নির্মাণকাজ
অটোবান নির্মাণের কাজ যেন সত্যিই শেষ হয় না৷ এখানে সবসময় মেরামতের কাজ চলে৷ যেমন এই ছবিতে এ-৫৫৫ এর মূল রাস্তার প্রসারিত অংশে কাজ চলছে৷ তবে ৯০ বছর পেরিয়েও বয়স বাড়েনি অটোবানের, সে একেবারে চিরতরুণ৷অটোবানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা৷