জার্মানিতে চরম দক্ষিণপন্থিদের রমরমা
২ সেপ্টেম্বর ২০১৯বিগত সংসদ নির্বাচনে চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি বা ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' আসনের বিচারে জার্মানির প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই অস্বস্তি কাটছে না৷ প্রত্যেক রাজ্য ও পৌর নির্বাচনে দলটির ফলাফলের দিকে সবার নজর থাকে৷ বাকি সব রাজনৈতিক দল এএফডি-র সঙ্গে জোট সরকার গড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও তাদের একক শক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যায়৷ বিশেষ করে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে এমন ঝুঁকির আশঙ্কা বার বার দেখা গেছে৷ রবিবার ব্রান্ডেনবুর্গ ও স্যাক্সনি রাজ্যের নির্বাচনের আগেও বিষয়টি নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল৷ ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আসন না পেলেও এই দল দুই রাজ্যেই অত্যন্ত ভাল ফল করেছে৷ ফেডারেল সংসদের মতো এই দুই রাজ্যেও এএফডি প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে চলেছে৷
জার্মানির দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রবিবারের নির্বাচনে কোনোক্রমে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পেরেছে৷ ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি ও স্যাক্সনি রাজ্যে রক্ষণশীল সিডিইউ দল সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে৷ এবার তাদের জোট সরকার গড়ার উদ্যোগ শুরু করতে হবে৷ বিদায়ী জোট যথেষ্ট আসন না পাওয়ায় সেই প্রক্রিয়া কঠিন হতে পারে৷ তবে এএইডি-বিরোধিতার প্রশ্নে ঐক্যের উপর ভর করে বাকি সব রাজনৈতিক দলই কোনোক্রমে সরকারি জোট গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ নির্বাচনে সাফল্যের পর এএফডি ম্যার্কেল জমানার অবসানের আগাম বার্তা দিচ্ছে৷
জার্মান রাজনীতিতে এমন সংকটের কারণ নিয়ে রোববারও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মাথা ঘামিয়েছেন৷ তাঁদের মতে, ফেডারেল স্তরে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর ইউনিয়ন শিবির ও এসপিডি দলের জোট সরকার দিনে দিনে জনপ্রিয়তা হারানোয় একের পর এক রাজ্য নির্বাচনে এই দুই রাজনৈতিক শক্তি সমর্থন হারাচ্ছে৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টির উত্তরসূরি বাম দল বহুকাল পূবের রাজ্যগুলিতে প্রতিবাদী শক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল৷ কিন্তু এই দলও একাধিক রাজ্য সরকারে যোগ দেওয়ায় বেশ জনপ্রিয়তা হারিয়েছে৷ সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে এসেছে এএফডি৷ বিদেশি ও অভিবাসন-বিরোধী, পপুলিস্ট দল হিসেবে তারা প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট আদায় করতে বার বার সফল হচ্ছে৷ এমনকি দলের মধ্যে বার বার নব্য-নাৎসিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও ব্যালট বক্সে তার কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না৷
এ প্রেক্ষাপটে ম্যার্কেল-এর নেতৃত্বে মহাজোট সরকার সম্পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে কিনা, সেই প্রশ্ন আবার উঠে আসছে৷ আরও জনপ্রিয়তা হারানোর বদলে এসপিডি ও ইউনিয়ন শিবিরের মধ্য থেকেই সরকার ভেঙে দেবার দাবি উঠছে৷ বিশেষ করে নতুন নেতৃত্বের খোঁজে এসপিডি দল এই মুহূর্তে নিজস্ব অস্তিত্ব রক্ষার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে৷ দলের অনেক সদস্য সরকারি জোটে থাকার ঘোর বিরোধী৷ নতুন নেতৃত্ব এমন সিদ্ধান্ত নিলে এসপিডি সরকার ছেড়ে বিরোধী আসনে চলে যেতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে ম্যার্কেল-কে হয় নতুন জোটসঙ্গী খুঁজতে হবে অথবা আগাম নির্বাচনের পথ বেছে নিতে হবে৷ অবশ্য চতুর্থবার চ্যান্সেলর হবার পর তিনি আর এই পদে থাকবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ম্যার্কেল৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ)