গত সপ্তাহেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ জার্মানিতে আবার মহাজোট সরকার গড়ার ক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহে আরও অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবির ও এসপিডি দলের মধ্যে জোরালো প্রস্তুতি চলছে৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনের ফলাফল জানার পর থেকে এসপিডি দল বিরোধী আসনে বসার জন্য বদ্ধপরিকর ছিল৷ শেষ পর্যন্ত জার্মান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পর দলের শীর্ষ নেতা মার্টিন শুলৎস মহাজোট সরকারে যোগ দেবার সম্ভাবনা মেনে নেন৷
তবে ইউনিয়ন শিবিরের সঙ্গে বোঝাপড়া হলে দলের সদস্যদের মত নিয়েই তিনি এই পথে এগোবেন বলে জানিয়েছেন৷ অর্থাৎ সদস্যরা ভোটাভুটিতে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে এসপিডি সরকারে যোগ দেবে না৷ আগামী ৭ থেকে ৯ই ডিসেম্বর বার্লিনে দলের জাতীয় সম্মেলনে সম্ভাব্য মহাজোট সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে৷
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শুরু থেকেই আবারমহাজোট সরকার গড়তে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু এসপিডি দল যেভাবে শুরুতেই সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিল, তার ফলে তাঁকে বাধ্য হয়ে এফডিপি ও সবুজ দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হয়েছিল৷ সেই আলোচনা বিফল হবার পর আবার মহাজোট সরকারের তোড়জোড় চলছে৷
রবিবার সিডিইউ দলের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে মহাজোট গড়ার সম্ভাবনাকে স্বাগত জানালেন৷ সংখ্যালঘু সরকারের চেয়ে স্থিতিশীল সরকার গড়ার পক্ষে সওয়াল করেছে ম্যার্কেলের দল৷ এমনকি বাভেরিয়ায় সহযোগী সিএসইউ দলও মহাজোটের পক্ষে সওয়াল করেছে৷
প্রাথমিক প্রস্তুতির পর এবার দরকষাকষির পালা৷ মহাজোট সরকারে যোগ দেবার অপ্রিয় সিদ্ধান্তের ‘ক্ষতিপূরণ' হিসেবে এসপিডি দলের কয়েকজন নেতা কঠিন শর্ত চাপানোর কথা বলছেন৷ অন্যদিকে ইউনিয়ন শিবিরের কিছু নেতা এসপিডি দলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বর্তমান দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা যদি ‘অন্যায্য' শর্ত চাপানোর চেষ্টা করে, তার পরিণাম ভালো হবে না৷ বার্লিনে এসপিডি সম্মেলনের পরেই ইউনিয়ন শিবির আলোচনার কৌশল স্থির করবে বলে জানিয়েছে৷
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷