নতুন নির্বাচনের বিকল্প হিসেবে জোট সরকার গঠন করতে রাজনৈতিক দলগুলিকে রাজি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জার্মান প্রেসিডেন্ট৷ এদিকে আবার মহাজোট সরকার গড়ার জন্য চাপ বাড়ছে এসপিডি দলের উপর৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার মঙ্গলবার সবুজ দল ও এফডিপি-র নেতাদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ এবার তিনি এসপিডি ও বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন৷
‘জামাইকা' জোট গঠনের প্রাথমিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পরেআবার নতুন করে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেক নেতা৷ সংবাদমাধ্যমের সামনে ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবির ও সবুজ দলের নেতারা এই লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাবার আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ কিন্তু যে এফডিপি দল আলোচনা ভেঙে বেরিয়ে এসেছিল, তারা এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷ দলের শীর্ষ নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার সরাসরি চ্যান্সেলর ম্যার্কেলকে দায়ী করে বলেছেন, ‘জামাইকা' জোট সংক্রান্ত প্রাথমিক আলোচনায় তিনি এফডিপি দলের প্রতি প্রায় কোনো সমর্থন দেখান নি৷
এই অবস্থায় এসপিডি দলের উপর জোট গঠন সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করার জন্য চাপ বাড়ছে৷ কারণ সংসদে একমাত্র ইউনিয়ন শিবিরের সঙ্গে এসপিডি-র আসনসংখ্যা যোগ করলে স্থিতিশীল সরকার গড়া সম্ভব৷ দলের মধ্যেও কয়েকজন নেতা এ বিষয়ে কিছু নমনীয় মনোভাব দেখাতে শুরু করেছেন৷ বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় আপোশহীন মনোভাব না দেখানোর পক্ষে সওয়াল করছেন তাঁরা৷ তাছাড়া এই সুযোগে ইউনিয়ন শিবিরের কাছ থেকে বড় ছাড় আদায় করার কৌশলগত প্রচেষ্টার পক্ষেও সওয়াল করছে দলের একাংশ৷
জার্মানির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় ভোটারদের মনোভাব উঠে আসছে৷ প্রায় অর্ধেক মানুষ নতুন নির্বাচনের পক্ষে রায় দিয়েছেন৷ তবে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সত্ত্বেও জার্মানিতে কোনো অর্থনৈতিক অসুবিধার আশঙ্কা দেখছেন না প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষ৷
রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি সমর্থনের ক্ষেত্রেও কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ ‘জামাইকা' জোট সংক্রান্ত আলোচনা ত্যাগ করা সত্ত্বেও সমর্থন হারায়নি উদারপন্থি এফডিপি দল৷ বরং তাদের প্রতি ভোটারদের সমর্থন সামান্য হলেও বেড়েছে৷ অন্যদিকে ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবির বেশ কিছুটা সমর্থন হারিয়েছে৷
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷