হামবুর্গ শহরে রবিবার এক সিনাগগের সামনে হামলায় এক ইহুদি ছাত্র গুরুতরভাবে আহত হয়েছে৷ পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে৷ এই হামলার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ভূখণ্ডে আবার ইহুদি উপাসনালয়ের উপর বড় হামলার ষড়যন্ত্র সম্ভবত বানচাল হয়ে গেল৷ কিন্তু ২৬ বছর বয়সি এক ইহুদি ছাত্রী আততায়ীর হামলায় গুরুতরভাবে আহত হলেন৷ রবিবার হামবুর্গ শহরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইহুদি-বিদ্বেষের বিষয়টি আবার নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়লো৷
বার্লিনবাসী ২৯ বছর বয়সি হামলাকারীর আসল উদ্দেশ্য নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ জঙ্গলে লড়াইয়ের সময়ে সৈন্যরা যেমন ক্যামোফ্লাজ পোশাক পরে, সেই ব্যক্তির পরনেও তেমন পোশাক ছিল৷ তার পকেটে একটি কাগজে নাৎসিদের স্বস্তিকা চিহ্নও পাওয়া গেছে৷ সেই ব্যক্তি কাজাক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক৷ গ্রেপ্তারের সময় অত্যন্ত বিভ্রান্ত থাকায় পুলিশ তাকে প্রাথমিক জেরা করতে পারেনি৷ একটি বেলচা দিয়ে সে ইহুদি ছাত্রীটির মাথায় আঘাত করে৷ তিনি পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পেয়েছেন৷ পথচারীরা তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে৷
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ দ্রুত হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করায় সম্ভবত আরও বড় আকারের হামলা এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ রবিবার ইহুদি সম্প্রদায়ের সুকোট উৎসব পালিত হচ্ছিল৷ পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, হামলাকারী সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সিনাগগের ভেতরে প্রবেশ করতে চেয়েছিল৷ বাইরে ইহুদি ছাত্রের উপর হামলার পরেই সিনাগগের ভেতরে উপস্থিত ব্যক্তিদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ উল্লেখ্য, জার্মানিতে ইহুদি উপাসনালয়ের উপর একাধিক হামলার ঘটনার ফলে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা রয়েছে৷
এই ঘটনার পর জার্মানিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ জার্মানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এক টুইট বার্তায় ইহুদি বিদ্বেষের তীব্র নিন্দা করে লেখেন, এটি মোটেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ গত মাসেই জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মানিতে বেড়ে চলা ইহুদি বিদ্বেষের জন্য লজ্জা প্রকাশ করেছিলেন৷
২০১৯ সালে জার্মানিতে মোট ২.০৩২টি ইহুদি বিদ্বেষের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল, যা তার আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি৷ গত বছর ৯ই অক্টোবর হালে শহরে একটি সিনাগগের উপর মারাত্মক হামলা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছিল৷ ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র উৎসব ইয়োম কিপুরের সময় এক ব্যক্তি সেখানে হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল৷ হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়ে সে গুলি চালিয়ে আশেপাশে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করে৷ হামবুর্গে ইহুদি সম্প্রদায়ের স্থানীয় ধর্মীয় প্রধান শ্লোমো বিসত্রিৎকি বলেন, ‘‘প্রশ্ন হলো হালে থেকে আমরা কী শিখি নি! সবাই খুবই মর্মাহত৷’’
বিশ্ব ইহুদি কংগ্রেসের প্রধান রোনাল্ড লডার হামলার নিন্দা করে এক বছর আগে হালে শহরের হামলার কথাও স্মরণ করেন৷ তিনি বলেন, হামবুর্গের হামলাকারীসহ যে সব মানুষ ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করে থাকে, তারা সবাই এর জন্য দায়ী৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
গতবছর ১০ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানিতে ইহুদি উপাসনালয়ে যত হামলা
জার্মানির হালে শহরে বুধবার ইহুদিদের একটি উপাসনালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছে৷ তবে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন এক জার্মান আততায়ী৷ ছবিঘরে কয়েকটি সিনাগগে হামলার ঘটনা তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago Images/S. Schellhorn
কোলন, ১৯৫৯: স্বস্তিকা ও হেট স্পিচ
১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে ‘ডয়চে রাইশপার্টাই’ নামের একটি চরম ডানপন্থি দলের সদস্যরা কোলনের সিনাগগে স্বস্তিকা এঁকে দিয়েছিল৷ এছাড়া ‘জার্মানদের দাবি: ইহুদিরা চলে যাও’ শব্দগুলোও লিখে দেয় তারা৷ এরপর জার্মানির বিভিন্ন এলাকায়ও ইহুদিবিরোধী গ্রাফিতির দেখা পাওয়া গিয়েছিল৷ ঐ ঘটনায় জড়িতদের ধরা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন ‘মানুষের উসকানিমূলক’ কিছু করতে না পারে সেজন্য সংসদে আইন পাস হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/Joko
ল্যুবেক, ১৯৯৪: অগ্নিসংযোগ
মার্চ মাসের এই ঘটনা সারা বিশ্বের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল৷ চরম ডানপন্থি চার ব্যক্তি ল্যুবেকের সিনাগগে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল৷ এই ঘটনার এক বছর পর আবারও একই সিনাগগে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
এসেন, ২০০০: পাথর ছোড়া
লেবানন থেকে আসা ১০০-র বেশি ফিলিস্তিনি ২০০০ সালের অক্টোবরে এসেন শহরের পুরনো সিনাগগে পাথর ছুড়ে মেরেছিল৷ ‘মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত’-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শেষে এই হামলা করা হয়৷ এই ঘটনায় একজন পুলিশ আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/B. Boensch
ড্যুসেলডর্ফ, ২০০০: অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপ
ইহুদি ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নিতে ১৯ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিন ও ২০ বছর বয়সি মরক্কোর এক নাগরিক আগুন ও পাথর দিয়ে ড্যুসেলডর্ফের নতুন সিনাগগে হামলা করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
মাইনৎস, ২০১০: মলটফ ককটেল হামলা
১৯৩৮ সালে নাৎসি বাহিনী মাইনৎসের একটি সিনাগগ পুড়িয়ে দিয়েছিল৷ সেখানে নতুন করে একটি সিনাগগ নির্মাণ করা হয়৷ তবে উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরই সেখানে মলটফ ককটেল হামলা চালানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg/Bildarchiv Steffens
ভুপার্টাল, ২০১৪: অগ্নিসংযোগ
ফিলিস্তিনি তিন তরুণ ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ভুপার্টালের সিনাগগের প্রবেশ দরজায় দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মেরেছিল৷ তবে এই ঘটনায় ইহুদিবিদ্বেষের পক্ষে ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে আদালত রায় দিয়েছিলেন৷ জার্মানির ইহুদি ও বিদেশি গণমাধ্যম এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
বার্লিন, ২০১৯: ছুরি নিয়ে হামলা
অক্টোবরের ৪ তারিখ শাবাতের পূর্বে বার্লিনের নতুন সিনাগগে স্থাপন করা একটি বেড়ায় ছুড়ি নিয়ে উঠে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধরে ফেলেন৷ পরে ছেড়েও দেন৷ ইহুদি নেতারা পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে বিচারব্যবস্থার ‘ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Avers
হালে, ২০১৯: গুলি
ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষ্যে ৯ অক্টোবর সিনাগগে উপস্থিত হয়েছিলেন ৭০-৮০ জন মানুষ৷ অস্ত্র নিয়ে সেই সিনাগগে ঢোকার চেষ্টা করেছিল ২৭ বছর বয়সি জার্মান আতাতয়ী৷ তবে নিরাপত্তারক্ষীদের বাধার মুখে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে রেগে গিয়ে গুলি করে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন তিনি৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার জানিয়েছেন, ইহুদি-বিদ্বেষের কারণেই তিনি হামলা চালিয়েছেন৷