জার্মানিতে আবেদন নাকচ হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ
১৯ জানুয়ারি ২০২৪
আবেদন নাকচ হলে আশ্রয়প্রার্থীদের আরো দ্রুত ফেরত পাঠাতে জার্মান সরকার সংসদে নতুন পদক্ষেপ অনুমোদন করিয়েছে৷ এর ফলে চরম দক্ষিণপন্থি শক্তির রমরমা কমানো যাবে কিনা, সে বিষয়ে বিতর্ক চলছে৷
বিজ্ঞাপন
শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলায় জার্মানি তথা ইউরোপের রাজনীতি জগত উত্তাল৷ একাধিক দেশে চরম দক্ষিণপন্থি শক্তি এ বিষয়ে মানুষের ভয়ভীতির ফায়দা তুলে নিজেদের শক্তি বাড়াচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্তরে এই সংকট সামাল দেওয়া পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে জাতীয় স্তরে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলি বাধ্য হয়ে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ফ্রান্সের পর জার্মানিও এবার সেই পথে অগ্রসর হচ্ছে৷
বৃহস্পতিবার জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী সংক্রান্ত নতুন কিছু কড়া নিয়ম অনুমোদন করেছে৷ এর আওতায় কোনো ব্যক্তির আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করা হলে তাকে দ্রুত ও আরো সহজে প্রত্যর্পণ করা কর্তৃপক্ষের জন্য সহজ হবে৷ বিশেষ করে অপরাধী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ আরো তরান্বিত করা হবে৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার বলেন, যে সব মানুষের জার্মানিতে থাকার আইনি অধিকার নেই, তাদের আরো দ্রুত দেশ ছাড়তে হবে৷ তাঁর মতে, ‘অবৈধ বহিরাগতদের’ নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে পারলে যে সম্পদ সাশ্রয় হবে, আশ্রয়ের সত্যি প্রয়োজন আছে, এমন মানুষের জন্য তা কাজে লাগানো হবে৷ নতুন এই সব পদক্ষেপ অনুমোদনের মাধ্যমে পুলিশের হাতে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে৷ ফলে যাদের জার্মানি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের সন্ধান করা ও তাদের পরিচয় নির্ণয় করা আগের তুলনায় সহজ হবে৷ তাছাড়া বহিষ্কারের নির্দেশের পর কর্তৃপক্ষ বহিরাগতদের দশ দিনের বদলে ২৮ দিন পর্যন্ত আটক রাখতে পারবে৷ ফলে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার জন্য আরো সময় পাওয়া যাবে৷ নতুন পদক্ষেপগুলির ফলে বছরে বাড়তি প্রায় ৬০০ মানুষকে ফেরত পাঠানো যাবে বলে সরকার অনুমান করছে৷ গত বছরে নেওয়া পদক্ষেপের ফলে সেই হার ইতোমধ্যেই ২৭ শতাংশ বেড়ে গেছে৷
জার্মান সরকারের এসব পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে পারবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ জনমত সমীক্ষায় চরম দক্ষিণপন্থি দল এএফডি এখনো দ্বিতীয় জনপ্রিয় শক্তি হিসেবে নিজস্ব অবস্থান ধরে রেখেছে৷ এমনকি সাম্প্রতিক এক কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও তাদের প্রতি সমর্থন কমছে না৷ বিভিন্ন মহল থেকে বুন্ডেসটাগের সিদ্ধান্তের সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ বামপন্থি দল ‘ডি লিংকে' সরকারের বিরুদ্ধে সামান্য কিছু মানুষের বিরুদ্ধে এমন কড়া পদক্ষেপকে চরম দক্ষিণপন্থি শক্তির মনোভাবের সঙ্গে তুলনা করেছে৷ একাধিক মানবাধিকার গোষ্ঠী এমন পদক্ষেপকে অমানবিক ও অত্যধিক হিসেবে বর্ণনা করেছে৷ জার্মান আইনজীবী সমিতিও সরকারের সমালোচনা করেছে৷ সমুদ্রপথে আশা আশ্রয়প্রার্থীদের উদ্ধারে নিয়োজিত গোষ্ঠী ‘এসওএস হিউম্যানিটি' এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কেউ পালিয়ে আসা মানুষকে মানবিক সাহায্য দিলেও এবার কারাদণ্ডের হুমকির মুখে পড়তে হবে৷ উল্লেখ্য, নতুন আইনে আদম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের আওতায় সাহায্যকারীরাও কড়া পদক্ষেপের মুখে পড়তে পারে৷ কারণ অর্থের বিনিময়ে বা নিঃস্বার্থভাবে বহিরাগতদের সাহায্যের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য করা হচ্ছে না৷ জার্মানির জোট সরকার অবশ্য দাবি করছে, যে এনজিও-গুলির শাস্তির ভয় পেতে হবে না৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, এপি)
জার্মানির অভিবাসন নীতিতে যেসব পরিবর্তন আসছে
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জার্মানি আরো অনাকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে৷ তবে সহজ হবে দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Uwe Zucchi/dpa/picture alliance
আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘ডিপোর্টেশন’
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আগেই জানিয়েছেন, নতুন বছরটি আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে৷ ডেয়ার স্পিগেল ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডিসেম্বরে শলৎস বলেছেন, তিনি আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘বড় আকারে ডিপোর্টেশন’ বা প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
প্রত্যাবাসন আইনের পরিবর্তন
সরকারি হিসাবে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে জার্মানি সাত হাজার ৮৬১ জনকে ডিপোর্ট করেছে৷ ‘প্রত্যাবাসন উন্নয়ন আইন’ নামের একটি বিল পাস হলে সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে৷ এই আইনে আগে থেকে ডিপোর্টেশনের ঘোষণা দেয়ার ইতি টানা হবে, বাড়ানো হবে বন্দি রাখার সময়সীমা৷ সেই সঙ্গে যাদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের তল্লাশি ও ফোনের মতো ব্যক্তিগত সম্পত্তি জব্দের বাড়তি ক্ষমতা পাবে পুলিশ৷ অপরাধীদের ক্ষেত্রে ডিপোর্ট আরো দ্রুত হবে৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
‘নিরাপদ দেশ’-এর সংখ্যা বাড়বে
যেসব দেশে তেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই তাদেরকে ‘নিরাপদ দেশ’ এর তালিকায় রাখে সরকার৷ এসব দেশের নাগরিকেরা আশ্রয়ের জন্য কম বিবেচিত হন এবং দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়৷ এমন দেশের সংখ্যা বাড়াতে চায় জার্মানি৷ সবশেষ নভেম্বরে এই তালিকায় ঢুকেছে জর্জিয়া ও মলডোভা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের একটি চুক্তি পুনর্নবায়ন হলে দেশটির আশ্রয়প্রার্থীদেরও দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে৷
ছবি: Alexander Pohl/NurPhoto/picture alliance
আশ্রয় প্রক্রিয়ায় গতি
আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চায় জার্মানি৷ বর্তমানে একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই বছরের বেশি পর্যন্ত সময় লাগে৷ প্রস্তাবিত আইনে তা তিন মাস থেকে ছয় মাসে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷ আশ্রয় আবেদনকারীদের ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধাগুলোও কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ বর্তমানে ১৮ মাস পরে ‘কল্যাণভাতা’ পাওয়া যায়, যা তিন বছর পর মিলবে৷ রাষ্ট্রীয় আবাসনে যারা থাকবেন তাদের খাবার খরচ কেটে নেয়া হবে৷
ছবি: DW
‘ক্যাশ’-এর বদলে কার্ড
ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাশ বা অর্থ প্রদানের বদলে কার্ড ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করছে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য, যাতে তারা পরিবারকে বা অন্য কাউকে অর্থ পাঠাতে না পারে৷ হ্যানোফার গত ডিসেম্বরে ‘সোশ্যাল কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করেছে৷ পূর্বের রাজ্য ঠুরিঙ্গিয়াও আশ্রয় আবেদনকারীদের জন্য কার্ড ইস্যু করেছে৷ ২০২৪ সালে এই ব্যবস্থা চালু করবে হামবুর্গ ও বাভারিয়াও৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/piture alliance
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভিবাসন
মার্চ থেকে বিদেশিরা দক্ষতার ভিত্তিতে সরাসরি জার্মানিতে এসে চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন৷ আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্য আনার প্রক্রিয়াও সহজ হবে৷ ব্যয় বহনের সামর্থের প্রমাণ দিতে পারলে কর্মীরা তাদের উপর নির্ভরশীলদের নিয়ে তিন বছরের বসবাসের অনুমতি পাবেন৷ কিছু দেশের জন্য বিশেষ অভিবাসন কোটার সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ যেমন জুনে বলকান দেশগুলোর জন্য এই সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি করে ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে৷