জার্মানিতে লকডাউন আরো বাড়তে পারে। বুধবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, লকডাউন আরো তিন সপ্তাহ বাড়ানো হবে। মার্চের ২৮ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হবে। তবে নতুন লকডাউনে বেশ কিছু ছাড় দেওয়া হতে পারে। বুধবার ফের বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পরে গোটা জার্মানি জুড়ে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে। গত বছরের শেষ পর্ব থেকেই সেখানে লকডাউন চলছে। আগামী ৭ মার্চ লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ এখনো যথেষ্ট কমেনি। ফলে লকডাউন আরো তিন সপ্তাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার এ বিষয়ে বৈঠক হয়। সেখানে স্থির হয়েছে, ২৮ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বুধবার।
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
চলমান লকডাউনের মেয়াদ তিন সপ্তাহ বাড়িয়েছে জার্মানি। শুধু মেয়াদ বৃদ্ধি নয় নতুন করে আরোপ করা হয়েছে কিছু বিধিনিষেধ। কী সেগুলো, দেখে নিন ছবিঘরে।
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
নতুন নিয়ম অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের হটস্পটের বাসিন্দারা তাদের শহর থেকে যৌক্তিক কারণ ছাড়া ১৫ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না। এর মধ্যে ডে ট্রিপ বা একদিনে কোথাও গিয়ে সেদিনই আবার ফেরার মতো দূরত্বেও যেতে পারবেন না। এক সপ্তাহের হিসাবে গড়ে প্রতি এক লাখ বাসিন্দার দুইশ’ জন করোনা আক্রান্ত, এমন জেলাকে হটস্পট হিসেবে ধরা হয়।
ছবি: Andreas Gora/imago images
সাক্ষাতে মানা
এতদিন জনসমাগমের ক্ষেত্রে দুই পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজনের একসাথ হওয়ার অনুমতি ছিল৷ সেটি এখন কমিয়ে এক পরিবারের মাত্র একজনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ অর্থাৎ একই বাড়ির বাসিন্দা নন এমন ক্ষেত্রে মাত্র একজনের সঙ্গে দেখা বা মিলিত হওয়া যাবে। তবে সাথে নিজের পরিবারের বা বাসার একজন থাকতে পারবে৷
ছবি: Thomas Lohnes/Getty Images
দুইবার পরীক্ষা
হাই-রিস্ক বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে কোনো ব্যক্তি জার্মানিতে এলে তাকে দুইবার করোনার পরীক্ষা করাতে হবে। প্রথমটির ফলাফল নেগেটিভ হলেও অন্তত পাঁচদিন কোয়ারান্টিন বাধ্যতামূলক।
ছবি: Antonio Calanni/AP Photo/picture alliance
অভিভাবকদের ছুটি
বাড়িতে শিশুদের দেখাশোনার জন্য কর্মজীবী বাবা-মা ১০ দিনের অতিরিক্ত ছুটি পাবেন। বাবা বা মা যদি একা হন তাহলে ছুটি হবে ২০ দিন।
ছবি: Imago Images/photothek
আগের নিয়ম
এর সঙ্গে আগের নিয়মগুলোতো থাকছেই। অর্থাৎ, জরুরি নয় এমন দোকান ও সেবা প্রতিষ্ঠান, ডে কেয়ার সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। জনসমক্ষে অ্যালকোহল পান করা যাবে না। চার্চ, সিনাগগ, মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে। কর্মীদের বাড়ি থেকে অফিস করার পরামর্শটি অবশ্য করোনার শুরু থেকেই দেয়া হয়েছে।
ছবি: Foerster/Eibner-Pressefoto/picture alliance
কতদিন থাকবে?
কমপক্ষে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়মগুলো বহাল থাকবে। ২৫ জানুয়ারি রাজ্য ও ফেডারেল সরকার বসে পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ করবেন। সরকারের আশা, নতুন কড়াকড়িতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। সাত দিনে প্রতি এক লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে ৫০ জন বা তার কম আক্রান্ত হলে সেটিকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হবে।
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
প্রকোপ বাড়ছে
মঙ্গলবার র্পযন্ত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯০০ জন। মারা গেছেন ৯৪৪ জন। বড়দিনের ছুটির শেষ হওয়ায় এই সংখ্যা এখন আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সাতদিনই গড়ে এক লাখ জনগোষ্ঠীর বিপরীতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন, যা প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
ছবি: Ina Fassbender/AFP/Getty Images
ম্যার্কেলর কথা
সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জনগণকে এবার বিশেষভাবে সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম তিন মাসে দেশটিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্তরা টিকা পাবেন। এরপর থেকে বাকিদের টিকা দেয়া সম্ভব হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে জার্মানি একা টিকা নিশ্চিত করলে সেটি কাজে আসবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
8 ছবি1 | 8
কোন কোন ক্ষেত্রে ছাড় হতে পারে
ডিডাব্লিউ নতুন লকডাউনের খসড়া প্রস্তাব দেখেছে। সেখানে বলা হয়েছে, যে সমস্ত অঞ্চলে করোনার প্রকোপ খানিকটা কমেছে, সেখানে কিছু ছাড় দেওয়া হতে পারে। এখন দুই জনের বেশি দেখা করতে পারছেন। নতুন নিয়মে এক জায়গায় পাঁচজন দেখা করতে পারবেন। অর্থাৎ, দুইটি পরিবারের পাঁচজন একসঙ্গে একজায়গায় থাকতে পারবেন। যে সমস্ত অঞ্চলে করোনার প্রকোপ অনেকটা কম, সেখানে ১০জন পর্যন্ত দেখা করতে পারবেন।
সাধারণ দোকান, বইয়ের দোকান, ফুলের দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে সর্বত্র নয়। যেখানে করোনার প্রকোপ কম, সেখানেই।
টানা এক সপ্তাহ যেখানে করোনার পরিমাণ প্রতি ১০ লাখে ৩৫ এর নীচে থাকবে, সেই অঞ্চলেই ছাড়ের ব্যবস্থা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে টিকাকরণ আরো দ্রুত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাস অ্যান্টিজেন টেস্টের পরিকল্পনাও করা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলে সপ্তাহে একবার ছাত্র এবং শিক্ষকদের পরীক্ষা হতে পারে জানানো হয়েছে।
রেস্তোরাঁ, বার, সিনেমা হল দীর্ঘদিন ধরেই জার্মানিতে বন্ধ। আপাতত তা খোলার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। হোটেলগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র ব্যবসার কারণে যারা জার্মানি আসছেন, তারা হোটেলে থাকতে পারছেন। জার্মান প্রশাসন নাগরিকদের অনুরোধ করেছে, ইস্টারের সময় কেউ যেন দেশের ভিতর বা বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা না করেন। বাইরে থেকে আসার ব্যাপারেও বহু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।