জার্মানিতে সিডিইউ ও এসপিডি-র মধ্যে প্রাথমিক আলোচনায় প্রতিরক্ষা ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে মতৈক্য।
সিডিইউ, সিএসইউ এবং এসপিডি প্রতিরক্ষা ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে খরচ বাড়ানো নিয়ে একমত হলো। ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
জার্মানির সম্ভাব্য পরবর্তী চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস ঘোষণা করেছেন, তারা প্রতিরক্ষা ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অনেকটাই বাড়াবেন। ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইউরোপের দেশগুলির ধারণা হয়েছে, তিনি ইউরোপ ও ন্যাটো নিয়ে খুব একটা উৎসাহ দেখাবেন না।
এই পরিস্থিতিতে ম্যার্ৎসের ঘোষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিডিইউ, সিএসইউ ও এসপিডি-র নেতাদের মধ্যে আলোচনার পর ম্যার্ৎস এই ঘোষণা করেছেন। ম্যার্ৎস যখন এই ঘোষণা করছেন, তখন তার পাশে ছিলেন এসপিডি নেতা লার্স ক্লিংবাইল, সাসকিয়া এসকেন এবং সিএসইউ নেতা মার্কাস সোডের।
এই নেতারা জানিয়েছেন, তারা পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব আনতে একমত হয়েছেন। সেই প্রস্তাবে জার্মানির সংবিধানে বদল করে ঋণ নেয়ার সীমা বদল করে প্রতিরক্ষা খরচ জিডিপি-র এক শতাংশ থেকে বাড়াবার ব্যবস্থা করা হবে।
এর পাশাপাশি দেশের ১৬টি রাজ্য শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ ঋণ নিতে পারবে, সেই ব্যবস্থাও করা হবে।
ম্যার্ৎস যা বললেন
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছেন, ''আ্রমাদের সামনে যে বিপুল কাজ রয়েছে, তার জন্য প্রথম ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চাইছি। আমাদের মহাদেশের স্বাধীনতা ও শান্তির ক্ষেত্রে বড় হুমকি রয়েছে। তাই প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে যা দরকার, তা আমাদের করতে হবে।''
জার্মানির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর খতিয়ান
রোববার জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন৷ ছবিঘরে এক নজরে দেখে নিন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং তারা কী চায়।
ছবি: Florian Gaertner/photothek/imago images
সিডিইউ/সিএসইউ
মধ্য-ডানপন্থি সিডিইউ এবং বাভারিয়ায় এর আঞ্চলিক সহযোগী সিএসইউ যৌথভাবে ইউনিয়ন নামে পরিচিত। বয়স্ক, গ্রামীণ এবং গির্জাগামী মানুষের মধ্যে দলটির সমর্থন বেশি। শিল্প নেতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং নিম্ন বা মাঝারি শিক্ষার ভোটারদের মধ্যেও ভালো ফল করেছে তারা। কর্পোরেট কর কমানো, উচ্চ-আয়ের মানুষদের সুবিধা প্রদান, আশ্রয়বিধি কঠোর করা, অপরাধী শরণার্থীদের বহিষ্কার করা ইত্যাদি এর এজেন্ডায়। দলটির নির্বাচনী রঙ- কালো৷
ছবি: Christof Stache/AFP/Getty Images
এসপিডি
মধ্য-বামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল- এসপিডি ঐতিহ্যগতভাবে শ্রমিক শ্রেণী এবং ট্রেড ইউনিয়নের দল। ঐতিহ্যগতভাবে জার্মানিতে এসপিডির সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল পশ্চিম জার্মানির শিল্প অঞ্চল, বিশেষ করে রুওর অঞ্চল, হেসে এবং লোয়ার সাক্সনি রাজ্য। ন্যূনতম মজুরির মতো সামাজিক নীতি গ্রহণ, ধনীদের ওপর কর আরোপ এবং নিম্ন ও মাঝারি আয়ের মানুষের করের বোঝা কমাতে চায় এসপিডি। দলটির নির্বাচনি রঙ- লাল।
ছবি: Bernd von Jutrczenka/dpa/picture alliance
গ্রিন পার্টি
পরিবেশবাদি দলটির মূল ভোটার ভিত্তি শহুরে সুশিক্ষিত জনগণ, বিশেষ করে পশ্চিম জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক শহরগুলোতে। তবে ধীরে ধীরে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হচ্ছে দলটি। ফ্রাইডে ফর ফিউচার এবং জলবায়ু নিয়ে নানা কর্মসূচি তরুণদের দলটির প্রতি আকৃষ্ট করছে। স্বাভাবিকভাবেই দলটির নির্বাচনী রঙ- সবুজ।
ছবি: Daniel Roland/AFP
এফডিপি
নয়া-উদারপন্থি মুক্ত বাজারের সমর্থক মুক্ত গণতন্ত্রী দল- এফপিডি সাধারণত ব্যবসায়ী, ডেন্টিস্ট এবং আইনজীবীদের কাছে জনপ্রিয়। শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে এর জনপ্রিয়তা কম। ব্যক্তির স্বাধীনতা বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা কমানোই হচ্ছে দলটির মূলনীতি। ইউরোপপন্থি এই দল কর ছাড়ের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছে। দলটির নির্বাচনী রঙ- হলুদ।
ছবি: Hannes P Albert/dpa/picture alliance
ডি লিংকে
বামপন্থি দল ডি লিংকের মূল ঘাঁটি সাবেক পূর্ব জার্মান অঞ্চলে। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো বিলুপ্ত করে দিতে চায় দলটি। অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম মজুরি অনেক বাড়ানো, অবসরের বয়েস কমানো, অভিবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া ইত্যাদি। দলটির নির্বাচনি রঙ- লাল।
ছবি: Hendrik Schmidt/dpa/picture alliance
এএফডি
অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড বা জার্মানির জন্য বিকল্প- এএফডি একটি কট্টর ডানপন্থি অভিবাসী বিরোধী দল। গঠিত হওয়ার পর গ্রিন ছাড়া অন্য প্রায় সব দল থেকেই সমর্থকেরা এই দলের প্রতি আনুগত্য বদল করেছেন। পূর্ব জার্মানিতে এর সাফল্য তুলনামূলক বেশি। জার্মান ঐতিহ্যে গুরুত্ব দেয় দলটি, ইসলামকে জার্মান সমাজের অংশ মনে করে না। দলটির নির্বাচনী রঙ- হালকা নীল।
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
বিএসডাব্লিউ
২০২৪ সালে গঠিত এই পপুলিস্ট দলটি খুব দ্রুতই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সারা ভাগেনক্নেশট জোট বা ব্যুন্ডনিস সারা ভাগেনক্নেশট- বিএসডাব্লিউ এর চেয়ারম্যান সাবেক বামপন্থি নেত্রী সারা ভাগেনক্নেশট। পূর্ব জার্মানিতে এই দলের সমর্থন বেশি। সামাজিক বিচার, চাকরির নিরাপত্তা ইত্যাদি ইস্যুতে বামপন্থি নীতিতে থাকলেও অভিবাসন, লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু ইস্যুতে তাদের নীতির সঙ্গে ডানপন্থিদের মিল রয়েছে। দলটির নির্বাচনী রঙ- বেগুনি।
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
7 ছবি1 | 7
ম্যার্ৎস বলেছেন, ''জার্মানির অর্থনীতি যদি আবার বৃদ্ধির পথে চলে, তাহলে প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে খরচ করা সম্ভব। তার জন্য পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু শুধুমাত্র সরকারি বাজট থেকে এই বিপুল অর্থ দেয়া সম্ভব নয়, তাই দলগুলি ঠিক করেছে, পরিকাঠামো তহবিল গঠন করা হবে। এর ফলে জার্মানির অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।''
এসপিডি নেতা কিংবেইল বলেছেন, ''আমরা দেশে বিনিয়োগের উপর জোর দিচ্ছি। সেজন্য ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যে সাংবিধানিক বাধা আছে, তা দূর করতে চাইছি।''
সিএসইউ নেতা সোডের বলেছেন, আমরা আমাদের বন্ধু ও শত্রুদের একটা বার্তা দিতে চাই। জার্মানি পিছিয়ে যাচ্ছে না।
বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দুইটি প্রস্তাব রাখতে চায় সিডিইউ ও এসপিডি। গ্রিন ও এফপিডি তাদের সমর্থন করবে বলে তাদের আশা।