জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের ডিজিটাল ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে
১০ মার্চ ২০২৪
জার্মান রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া সুবিধা আশ্রয়প্রার্থীরা যেন জার্মানির বাইরে পাঠাতে না পারেন সেজন্য তাদের ডিজিটাল ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে৷ এটি কীভাবে কাজ করে?
ডিজিটাল ডেবিট কার্ড চালু সংক্রান্ত নতুন আইনের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে৷ সংসদে পাস হলে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে৷
বর্তমানে একজন আশ্রয়প্রার্থী প্রতিমাসে ক্যাশ বা ভাউচার হিসেবে ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো পেয়ে থাকেন৷ ভবিষ্যতে এই অর্থ ডেবিট কার্ডে ঢুকিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ আশ্রয়প্রার্থীরা সেই কার্ড দিয়ে সাধারণ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করা যায়, এমন দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে পারবেন৷ এই কার্ড দিয়ে অনলাইন পেমেন্ট করা যাবে না৷
জার্মানির ১৬টি রাজ্য এই ধরনের কার্ড ব্যবস্থা চালুকরতে সম্মত হয়েছে৷ তবে কোনো রাজ্য কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের মতো করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে৷ যেমন বাভারিয়া রাজ্য কর্তৃপক্ষ ‘নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে' এই কার্ড ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে চাইছে৷ কী ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তা উল্লেখ না করলেও ধারণা করা হচ্ছে এর মধ্যে জুয়া কোম্পানি থাকতে পারে৷
কেন এমন কার্ড?
১৬ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে এমন কার্ড চালুর আনুষ্ঠানিক যে কারণ বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে, ‘‘রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা নিজ দেশে পাঠানোর সম্ভাবনা বন্ধ করা এবং এভাবে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট অমানবিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা৷'' আশ্রয়প্রার্থীরা যেন অর্থসহায়তা নিজ দেশে পাঠাতে না পারেন সেটি নজরে রাখতে বর্তমানে রাজ্য কর্তৃপক্ষকে অনেক চাপ নিতে হচ্ছে৷ সেটি কমানোও এমন কার্ড চালুর একটি উদ্দেশ্য, বলে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে উল্লেখ করা হয়৷
পাইলট প্রকল্প হিসেবে কিছু জায়গায় কয়েকমাস আশ্রয়প্রার্থীদের এমন কার্ড দেওয়া হয়েছিল৷ এতে সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেছে৷ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক চাপ কমেছে৷ প্রতিমাসের শুরুতে একসঙ্গে এত অর্থ পাওয়াজনিত নিরাপত্তা উদ্বেগ কমেছে৷ এছাড়া অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী পরিবার জানিয়েছে, তাদের মাসিক বাজেট ব্যবস্থাপনা উন্নত হয়েছে৷
তবে রাজনীতিবিদেরা আশা করছেন, এমন কার্ড চালু হলে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন নিরুৎসাহিত হবে৷ ফলে ভোটারদের ডানপন্থিদের দিকে ঝোঁকা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে৷
প্রতিক্রিয়া
অভিবাসন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, আশ্রয়প্রার্থীরা যে অর্থসহায়তা তাদের দেশে পাঠায় তার পক্ষে খুব কম প্রমাণ আছে৷ সোসাইটি ফর ফ্রিডম রাইটসের আইনি বিশেষজ্ঞ লেনা ফ্রেরিশ ডিডাব্লিউকে জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, আশ্রয়প্রার্থীরা তখনই দেশে টাকা পাঠান যখন তারা নিজেরা কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন৷‘‘আমার মনে হচ্ছে এমন কার্ড চালুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে,'' বলেন তিনি৷
একজন আশ্রয়প্রার্থী জার্মানিতে থাকার মেয়াদ অন্তত তিনমাস না হলে আইনত কাজ করতে পারেন না৷
জার্মানির অভিবাসন নীতিতে যেসব পরিবর্তন আসছে
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জার্মানি আরো অনাকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে৷ তবে সহজ হবে দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Uwe Zucchi/dpa/picture alliance
আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘ডিপোর্টেশন’
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আগেই জানিয়েছেন, নতুন বছরটি আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে৷ ডেয়ার স্পিগেল ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডিসেম্বরে শলৎস বলেছেন, তিনি আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘বড় আকারে ডিপোর্টেশন’ বা প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
প্রত্যাবাসন আইনের পরিবর্তন
সরকারি হিসাবে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে জার্মানি সাত হাজার ৮৬১ জনকে ডিপোর্ট করেছে৷ ‘প্রত্যাবাসন উন্নয়ন আইন’ নামের একটি বিল পাস হলে সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে৷ এই আইনে আগে থেকে ডিপোর্টেশনের ঘোষণা দেয়ার ইতি টানা হবে, বাড়ানো হবে বন্দি রাখার সময়সীমা৷ সেই সঙ্গে যাদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের তল্লাশি ও ফোনের মতো ব্যক্তিগত সম্পত্তি জব্দের বাড়তি ক্ষমতা পাবে পুলিশ৷ অপরাধীদের ক্ষেত্রে ডিপোর্ট আরো দ্রুত হবে৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
‘নিরাপদ দেশ’-এর সংখ্যা বাড়বে
যেসব দেশে তেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই তাদেরকে ‘নিরাপদ দেশ’ এর তালিকায় রাখে সরকার৷ এসব দেশের নাগরিকেরা আশ্রয়ের জন্য কম বিবেচিত হন এবং দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়৷ এমন দেশের সংখ্যা বাড়াতে চায় জার্মানি৷ সবশেষ নভেম্বরে এই তালিকায় ঢুকেছে জর্জিয়া ও মলডোভা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের একটি চুক্তি পুনর্নবায়ন হলে দেশটির আশ্রয়প্রার্থীদেরও দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে৷
ছবি: Alexander Pohl/NurPhoto/picture alliance
আশ্রয় প্রক্রিয়ায় গতি
আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চায় জার্মানি৷ বর্তমানে একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই বছরের বেশি পর্যন্ত সময় লাগে৷ প্রস্তাবিত আইনে তা তিন মাস থেকে ছয় মাসে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷ আশ্রয় আবেদনকারীদের ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধাগুলোও কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ বর্তমানে ১৮ মাস পরে ‘কল্যাণভাতা’ পাওয়া যায়, যা তিন বছর পর মিলবে৷ রাষ্ট্রীয় আবাসনে যারা থাকবেন তাদের খাবার খরচ কেটে নেয়া হবে৷
ছবি: DW
‘ক্যাশ’-এর বদলে কার্ড
ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাশ বা অর্থ প্রদানের বদলে কার্ড ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করছে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য, যাতে তারা পরিবারকে বা অন্য কাউকে অর্থ পাঠাতে না পারে৷ হ্যানোফার গত ডিসেম্বরে ‘সোশ্যাল কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করেছে৷ পূর্বের রাজ্য ঠুরিঙ্গিয়াও আশ্রয় আবেদনকারীদের জন্য কার্ড ইস্যু করেছে৷ ২০২৪ সালে এই ব্যবস্থা চালু করবে হামবুর্গ ও বাভারিয়াও৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/piture alliance
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভিবাসন
মার্চ থেকে বিদেশিরা দক্ষতার ভিত্তিতে সরাসরি জার্মানিতে এসে চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন৷ আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্য আনার প্রক্রিয়াও সহজ হবে৷ ব্যয় বহনের সামর্থের প্রমাণ দিতে পারলে কর্মীরা তাদের উপর নির্ভরশীলদের নিয়ে তিন বছরের বসবাসের অনুমতি পাবেন৷ কিছু দেশের জন্য বিশেষ অভিবাসন কোটার সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ যেমন জুনে বলকান দেশগুলোর জন্য এই সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি করে ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে৷