জার্মানির ফেডারেল পুলিশের একটি প্রতিবেদন বলছে, দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন বাতিলের হার ১৭ ভাগ হলেও প্রকৃতই দেশে ফেরত গেছেন অনেক কম সংখ্যক মানুষ৷ এদিকে, শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, অনেককে ভুলবশত ফেরত পাঠানো হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
রোববার স্থানীয় একটি পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত যেসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ জারি হয়েছে, তাদের অর্ধেকেরও বেশি জনকে ফেরত পাঠানো যায়নি৷
ডি ভেল্ট নামের ঐ পত্রিকার হিসেব বলছে, এই পাঁচ মাসে প্রায় ২৪ হাজার মানুষকে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু এর মধ্যে ফেরত গেছেন মাত্র ১১ হাজার৷
যে ১২ হাজার ৮শ' জনকে ফেরত পাঠানো যায়নি, তাঁদের ১১ হাজার ৫শ' জনকেই যেদিন প্রত্যাবাসনের কথা ছিল, সেদিন তাঁদের ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ ধারণা করা হচ্ছে, এদের অনেকেই পালিয়ে গেছেন৷
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
10 ছবি1 | 10
তবে বাকি ১ হাজার ৩শ' জনকে নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে ফেরত পাঠানো যায়নি বলে রিপোর্টে বলেছে পত্রিকাটি৷
সবচেয়ে বেশি নাইজেরিয়া ও গিনির লোকেরা (৬০ ভাগেরও বেশি) দেশে ফেরত যাওয়ার বিষয়টি ঠেকানোর চেষ্টা করছেন৷ এছাড়া ৫০ ভাগ সোমালি ও ৪০ ভাগ সিরীয় নাগরিক ফেরত যেতে চাইছেন না৷
এছাড়া সিয়েরা লিওন, গাম্বিয়া, মরক্কো, ইরাক ও ইরিত্রিয়ার নাগরিকদেরও ৩০ ভাগ রয়েছেন এই তালিকায়৷
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে খুশি নয় ফেডারেল পুলিশ৷ তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আরো সক্রিয় হবার আহ্বান জানিয়েছে৷ ফেডারেল পুলিশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এয়ার্নস্ট ভাল্টার বলেন, ‘‘ফেডারেল পুলিশ অনেক পরিশ্রম করে প্রত্যেককে চিহ্নিত করছে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে জানাচ্ছে৷'' তিনি মনে করেন, স্থানীয় প্রশাসনকে প্রত্যাবাসন আইনের আরো কঠোর প্রয়োগ করতে হবে৷
তবে শ্রমমন্ত্রী সামাজিক গনতন্ত্রী দলের নেতা হুবার্টুস হাইল এই জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন৷ তাঁর মতে, অনেক শরণার্থী বেশ ভালোভাবেই জার্মান সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন৷ প্রত্যাবাসনের তালিকায় তাঁদের নামও আসছে৷
জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন বেড়েছে
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ বলছে, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Shkullaku
২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ এর সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল মাসে মোট ৫৯,৬৮০টি আবেদন পড়েছে৷ মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল ৫৮,৩১৫, অর্থাৎ ১,৩৬৫টি কম৷
ছবি: Brian Leli
শীর্ষে সিরিয়া
সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছেন সিরিয়ার নাগরিকরা৷ ২৫,৭৯১ জন৷ অবশ্য মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল সাড়ে সাত শতাংশ বেশি৷ ২৭,৮৭৮ জন৷
ছবি: Fotolia
প্রথম চার মাসেও শীর্ষে সিরিয়া
২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে এক লক্ষ ১৬ হাজার ৮২৬ জন সিরীয় নাগরিক জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ আর সব দেশ মিলিয়ে আবেদনের সংখ্যা দুই লক্ষ ৪৬ হাজার ৩৯৩ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
ইরাকিদের সংখ্যা বেড়েছে
মোট হিসেবে সিরিয়ার পরেই আছে ইরাক৷ তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলের চেয়ে মার্চে বেশি হলেও ইরাকের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো৷ অর্থাৎ মার্চের চেয়ে এপ্রিলেই বেশি ইরাকি আবেদন করেছেন৷ ৯,৫০৫ জন৷ মার্চে ছিল ৮,৯৮২ জন৷
ছবি: DW/R. Shirmohammadi
তৃতীয় স্থানে আফগানিস্থান
সিরিয়া ও ইরাকের পর তালিকায় তিন নম্বরে আছে আফগানিস্তান৷ এপ্রিলে ৮,৪৫৮ জন আফগান রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ মার্চ মাসের চেয়ে সংখ্যাটি ১১.৮ শতাংশ বেশি৷
ছবি: DW/Omid
জাতীয়তা জানা নেই
জাতীয়তা ‘অস্পষ্ট’ এমন আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলে ছিল ১,২৯৯ জন৷ সংখ্যাটি মার্চ মাসে ছিল আরও বেশি৷ ১,৮৬৯ জন৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
পাঁচ নম্বরে ইরান
১,৯৮১ আবেদন নিয়ে তালিকায় ইরানের নাম আছে পাঁচ নম্বরে৷ ছয়-এ আছে আলবেনিয়া (১,১৮৮ জন)৷ পাকিস্তানি আবেদনের সংখ্যা ১,০৩৮; আর ইরিত্রিয়ার ১,১৫২৷