জার্মানির অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, দেশে আয় বৈষম্য বেড়েছে৷ তবে আয় বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার কথা বললেও জরিপে অংশ নেওয়া ৭০ শতাংশ জার্মানই বলেছেন, জীবনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/Eibner-Pressefoto
বিজ্ঞাপন
ষাট শতাংশেরও বেশি জার্মান মনে করেন, দেশটিতে আয় বৈষম্য ‘অনেক বেশি'৷ ইউরোপের ২৮টি দেশের মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোব্যারোমিটার যে রিপোর্ট প্রকাশ করে, সেখানে এ তথ্য এসেছে৷
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে আয় বৈষম্য ‘অনেক বেড়েছে', এমনটা সবচেয়ে বেশি মনে করেন পর্তুগিজরা৷ সেখানকার ৯৬ শতাংশ মানুষই আয় বৈষম্যের প্রশ্নে একমত৷
আয় বৈষম্য নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যাণ্ডসের মানুষের অভিযোগ সবচেয়ে কম৷ দেশটির ৫৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন আয় বৈষম্য অনেক বেড়েছে৷
জার্মানিতে নারী-পুরুষের বেতনে ব্যাপক ফারাক
জার্মানিতে একই পেশায় মহিলারা পুরুষদের চেয়ে গড়ে ২১ শতাংশ কম বেতন বা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন৷ সত্তরটির বেশি পেশার মধ্যে মাত্র চারটিতে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি বেতন পেয়ে থাকেন৷ কোন কোন পেশায়, তার হদিশ রয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
পূর্তশিল্প
হ্যাঁ, মূলত পুরুষদেরই কাজ বলে পরিচিত হলেও এই শিল্পে কিন্তু মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি রোজগার করে থাকেন৷ জার্মানিতে পূর্তশিল্পে মহিলাদের গড় মাসিক বেতন ৩,৭৩০ ইউরো, পুরুষদের ৩,৭২৮ ইউরো৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
শিক্ষাক্ষেত্রে
শিক্ষকতায় পুরুষরা গড়ে মহিলাদের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি বেতন পেয়ে থাকেন৷ জার্মানিতে শিক্ষাক্ষেত্রে পুরুষদের গড় আয় মাসে ৪,৬৬৯ ইউরো, মহিলাদের ৪,১৩১ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিবহণ ও পরিসংখ্যান
‘সড়ক পরিবহণ ও পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহণ’ বিভাগে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি রোজগার করে থাকেন৷ জার্মানিতে গৃহনির্মাণ শিল্পেও মহিলারা পুরুষদের চেয়ে দুই শতাংশ বেশি বেতন পান৷ এমনকি ‘ডাক, কুরিয়ার ও এক্সপ্রেস সেবা’ বিভাগেও মহিলারা সামান্য হলেও এগিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/Ulrich Baumgarten
আইন নিয়ে যাদের কারবার
আইনজীবী, ট্যাক্স কনসাল্টেন্ট বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট – জার্মানিতে এসব পেশায় পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রোজগার করে থাকেন! এসব পেশায় পুরুষরা মাসে গড়ে ৬,৪৩৪ ইউরো আয় করে থাকেন, মহিলারা ৩,৪৭৮ ইউরো৷
ছবি: Gina Sanders/Fotolia.com
খেলাধুলা, মনোরঞ্জন, অবসর বিনোদন
এই বিভাগে বেতন বা পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে জার্মানিতে নারী-পুরুষের ব্যবধান সর্বোচ্চ৷ পুরুষরা যেখানে মাসে গড়ে ৫,৭০১ ইউরো রোজগার করে থাকেন, মহিলারা পান গড়ে ২,৭৭২ ইউরো৷ অন্যভাবে বলতে গেলে, এই সব ক্ষেত্রে পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে মোট ১০৬ শতাংশ বেশি বেতন পেয়ে থাকেন৷
ছবি: Jimena Rojas
রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
গবেষণা ও বিকাশের ক্ষেত্রে জার্মানিতে পুরুষদের গড় মাসিক আয় ৫,৫৭৭ ইউরো, মহিলাদের ৪,৩৩৪৷ অর্থাৎ পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি বেতন পেয়ে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/PhotoAlto/F. Cirou
বৈমানিক
বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে পুরুষরা যেখানে মাসে গড়ে ৭,৬৯৪ ইউরো রোজগার করে থাকেন, মহিলাদের মাসিক গড় আয় সেখানে ৩,৮৮৩ ইউরো৷ অর্থাৎ ‘মেঘের ওপারে’ মহিলারা পুরুষদের তুলনায় ৯৮ শতাংশ কম রোজগার করে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/G.Hochmut
হোটেল-রেস্টুরেন্ট
অতিথিদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য না করা হলেও, গোটা হোটেল শিল্পে কিন্তু মহিলারা মাসে গড়ে ২,১৫৫ ইউরো রোজগার করে থাকেন, যেখানে তাদের পুরুষ সহকর্মীরা পান মাসে গড়ে ২,৪৫৬ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
8 ছবি1 | 8
জরিপে অংশ নেওয়া ইউরোপের ২৮টি দেশের উত্তরদাতাদের মধ্যে গড়ে ৮১ শতাংশ মানুষ আয় বৈষম্য অনেক বেড়েছে বলে মনে করেন৷
জার্মানিসহ ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতেও ধনী-গরিব বৈষম্য বাড়ছে– এমন আলোচনার মধ্যেই এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো৷ কোনও কোনও অর্থনীতিবিদ বলছেন, এ ধরনের বৈষম্য প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর৷ তবে অনেকেই এ ব্যাপারেই এখন পর্যন্ত তেমন কোনো মন্তব্য করেননি৷
জরিপে অংশ নেওয়া ৭৪ শতাংশ জার্মান মনে করেন, ‘‘আয় বৈষম্য কমাতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত৷'' একই প্রশ্নে সায় দিয়েছেন শতকরা ৯৪ শতাংশ পর্তুগিজ৷ সরকারি পদক্ষেপের ব্যাপারে ডেনিশরা তালিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে৷ তাদের ৫১ শতাংশ মানুষ এ ব্যাপারে সায় দিয়েছেন৷ আয় বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে অধিকাংশ একমত হলেও জরিপে অংশ নেওয়া ৭০ শতাংশ জার্মান বলছেন, জীবনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছেন৷
সমান সুযোগের প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন ডেনিশরা৷ তাদের ৮১ শতাংশ সমান সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে একমত৷ মাত্র ১৮ শতাংশ গ্রিক মনে করেন, তারা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাননি৷
জার্মানির মতো ধনী দেশে শিশুদের দরিদ্রতা হুমকির মুখে
জার্মানিতে সিঙ্গেল বা একক মা, বাবা এবং গরিব পরিবারের দরিদ্রতা আগের তুলনায় আরো বেশি হুমকির মুখে৷ নতুন পদ্ধতির ভিত্তিতে এক সমীক্ষায় এই বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Hager
সিঙ্গেল বা একক মা-বাবার পরিবার
জার্মানির ব্যার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, জার্মানির বহু পরিবারের দারিদ্রতা যা এতদিন ধারণা করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি৷ বিশেষ করে সিঙ্গেল বা একক মা-বাবার পরিবারের সন্তানদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
সমীক্ষার ফলাফল
জার্মানির বোখুম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা নতুন ও উন্নত পদ্ধতিতে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন৷ এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সিঙ্গেল বাবা-মা’দের দারিদ্রসীমার নীচে চলে যাবার ঝুঁকি ৬৮ শতাংশ, অর্থাৎ যা কিনা আগের সমীক্ষার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি৷
ছবি: picture-alliance/Beyond
দরিদ্রতার চালচিত্র
সমীক্ষা থেকে আরও জানা গেছে যে এক সন্তানসহ দম্পতিরা শতকরা ১৩ শতাংশ গরিব, আর যাদের তিনটি সন্তান, তাদের ক্ষেত্রে দারিদ্র্যসীমার ঝুঁকি শতকরা ১৮ভাগ৷ আর প্রতি পাঁচজন শিশুর একজনই গরিব৷ তাছাড়াও ‘যে একবার গরীব সে দীর্ঘদিন গরিব থাকে’ – একথা জানা যায় গত বছর প্রকাশিত একটি সমীক্ষায়৷
ছবি: picture-alliance/Joker
পরিবর্তনের আহ্বান
জার্মানি অর্থনীতির দিক থেকে ইউরোপের শক্তিশালী দেশ হলেও এ দেশের সব শিশুরা ভালো নেই৷ তাই ফাউন্ডেশনটি জার্মনির পরিবার এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক নীতিতে পরিবর্তন আনার ডাক দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিটি শিশুর জন্য বাড়তি খরচ
গত ২৫ বছরে দেখা গেছে যে সিঙ্গেল বা একক মা-বাবার পরিবারের তুলনায় সন্তানহীন দম্পতির অর্থনৈতিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো ছিলো৷ যাদের সংসারে সন্তানের সংখ্যা যত বেশি, তাদের অর্থনেতিক অবস্থা তত খারাপ৷ সন্তানের সংখ্যা যত বাড়বে, পরিস্থিতি ততটাই খারাপ হবে বলে জানান বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশনের প্রধান ইয়র্গ ড্রেগার৷
ছবি: picture-alliance/U. Baumgarten
সরকারি সহায়তার আহ্বান
সরকার থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া সত্ত্বেও সন্তানসহ পরিবারের অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি৷ এই পরিস্থিতিতে জার্মানির এক শিশুকল্যাণ সংগঠন পরিবার কল্যাণের সরকারি কাঠামোয় আমূল সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে৷