ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে জার্মানিতে আসা ধর্মীয় নেতারা জার্মানিতে থাকতে চাইলে জার্মান ভাষা বলার দক্ষতা অর্জন করতে হবে৷ সব ধর্মের ক্ষেত্রেই এই আইন প্রযোজ্য হবে৷
বিজ্ঞাপন
তবে মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত এই খসড়া আইনে বিশেষভাবে ইসলাম ধর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে বুধবার নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘বিদেশি ইমামেরা জার্মান বলতে পারবেন বলে আমরা আশা করি৷’’
জার্মানির বর্তমান শ্রমআইনে দাতব্য কিংবা ধর্মীয় কাজের জন্য ভিসা ইস্যু করতে কোনো শর্ত আরোপ করা নেই৷ খসড়া আইনে এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এটি পাস হলে বিদেশি ধর্মীয় নেতাদের জার্মানিতে আসার এক বছরের মধ্যে পরিবার, কেনাকাটা, কাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জার্মান ভাষায় আলোচনা করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে৷
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ধর্মীয় কারণে নেতারা তাঁদের সম্প্রদায়ে প্রায়সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন৷
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার বলেছেন, সফলভাবে অভিবাসনের জন্য জার্মান ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা অপরিহার্য৷
সবুজ দলের আইনপ্রণেতা ফিলিৎস পোলাট খসড়া আইনের সমালোচনা করেছেন৷ তিনি বলেন, এটি পাস হলে ইমাম স্বল্পতার বিষয়টি আরও বেড়ে যাবে৷
বর্তমানে জার্মানিতে প্রায় দুই হাজার মসজিদ রয়েছে৷ প্রায় ৯০ শতাংশ ইমাম বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন৷
জার্মানির অনেক ক্যাথেলিক ও প্রোটেস্টান্ট গির্জায়ও ইইউর বাইরের যাজকরা কাজ করছেন৷
জেডএইচ/কেএম (ইপিডি, কেএনএ)
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷