জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এভাবেই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে৷ বৃহস্পতিবার থেকে তুর্কি-ইসলামিক ইউনিয়নের রিলিজিয়ন অ্যাফেয়ার্স (দিতিব) জার্মানির ভেতরেই ইমামদের প্রশিক্ষণ চালু করেছে৷
বিজ্ঞাপন
স্বরাষ্ট্র সচিব মার্কুস কেয়ারবার প্রোটেস্টেন্টদের সংবাদ সংস্থা ইপিডিকে বলেন, ‘‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷ এর অংশ হিসেবে দিতিবে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷’’
জার্মানিতে প্রায় ৫০ লাখ মুসলিমের বাস৷ দুই হাজার ৫০০টির মতো মসজিদ আছে৷ এর মধ্যে জার্মানিতে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সংগঠন শুধু দিতিবের সদস্য মসজিদই আছে ৯৬০টি৷
বহুদিন ধরেই মসজিদের ইমামদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছিল জার্মানিতে৷ এখানকার মসজিদগুলোর ৯০ ভাগ ইমাম আসেন বাইরে থেকে৷ বেশিরভাগই তুরস্ক থেকে৷ তারা মসজিদে বক্তৃতা দেন বিদেশি ভাষায়৷ এদের কেউ কেউ আবার জার্মানিতে জন্ম ও বড় হলেও পড়াশোনা করেছেন অন্যদেশে৷
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
সম্প্রতি একজন ইমাম সিরিয়ায় তুরস্কের সেনা হস্তক্ষেপ সফল হবার জন্য দোয়া করেন৷ এতে ইমামদের ওপর বাইরের রাজনৈতিক প্রভাবের বিতর্ক আরো চাঙ্গা হয়৷ বিশেষ করে দিতিবের সঙ্গে তুরস্কের বর্তমান সরকারের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি শুরু থেকেই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে৷ দিতিবের সঙ্গে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় ধর্ম বিষয়ক দপ্তর ‘দিয়ানেত’-এর যোগাযোগ আছে৷ দিয়ানেত সরাসরি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কাছে জবাবদিহি করে৷ তবে দিতিব কর্তৃপক্ষ সবসময় নিজেদের নিরপেক্ষ বলে দাবি করেছে৷
জার্মানির ভেতরে ইমামদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিয়ে এখানকার বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও ইসলামিক সংগঠনগুলো একমত৷ তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তা করার বিষয়ে আপত্তি আছে দিতিব ও মুসলিমদের আরেকটি বড় সংগঠন আইজিএমজি-র৷
সম্প্রতি জার্মানির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের ওজানব্রুক বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছরের একটি কোর্স চালু করেছে৷ এর খরচ দিচ্ছে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এখানে একটি ‘ইমাম কলেজ’ তৈরির পরিকল্পনা আছে৷ এটি হবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান৷ এর তত্ত্বাবধানে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদেরা৷ একইসঙ্গে জার্মানির বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনগুলো এর সঙ্গে জড়িত থাকবে৷ কিন্তু দিতিব ও আইজিএমজি তাতে রাজি হয়নি৷ দিতিব ২০২০ জানুয়ারি থেকে একটি ট্রেনিং কোর্স নিজেরাই চালু করার কথা জানিয়েছিল৷
স্বরাষ্ট্র সচিব কেয়ারবার জানান, জার্মানির সংবিধান অনুযায়ী, ধর্মীয় বিষয়গুলোতে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না৷ তাই এসব কোর্সে কী পড়ানো হবে, তা ধর্মীয় নেতারাই ঠিক করবেন৷
শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপের অনেক দেশেই ইমামদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছে৷ নেদারল্যান্ডে এরই মধ্যে ইসলাম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়েছে৷ সুইডেন ২০১৬ সালে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইমাম প্রশিক্ষণ কোর্স প্রথম চালু করেছে৷ ফ্রান্সের বেশিরভাগ ইমাম আসেন উত্তরপশ্চিম আফ্রিকা ও আরব থেকে৷ ধর্ম ও রাষ্ট্রীয় আইন সেখানেও খুব কড়াকড়িভাবে আলাদা৷