জার্মানিতে ইসলামবিদ্বেষের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা
১৫ মার্চ ২০২৩জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷
জার্মানির এরফুর্টে আহমদিয়া মুসলিমদের একটি মসজিদে মিনার তৈরি হচ্ছে৷ এই কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন এরফুর্ট-রিট এলাকার ডেপুটি মেয়র সুলেমান মালিক৷ ৩৪ বছর বয়সি মালিকের জন্ম পাকিস্তানে৷ তবে ১৮ বছর ধরে জার্মানিতে বাস করছেন৷
মালিক জানান, মিনার তৈরি কাজের জন্য একটি ক্রেন ঠিক করা হয়েছিল৷ কিন্তু ঐ কোম্পানি পরবর্তীতে বর্ণবাদ, ডানপন্থি মৌলবাদ ও ইসলামোফোবিয়ার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় কাজ থেকে সরে গিয়েছিল৷
শেষ পর্যন্ত একটি কোম্পানি কাজ করতে রাজি হয়৷ তবে কেউ নির্মাণকাজের ছবি বা ভিডিও তুলতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছিল৷
মসজিদ এলাকায় শূকরের মরদেহ ছুড়ে মারার মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান মালিক৷ এছাড়া গাড়ি করে নির্মাণকাজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জানালা খুলে চিৎকার করে গালি দেয়া, রাস্তার অপর পাশে ‘ক্যাথলিক প্রার্থনার' নামে ‘বিক্ষোভকারীদের' জড়ো হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে৷
মিনার নির্মাণকাজের প্রতি সমর্থন জানানোয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই উপহাস করা হয়৷
সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা
জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া আছে৷ তবে ‘জার্মান কাউন্সিল অফ এক্সপার্ট অন ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন' এর সবশেষ জরিপে অংশ নেয়া প্রায় ১৫ হাজার উত্তরদাতার এক-তৃতীয়াংশ থেকে শুরু করে অর্ধেক উত্তরদাতা মুসলমানবিরোধী ও ইসলামবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেছে৷
প্রায় প্রতি সপ্তাহে জার্মানির কোথাও না কোথাও মুসজিদে গ্রাফিতি এঁকে দেয়া কিংবা মসজিদের ক্ষতি করার ঘটনা ঘটছে৷ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানির হেসে রাজ্য ৪৩ বছর বয়সি এক শ্বেতাঙ্গ একটি শিশা বার, বার ও কিয়স্কে হামলা চালিয়ে নয়জনকে হত্যা করেছিলেন৷
জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দাসসামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারা ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷
ইয়াজিদি জানান, তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ইহুদিদের দেখাশোনা করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের জন্য জার্মানিতে প্রায় ৩৫ জন কমিশনার আছেন৷ ‘‘কিন্তু কপট যুক্তি দেখিয়ে মুসলমানদের জন্য কমিশনার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না,'' বলে জানান ইয়াজিদি৷ তিনি বলেন, মানুষ স্বীকার করতে চায় না যে সমাজে মুসলিমবিরোধী বর্ণবাদ সমস্যা রয়েছে ‘এবং মুসলমানরা এটি অনুভব করে'৷
অন্যান্য দেশে এমন কর্মকর্তা আছেন৷ যেমন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত জানুয়ারিতে ইসলামবিদ্বেষ ঠেকানোর জন্য প্রথমবারের মতো একজন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৫ সালে মুসলিমবিরোধিতা ঠেকানোর জন্য একজন সমন্বয়কারীর পদ তৈরি করে৷
ক্রিস্টোফ স্ট্রাক/জেডএইচ