জার্মানিভিত্তিক তুর্কি-ইসলামিক সংগঠন ডিটিব-এর বিভিন্ন জঙ্গিবাদবিরোধী এবং শরণার্থীবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জার্মান সরকার৷ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারির ঘটনার কারণে বিপাকে রয়েছে সংগঠনটি৷
বিজ্ঞাপন
সরকার বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে যে, জার্মানির সবচেয়ে বড় ইসলামিক সংগঠন ডিটিব পরিচালিত কোনো প্রকল্পে আর অর্থায়ন করা হবে না৷ চলতি বছরের শুরু থেকেই অবশ্য সংগঠনটির কোনো প্রকল্প অনুমোদন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার৷ এমনকি অতীতে অনুমোদিত আগামী বছরের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নও স্থগিত করা হয়েছে৷
ডিটিব-এর যেসব প্রকল্পে সরকার অর্থায়ন করেছে, সেসবের অধিকাংশই জঙ্গিবাদবিরোধী এবং শরণার্থীবান্ধব৷ ২০১২ সাল থেকে সংগঠনটিকে ছয় মিলিয়ন ইউরোর মতো প্রদান করেছে সরকার৷ জার্মানির পরিবার মন্ত্রণালয় গতবছরই ডিটিব-এর প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে৷
জার্মানিতে আলোচিত যত ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলা
এ পর্যন্ত বেশ কিছু উগ্র ইসলামপন্থি বা জঙ্গিদের হামলা এবং হামলার চেষ্টা হয়েছে জার্মানিতে৷ কয়েকদিন আগে সর্বোচ্চ শাস্তিও হয়েছে এক ব্যক্তির৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানিতে আলোচিত কিছু ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলার কথা৷
ছবি: AP
বন শহরে বোমা বিস্ফোরণের ব্যর্থ চেষ্টা
২০১২ সালে বন শহরের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে তোলা ছবি এটি৷ ছবির ওই নীল ব্যাগে বোমা ছিল৷ এক ডানপন্থি রাজনীতিবিদকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ বোমা রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ৷ হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি এক ব্যাক্তির আজীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে ড্যুসেলডর্ফের আদালত৷ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে আরো তিনজনের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে হামলা
জার্মানিতে প্রথম ‘উগ্র ইসলামপন্থির’ হামলাটি হয়েছিল ২০১১ সালের মার্চে৷ সেবার ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে দুই মার্কিনিকে গুলি করে হত্যা করেছিল আরিদ উকা নামের এক ব্যক্তি৷ নিহত দুই মার্কিন নাগরিকের কয়েক দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে যাওয়ার কথা৷ জানা যায়, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে গুলি করে দু’জন নিরপরাধ মার্কিনিকে হত্যা করে আরিদ৷ কসভোতে জন্ম নেওয়া আরিদেরও আজীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
সাওয়ারল্যান্ড সেল
‘সাওয়ারল্যান্ড সেল’ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে গড়ে ওঠা ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ইউনিয়ন বা আইপিইউ-এর জার্মান শাখা৷ ১০ বছর আগে এই সংগঠনের হয়েই যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল চার জার্মান এবং এক তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণ৷ ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১০ সালে প্রত্যেকের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
নকল পুলিশ
২০১৪ সালে ভুপার্টাল শহরে কমলা রঙের সিকিউরিটি ভেস্ট পরা একদল লোক রাস্তায় নেমে আসে৷ তাদের পোশাকে লেখা ছিল ‘শরিয়া পুলিশ’৷ লোকগুলো বিভিন্ন মানুষকে বার এবং ক্লাব বর্জন করে ইসলামি আইন মেনে চলার পরামর্শ দিতে থাকে৷ ওই লোকগুলোর নেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন স্ভেন লাউ নামের এক সালাফিস্ট মুসলমান৷ পরে আইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ তার বিরুদ্ধে মামলা এখন বিচারাধীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk/M. Becker
বড় বড় কথা বলা সেই আইএস জঙ্গি
২০১৩ সালের অক্টোবরে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এ যোগ দিতে ডিন্সলাকেনের সালাফিস্ট মুসলমান নিলস ডি. সিরিয়ায় যায়৷ এক বছর পর আবার ফিরে আসে জার্মানিতে৷ ফিরে এসে সিরিয়ায় সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে জানায় সগর্বে৷ তারপর গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল
২০১৬ সালের জুলাই মাসে মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন হ্যারি এস. আদালতে বলে ‘‘সিরিয়ায় যাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল৷’’ ব্রেমেনে খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হওয়া তরুণটি তার এক বছর আগেই সিরিয়ায় গিয়ে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সঙ্গে তিন মাস কাটিয়ে এসেছে৷ সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়ার অপরাধে তিন বছরের জেল হয়েছে তার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marks
6 ছবি1 | 6
কোলনভিত্তিক সংগঠনটি জার্মানিতে নয়শ' মসজিদ পরিচালনা করছে, যেগুলো আবার তুরস্কের ধর্মবিষয়ক দপ্তরের সঙ্গেও সম্পৃক্ত৷ এসব মসজিদে ইমাম সরবরাহ করে তুরস্ক৷ দেশটিতে ২০১৬ সালের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের পক্ষে জার্মানিতে কাজ করার অভিযোগ ওঠে ডিটিব-এর বিরুদ্ধে৷ এমনকি কিছু ইমামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও ওঠে যে, তাঁরা এর্দোয়ান সরকারের পক্ষে গুলান মুভমেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্তদের উপর গোয়েন্দাগিরি করেছেন৷
আরেক ঘটনায় তুর্কি ইমামরা সিরিয়ার আফ্রিনে কুর্দদের বিরুদ্ধে তুরস্কের সেনাবাহিনী যাতে জয়লাভ করে সেজন্য প্রার্থনা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে৷ ডিটিব-এর এসব কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের এক মুখপাত্র ক্রিস্টোফ ডি ভ্রাইস বলেন, ‘‘যারা জাতীয়তাবাদের পক্ষে এবং খ্রিষ্টান, ইহুদি ও নাস্তিকদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায় কিংবা তুর্কি সরকারের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করে, তারা ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জার্মানির পাশে থাকতে পারে না৷''
উল্লেখ্য, ডিটিব-এর সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্য সরকারও নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ তবে, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জার্মান রাজ্য ডিটিব-এর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছে৷ এবার, কেন্দ্রীয় সরকারও সংগঠনটির পাশ থেকে সরে দাঁড়ানোয় সংগঠনটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷