সরকার গঠন হতে না হতেই বিতর্কিত মন্তব্য করলেন জার্মানির নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তাঁর কথা শুনে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ইসলামোফোবিয়া ঢুকে পড়েছে জার্মান সরকারের ঘরের ভেতরেও৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে ইসলামি সংস্কৃতির কোনো জায়গা নেই৷ নতুন সরকার গঠন হতে না হতেই এ কথা জানালেন নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার৷ একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জার্মানির সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে খ্রিষ্টান সংস্কার৷ সে কারণেই রবিবার এখানে দোকানপাট বন্ধ থাকে৷ প্রতিটি খ্রিষ্টান পরবের দিন এখানে ছুটি ঘোষণা হয়৷ বস্তুত, জার্মানি খ্রিষ্টানদের সংস্কৃতি অনুসরণ করেই এতদিন ধরে চলছে৷ সেখানে ইসলামের কোনো জায়গা নেই৷ তবে পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেছেন যে, ইসলাম সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলিম নাগরিকদের গুলিয়ে ফেললে চলবে না৷ জার্মানিতে বহু মুসলিম বসবাস করেন৷ তাঁরা জার্মান৷ তাঁরা দেশে স্বাগত৷ কিন্তু তাঁদের ধর্মীয় সংস্কৃতি জার্মান সংস্কৃতি নয়৷
জার্মানিতে শান্তির পক্ষে মুসলমানদের মিছিল
কেউ এসেছেন সিরিয়া যুদ্ধের বিভীষিকার দেয়াল ভেদ করে, কেউ জার্মানিতে বাস করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম৷ মুসলমানদের নামে চলা সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানাতে সবাই কোলনে মিলেছেন এক কাতারে৷ যেখানে সংহতি জানিয়েছেন ভিন্ন ধর্মের মানুষও৷
ছবি: DW/S. Niloy
সিহাম, কোলন
‘‘আমি চাই, এই সন্ত্রাসের অবসান হোক৷ সন্ত্রাসের পথ ভুল পথ৷ উদার মুসলিমদের উচিত এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরো সরব হওয়া৷ এ জন্য তাদেরকে ঘর থেকে বের হতে হবে৷ তাদেরকে বলতে হবে, ওরা যেটা করছে, এটা আমাদের ইসলাম নয়৷ কোরআন এটা বলে না৷ কোরআন শান্তির গ্রন্থ৷ তাই এর অনুসারীদেরকেও শান্তিপূর্ণ থাকতে হবে৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
ইউদানুর কারাকাস, তুর্কি বংশদ্ভূত জার্মান
‘‘সন্ত্রাসের বিষয়ে আমার যে অবস্থান সেটা জানান দিতেই আমি এখানে এসেছি৷ যদিও আমি একজন মুসলিম, কিন্তু জীবন পদ্ধতিতে আমি কঠোরভাবে ইসলাম অনুসরণ করি না৷ তারপরও মুসলিম হিসাবে আমাকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
হাফসা
‘‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলতে আমরা এখানে এসেছি৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
বেইজা
‘‘আমরা সন্ত্রাসের পক্ষে নই৷ যারা সন্ত্রাসের পক্ষে থাকে, ইসলামের নামে সন্ত্রাস করে, আমরা তাদের দলে নই৷ ইসলাম শান্তিপূর্ণ ধর্ম৷ আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই বাস করতে চাই৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
প্রিয়াম শঙ্কর ঘোষ, জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশি
‘‘মুসলমানদের আলাদা করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বলার কিছুই নাই৷ কোনো সন্ত্রাসের জন্য কোন মুসলিমকে দায়ী করারও কোনো কারণ নাই৷ এ কারণে আমি এ ধরনের প্রতিবাদের পক্ষে না৷ মুসলমান হিসেবে এভাবে সমাবেশ করলে অস্ত্রটা তারাই পেয়ে যায়৷ সাময়িকভাবে এটাকে ইতিবাচক মনে হলেও এটা আসলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে৷ দীর্ঘ মেয়াদে ফল পেতে হলে তাদেরকে এটেনশন দেয়া যাবে না৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
মো. বেলাল হোসেন, জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশি
‘‘কোনো একটা সন্ত্রাসী হামলা হলেই দায় চলে আসে মুসলমানদের উপর৷ এভাবে দোষারোপ আমরা চাই না৷ সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নাই৷ তারা কেবলই সন্ত্রাসী৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
হেইদা
‘‘পৃথিবীকে এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে৷ শান্তির জন্য সকলকে একত্রে লড়তে হবে৷ আমি এই ধরনের একটা উদ্যোগের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছি৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনে চলে এসেছি৷ কেনো তাদেরকে দোষারোপ করা হয়৷ আমি তো সব জায়গায় খুবই বন্ধুত্বপূর্ণভাবে মুসলিমদেরকে পেয়েছি৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
আম্মার, জার্মানি প্রবাসী সিরিয়ান
‘‘সিরিয়ার সরকার, আইসিস সবাই সন্ত্রাস করে৷ এদেরকে আলাদা করে দেখার কিছু নাই৷ সিরিয়ার মুসলমানদেরকে কেউ এই দিকে ঠেলে দেয়, কেউ ওই দিকে৷ আমরা এদের কাউকেই পছন্দ করি না৷ আমরা শান্তি চাই৷ আমরা অন্য ধর্মের মানুষকেও পছন্দ করি৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
বিলাল, জার্মানি প্রবাসী সিরিয়ান
‘‘আমরা দেখাতে চাই, ধর্মের সাথে সন্ত্রাসের কোনো সম্পর্ক নেই৷ সন্ত্রাস মানে সন্ত্রাস, সেটা আইসিস করলেও সন্ত্রাস৷ সিরিয়ার সরকার করলেও সন্ত্রাস৷ সব সন্ত্রাসকে না বলতে হবে৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
সামা, ফ্রাঙ্কফুট
‘‘আমরা একটা বার্তা দিতে চাই, আমরা জানাতে চাই যে, আমরা সন্ত্রাসী নই৷ আমরা শান্তি চাই৷ আমরা কোনোভাবেই শান্তি বিরোধী নই৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
ইমান, ফ্রাঙ্কফুট
‘‘আমি একজন মুসলমান হিসেবে জার্মানির বর্তমান পরিবেশ মেনে নিতে পারি না৷ একটা সাধারণীকরণ রয়েছে, তুমি যদি মুসলিম হও, তাহলে অটোমেটিকালি তুমি একজন সন্ত্রাসীও৷ অনেকের মধ্যেই এটা আছে৷ এটার প্রতিবাদ করতেই আমি ফ্রাঙ্কফুট থেকে এখানে এসেছি৷’’
ছবি: DW/S. Niloy
11 ছবি1 | 11
হঠাৎ কেন এ কথা বলতে গেলেন মন্ত্রীমশাই? প্রশ্নটি উঠেছে বহু মহলেই৷ বস্তুত, জোট নিয়ে যখন জলঘোলা হচ্ছিল, তখনই বহু বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, নতুন সরকার তৈরি হলেও তারা অস্তিত্ব সংকটে ভুগবে৷ গত কয়েকবছরে সরকারের অভিবাসন সংক্রান্ত ভাবনা এবং শরণার্থী সংক্রান্ত নীতির ফলে দেশে প্রচুর শরণার্থীর প্রবেশ ঘটেছে৷ এবং সেই সূত্রেই জার্মান জনমনে শরণার্থীদের নিয়ে একপ্রকার দূরত্ব তৈরি হয়েছে৷ ইসলামোফোবিয়াও বেড়েছে কয়েকগুণ৷ যার পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' বা এএফডি-র মতো উগ্র দক্ষিণপন্থি দল৷ কয়েকবছর আগেও যাদের কার্যত কোনো অস্তিত্ব ছিল না, গত নির্বাচনে তারা বিপুল পরিমাণ ভোট পেয়েছে এবং সংসদে বিরোধী দলের আসন গ্রহণ করেছে৷ এমতাবস্থায় জোট সরকারকে প্রতিটি পদক্ষেপই সাবধানে ফেলতে হবে৷ খেয়াল রাখতে হবে জনমত যাতে তাদের দিক থেকে একেবারে সরে না যায়৷ দক্ষিণপন্থি মনোভাব তাদের দেখাতেই হবে৷
ঠিক সে ঘটনাই ঘটছে বাস্তবে৷ বস্তুত, সেহোফার বরাবরই দক্ষিণপন্থি বলে পরিচিত৷ এর আগে ম্যার্কেলের শরণার্থী সংক্রান্ত নীতির বিরোধিতাও করেছেন তিনি৷ ম্যার্কেল বরাবরই বলে এসেছেন, জার্মানিতে সমস্ত ধর্মের মানুষের ঐতিহ্যই রক্ষিত হয়৷ কার্যত তার উলটো সুরই শোনা গেল এবার গৃহমন্ত্রীর গলায়৷
জার্মানির মুসলমানদের সম্পর্কে তরুণরা যা ভাবছেন
জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমানদের নিয়ে আটটি প্রশ্ন করা হয়েছিল আট তরুণ-তরুণীকে৷ তাঁদের উত্তর থেকে বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: DW/J. Chase
নিজেকে কি জার্মান মনে করেন?
জার্মানির বিলেফিল্ডে থাকেন মরোক্কান বংশোদ্ভূত আয়া৷ গত মার্চে বার্লিনে অনুষ্ঠিত হলো ‘ইয়ং ইসলাম কনফারেন্স ২০১৭’৷ তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল – নিজেকে কি জার্মান মনে করেন? জবাবে ১৮ বছর বয়সি এই তরুণী বলেন, ‘‘আমি নিজেকে যতটা মরোক্কান মনে করি, তার চেয়ে বেশি জার্মান মনে করি৷ জার্মান সংস্কৃতির মাঝেই বেড়ে উঠেছি আমি৷ এর (জার্মান সংস্কৃতির) সঙ্গে যোগাযোগ আমার অন্য দেশের (মরক্বো) চেয়ে অনেক বেশি৷’’
ছবি: DW/J. Chase
ইউরোপে কি ইসলামীকরণ চলছে?
২২ বছর বয়সি মার্টিন থাকেন ফ্লেনসবুর্গে৷ ইউরোপে কি ইসলামীকরণ চলছে? – এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, ইউরোপে অনেক সংস্কৃতি এসে মিলছে৷আমার মনে হয়, ইউরোপ এ মুহূর্তে বেদনাদায়ক কিছু শিক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ ব্রেক্সিট এর একটা উদাহরণ৷ কিন্তু তথ্য এবং পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ইউরোপে মোটেই ইসলামীকরণ চলছে না৷ এটা পুরোপুরি বাজে কথা৷’’
ছবি: DW/J. Chase
আপনার কাছে সংহতির মানে কী?
ফলকান বললেন, ‘‘আমার কাছে এর মূল কথা হলো, কোথাও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকা বা না থাকার অনুভূতি৷ শরণার্থীদের অনেককে এমন অনেক প্রশ্নই শুনতে হয় যা থেকে বোঝা যায় যে, আপনি আসলে এ সমাজের বাইরের কেউ৷ ছোটবেলায় এ বিষয়টি আমার খুবই খারাপ লাগত৷ মনে হতো, কোথায় আছি, কী কাজ করছি– এসব ছাপিয়ে সবসময় আমি যেন শুধুই একজন বহিরাগত ’’
ছবি: DW/J. Chase
মুসলিম আর অমুসলিমদের সম্পর্কোন্নয়নে কী কী করা যেতে পারে?
‘ইয়ং ইসলাম কনফারেন্স ২০১৭’-এর সংলাপের শিরোনাম ছিল ‘রিপেয়ারিং ডায়ালগ’৷ হানা-র কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘‘মুসলিম আর অমুসলিমদের সম্পর্ক মেরামতের জন্য কী করা দরকার?’’ হানা বললেন, ‘‘বড় সমস্যা হলো, এখানে একজন আরেকজনের বিষয়ে যত কথা বলে, একজন আরেকজনের সঙ্গে ততটা বলে না৷ আরেকজনের কাছে গিয়েই কিন্তু জানতে চাওয়া যায়, ‘‘তুমি কেন হেডস্কার্ফ পরো?’’ আমরা যেন এভাবে জানার আগ্রহ প্রকাশ করতে শিখিইনি৷’’
ছবি: DW/J. Chase
মুসলমানদের মিডিয়া যেভাবে তুলে ধরে
ডুইসবুর্গের মার্ভ-এর কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যখন নির্দিষ্ট একটা বিষয়ের দিকেই পুরো গুরুত্ব দিয়ে মুসলিমদের তুলে ধরা হয়, তখন খুব খারাপ লাগে৷ ধরা যাক, আমি হেডস্কার্ফ পরেছি৷ এর মানে তো এই নয় যে, আমি খুব গরিব৷ আমার তো এর বাইরেও অনেক কিছু আছে৷ আমি যে ডুইসব্যুর্গের মানুষ হিসেবে গর্বিত সেটাও তো খুব গুরুত্বপূর্ণ৷’’
ছবি: DW/J. Chase
মুসলিমবিরোধী ‘হেটস্পিচ’ বা ভুয়া খবর রুখতে কী করণীয়?
কোলনের ২৫ বছর বয়সি তরুণ আহমেদ মনে করেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হেটস্পিচ বা ভুয়া খবরের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি দরকার সরাসরি কথা বলা৷ এসব নিয়ে আলোচনা করতে আমি সবসময় প্রস্তুত৷ বিশেষ করে ফেসবুকে যে কোনো বিষয়ে মন্তব্য করার সাহস থাকা উচিত৷ তুরস্ক নিয়ে বিতর্কে অংশ নেয়ার জন্য আমি সম্প্রতি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রি-অ্যাক্টিভেট করেছি৷’’
ছবি: DW/J. Chase
শরণার্থীবিরোধী পেগিডা বা এএফডি সম্পর্কে ভাবনা
১৯ বছর বয়সি আয়লিন বললেন, ‘‘এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না৷এসব লোকের সঙ্গে কথা বলার কোনো মানে হয় না৷ কিছু লোক কখনোই মনমানসিকতা বদলাতে চায় না৷ এএফডি মনে করে যে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি ঠিক৷ পেগিডাও তাই মনে করে৷ অথচ তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বড় একটা অংশই কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ তবে আমার মনে হয়, এ মুহূর্তে এসবের একটা হুজুগ চলছে, একসময় সবার শুভবু্দ্ধির উদয় হবে৷’’
ছবি: DW/J. Chase
ইসলাম কি জার্মানির অংশ?
পল বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই৷ জার্মানি এমন এক ভৌগোলিক এলাকা, যেখানে একটিই সমাজের বসবাস এবং একটি সমাজই ক্রিয়াশীল৷ এখানে বসবাসরত প্রত্যেকটি গ্রুপই জার্মানির অংশ৷ জার্মানিতে বাস করলে আমি জার্মানিরই অংশ এবং আমার নিজেকে ‘জার্মান’ বলার অধিকারও আছে৷ সেক্ষেত্রে আমার তো মনে হয় কারো জার্মান ভাষায় কথা বলারও দরকার নেই৷’’
ছবি: DW/J. Chase
8 ছবি1 | 8
এবং সরকারের তরফ থেকে এখনো পর্যন্ত তাঁর বক্তব্যের কোনো সমালোচনা করে কোনো বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি৷ মনে করা হচ্ছে, কার্যক্ষেত্রেও সাবধানী পদক্ষেপ করবে নতুন সরকার৷ শরণার্থী প্রসঙ্গে এবং আশ্রয়প্রার্থীদের দেশে ফেরানোর বিষয়ে যথেষ্টই কঠিন পদক্ষেপ করা হবে৷
এদিকে এরমধ্যেই একটি নতুন সমীক্ষা প্রকাশ করেছে ব্রস্ট ফাউন্ডেশন৷ তাদের রিপোর্টেও স্পষ্ট, জার্মানিতে গত দু'বছরে ইসলামোফোবিয়া চোখে পড়ার মতো বেড়েছে৷ উদাহরণ দিতে গিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ তুর্কি এসে বসবাস করতে শুরু করেন৷ মূলত কারখানায় কাজের জন্যই তাঁরা আসতে শুরু করেছিলেন৷ এছাড়াও আশপাশের মিসলিম রাষ্ট্রগুলি থেকেও বহু মানুষ সে সময় জার্মানিতে এসেছেন৷ কখনোই তাংদের নিয়ে জার্মান নাগরিকের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি৷ কিন্তু গত দু'বছরে বিশ্বাসহিনতা অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে৷ অধিকাংশ জার্মান ইদানীং বলতে শুরু করেছেন মুসলিমদের সঙ্গে একত্রে থাকা সম্ভব নয়৷ যদিও উলটো মতও আছে৷ কিন্তু সে সংখ্যাটা ক্রমশ কমছে৷ পাশাপাশি এএফডি-র মতো দলগুলির সমর্থক বাড়ছে৷ সব মিলিয়ে খুব সুখকর পরিস্থিতিতে নেই জার্মানি৷
ধর্মবিশ্বাস, ধর্মান্তর এবং ধর্মের স্বাধীনতা
ডেভিড স্ট্যাং খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন৷ তবে তিনি সালাফিস্টদের উগ্রতা এড়িয়ে চলেন৷ জার্মানিতে অনেকেই মনে করেন, মানবাধিকারগুলোর মধ্যে ধর্মের স্বাধীনতাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷এসব নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৌতূহল
ডেভিড স্ট্যাংয়ের কৈশোর থেকেই ধর্মের প্রতি বেশ অনুরাগ৷ নিয়মিত গির্জায় যেতেন, বাইবেল পড়তেন৷ তখন সবকিছু বুঝতে পারতেন না৷ অনেক প্রশ্ন জাগতো৷ কিন্তু উত্তর জানা হতো না৷ এখনো মনে আছে, দম্পতিদের নিয়ে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, কিন্তু গির্জার পাদ্রী সে প্রশ্নের উত্তর তাঁকে বলেননি৷
ছবি: DW/K. Dahmann
হতাশা এবং মুসলমান হওয়া
একসময় ক্যাথলিক চার্চ, অর্থাৎ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের গির্জা সম্পর্কে কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়লেন ডেভিড স্ট্যাং৷ অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করলেন৷ এক মুসলিম আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হলো৷ তিনি বললেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো৷’’ তাঁর কথা মেনে একসময় সত্যিই মুসলমান হয়েছেন এবং সেই সুবাদে সবকিছুর নতুন মানেও খুঁজে পেয়েছেন স্ট্যাং৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্ম চর্চার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
ডেভিড স্ট্যাং মনে করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মানে হলো, নতুন করে অনেক কিছু শেখা৷ তিনি জানতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে মদ্যপান করা এবং শূকরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ রাখতে হবে দাড়ি৷ যিনি তাঁকে মুসলমান হতে বলেছিলেন, তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, মুসলিম হওয়ার অনুভূতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রক্রিয়াটাও অত্যন্ত দীর্ঘ৷
ছবি: DW/K. Dahmann
বিশ্বাসে আপোশ
কাজের সূত্রে ডেভিড স্ট্যাংকে প্রতিদিন হানোফার-বন যাওয়া-আসা করতে হতো৷ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সব সময় হয়ে উঠতো না৷ তাই সকাল আর সন্ধ্যার নামাজের সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করেন, জীবনের সঙ্গে বিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটানোটাই আসল৷
ছবি: DW/K. Dahmann
উগ্রতা পরিহার
২০১২ সালে উগ্র সালাফিস্টদের সহিংসতা দেখেছেন ডেভিড৷ তারা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যুক্ত দেখায়, তা মানতে পারেননি তিনি৷ সন্ত্রাসবাদীদের মতো ভয় দেখাতে তারা গলার কাছে বোমাও ঠেকায়৷ সালাফিস্ট সম্পর্কে তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমি এমন কিছুর সঙ্গে থাকতে চাইনা৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাথলিক চার্চ ছাড়লেন উটে
উটে লাস-এর জন্ম ক্যাথলিক পরিবারে৷ ধর্মতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছিলেন৷ কিন্তু ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে কিছু সমস্যাও যে হবে তা তিনি বুঝতেন৷ উটে বুঝতেন, ‘‘ক্যাথলিক থাকলে ধর্মতাত্ত্বিক হয়েও তেমন কিছু করতে পারবো না৷’’ এ সব ভেবে চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন উটে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
অন্তর্দ্বন্দ্ব...
উটের স্বামী প্রটেস্ট্যান্ট হলেন৷ ফলে এবার প্রটেস্ট্যান্টদের গির্জায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন উটে৷ তাঁর ছেলেটা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতো৷ ওরও চার্চে যাওয়ার ইচ্ছা৷ কয়্যারে যোগ দিতে চায় সে৷ এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন উটে৷ নারী যাজক আনেগ্রেট কোহেন (বাঁ দিকে) এবং নিনা গুটমান (মাঝে) উটের এ সব অন্তর্দ্বন্দ্ব সমাধানে সহায়তা করেছিলেন৷
ছবি: DW/K. Dahmann
সহনশীলতা
ব্যাপারটিকে উটের বন্ধুরাও খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন৷ বন্ধুদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে দীক্ষা নিয়ে চার্চে যাওয়া শুরু করলেন উটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গির্জায় ভিড় কমছে
কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে লোকজনের গির্জায় যাওয়ার প্রবণতা কমছে৷ গির্জার সদস্য বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ বন শহরের ক্যাথলিক তথ্যকেন্দ্র ফিডেস-এ ধর্মের বিষয়ে সবাইকে আগ্রহী করে তোলার কাজটি করেন যাজক টোমাস ব্যার্নার্ড (ডানে)৷
ছবি: DW/K. Dahmann
কারণ কেলেঙ্কারি?
গির্জায় আর আগের মতো বেশি মানুষ আসছে না কেন? অনেকে মনে করেন, সাম্প্রতিক কালে পাদ্রিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর খবর এক্ষেত্রে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে৷ যাজক টোমাস ব্যার্নার্ডও এ সম্পর্কে কিছুটা একমত৷ তিনি মনে করেন, এসব খবর বেশি প্রচার করে মিডিয়া বেশ ক্ষতি করেছে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্মের স্বাধীনতা
ধর্মান্তরিত হয়েছেন, এমন অনেকেই মিউনিখ শহরের একটা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রদর্শনীতে মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের স্বাধীনতার কথাও প্রচার করা হয়৷