জার্মান সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেওয়া আছে৷ কিন্তু খ্রিষ্টীয় বা ইহুদি সম্প্রদায়গুলি যে ধরনের প্রশাসনিক স্বীকৃতি পেয়েছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে তা পাওয়া দুষ্কর৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ‘গ্রুন্ডগেজেট্স' বা ‘বুনিয়াদি আইন'-এর চার নম্বর সূত্র বলছে, ‘‘ধর্মের স্বাধীনতা, বিবেকের স্বাধীনতা এবং নিজের ধর্মীয় বা দার্শনিক বিশ্বাস ব্যক্ত করার অধিকার অলঙ্ঘনীয়৷''
অবাধ ধর্মাচরণের স্বাধীনতারও গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে৷ সংবিধানের তিন নম্বর সূত্র অনুযায়ী ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মীয় মতামতের কারণে কারো বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা চলবে না৷
সংবিধানে গ্যারান্টিকৃত অন্যান্য বুনিয়াদি অধিকারের মতোই ধর্মীয় স্বাধীনতার সীমা হলো, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা মানবমর্যাদা বা অপরের বুনিয়াদি অধিকার লঙ্ঘন করে; অথবা যখন মুক্ত গণতন্ত্রের হানি ঘটানোর জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার অপব্যবহার করা হয়৷
বিভিন্ন ধর্মে উত্তরাধিকার আইন
কারো সম্পত্তির উত্তরাধিকার কে হবেন, বা তা ভাগাভাগিই হবে কীভাবে, এ সব বিষয় এখনো একেবারেই পারিবারিক পরিমন্ডলেই বিচার হয়৷ তাই এর জন্য রয়েছে পারিবারিক আইন৷ তবে এই আইন একেক ধর্মের জন্য একেকরকম৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
উত্তরাধিকার আইন
কোনো নারী বা পুরুষের মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে মৃতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের খরচ, দেনাশোধ বা মৃতব্যক্তি যদি কোন উইল সম্পাদন করে যান তবে তা হস্তান্তরের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে তার উপর মৃতের সন্তান সন্তানাদি ও আত্মীয় স্বজনের যে অধিকার জন্মায়, তাকে উত্তরাধিকার বলে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
বিভিন্ন ধর্মে উত্তরাধিকার আইন
বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর, এমনকি আদিবাসীদেরও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধি-বিধান আছে৷ যেমন, মুসলিমদের জন্য আইনটি কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী তৈরি৷ আবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আইন আলাদা৷ সময়ে সময়ে কিছু কিছু আইন সংস্কারও করা হয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে তিন শ্রেণির উত্তরাধিকার আছে৷ যেমন : অংশীদার, অবশিষ্টাংশ ভোগী, দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ৷ অংশীদারগণ সব উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অগ্রাধিকার পান৷ অংশীদারদের মধ্যে স্ত্রী অন্যতম৷ পিতা, মাতা, ছেলে, মেয়ে, স্বামী ও স্ত্রী – এঁরা কেউই উত্তরাধিকার সম্পত্তি হতে বাদ যান না৷ পুত্র, কন্যা, স্বামী, স্ত্রী কিংবা অন্য অংশীদাররা কে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন তা নির্ধারিত করা আছে৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন
এখানে দুই ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু আছে – মিতক্ষরা ও দায়ভাগ পদ্ধতি৷ বাংলাদেশে দায়ভাগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়৷ এ আইন অনুযায়ী, যারা পিণ্ডদানের অধিকারী, তারাই যোগ্য উত্তরাধিকারী৷ পিণ্ডদানের অধিকারীদের তালিকায় থাকা ৫৩ জনের মধ্য পুত্র, পুত্রের পুত্র, পুত্রের পুত্রের পুত্র, স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রীর পরে কন্যা আসেন৷ এই আইনের সংস্কারের দাবি বহুদিনের৷
ছবি: DW/M. Mamun
খ্রিষ্টান উত্তরাধিকার আইন
আমাদের দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় সাকসেশন অ্যাক্ট ১৯২৫-এর মাধ্যমে৷ কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে একই মর্যাদার অধিকারী, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তারা সমান অংশ লাভ করে৷ তবে মৃত ব্যক্তি যদি সম্পত্তি অন্য কারো নামে উইল করে যান, তাহলে সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে না৷
ছবি: imago/Xinhua
বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইন
বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী হিন্দু আইন অনুযায়ী তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Mia
নৃ-গোষ্ঠীদের উত্তরাধিকার আইন
বেশিরভাগ নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রথা অনুযায়ী নারীদের পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পদের মালিকানায় উত্তরাধিকারের কোনো পদ্ধতি নেই৷ এ কারণে এ নারীরা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী পাস হওয়ার পরও নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা আদৌ কোনো সুফল পাবেন কিনা, তা নিয়ে তাদের মাঝে সংশয় আছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com
7 ছবি1 | 7
ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়, ঐ সম্প্রদায়কে ‘পাবলিক ল কর্পোরেশন' বা পিএলসি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কিনা – জার্মানি দু'টি মুখ্য খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায়, ক্যাথলিক গির্জা ও প্রটেস্টান্ট গির্জার যে স্বীকৃতি আছে৷ এর ফলে রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট গির্জাটির হয়ে ঐ গির্জার সদস্যদের কাছ থেকে ‘গির্জা কর' সংগ্রহ করে থাকে৷ কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠিত একটি দেশব্যাপী কাঠামো না থাকার ফলে জার্মানিতে ইসলামধর্ম বা মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে পিএলসি-র মর্যাদা পাওয়া সমস্যাকর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ব্যক্তিগত ও সম্প্রদায় ভিত্তিক ধর্মীয় স্বাধীনতা
জার্মানিতে রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন থাকলেও, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে সহযোগিতা সম্ভব ও প্রথাগতভাবে বর্তমান৷ জার্মান জনজীবনে প্রটেস্টান্ট ও রোমান ক্যাথলিক, এই দু'টি প্রধান গির্জার প্রভাব সর্বত্র৷
ব্যক্তিগত ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে জার্মান আইনের যে বিশেষত্বটি লক্ষণীয়, সেটি হলো এই যে, কোনো ধর্মবিশ্বাস না থাকা, অথবা আদালতের নির্দেশ ব্যতিরেকে তা ঘোষণা করতে না চাওয়া – যেমন শিক্ষা বা কর্মস্থলে অন্য কোনো ধর্মের প্রতীক, রীতিনীতি বা আচার-আচরণের সম্মুখীন না হতে চাওয়াটাও ব্যক্তিগত ধর্মীয় স্বাধীনতার এই ‘নেতিবাচক' দিকটির অঙ্গ৷ এক্ষেত্রে মনে করা যেতে পারে, ১৯৭৩ সালে এক ইহুদি একটি জার্মান আদালতে সাক্ষ্য দিতে চাননি, কেননা বিচারকক্ষে একটি ক্রুশ ঝুলছিল: তাঁর আপত্তিকে মান্য করা হয়৷ এর ২২ বছর পরে ১৯৯৫ সালে জার্মান সাংবিধানিক আদালত একটি রায় দেন, যা অনুযায়ী রোমান ক্যাথলিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া বাদবাকি মুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রুশের মতো ধর্মীয় প্রতীক প্রদর্শন করাটা বেআইনি বলে বিবেচনা করা হয়৷ সেযাবৎ বিশেষ করে মুসলিম শিক্ষিকাদের সরকারি স্কুলে হিজাব পরিধান ও সাধারণভাবে মুসলিম মহিলাদের প্রকাশ্য স্থানে বোরকা পরিধান নিয়ে বারংবার বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়া ও বিতর্কের অবতারণা ঘটেছে৷
মুসলিমরা ইউরোপীয় সমাজে কতটা অন্তর্ভুক্ত?
ইউরোপ জুড়ে দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট আন্দোলনদের সাফল্য থেকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ইসলাম পশ্চিমি গণতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খায় কিনা৷ এ বিষয়ে কিছু ভুল ধারণার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/Godong/Robert Harding
ভাষাগত অন্তর্ভুক্তি
জার্মানিতে জন্ম এমন মুসলিমদের তিন-চতুর্থাংশের প্রথম ভাষা হলো জার্মান৷ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যে ভাষাগত দক্ষতা বাড়তে থাকে, তা ইউরোপের অন্যত্রও পরিলক্ষিত হয়েছে৷ জার্মানিতে মুসলিমদের ৪৬ শতাংশ বলেন যে, জার্মান তাঁদের প্রথম ভাষা৷ সে অনুপাতে অস্ট্রিয়ায় ৩৭ শতাংশ ও সুইজারল্যান্ডে ৩৪ শতাংশ মুসলিম স্থানীয় ভাষাকে তাঁদের নিজের ভাষা বলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্তঃ-ধর্ম সম্পর্কের প্রতি মুসলিমদের মনোভাব
‘রিলিজিয়াস মনিটর’ সংস্থার ২০১৭ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, সুইস মুসলিমদের ৮৭ শতাংশ তাঁদের অবসর সময়ে অমুসলিমদের সঙ্গে নিয়মিত দেখাশোনা করে থাকেন৷ জার্মানি ও ফ্রান্সের ক্ষেত্রে তা ৭৮ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৬৮ শতাংশ ও অস্ট্রিয়াতে ৬২ শতাংশ৷ সব সামাজিক বাধা সত্ত্বেও প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে এই যোগাযোগ চলে আসছে৷
ছবি: imago/Westend61
মুসলিমরা কি ইউরোপের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন?
ফরাসি মুসলিমদের ৯৬ শতাংশ তাঁদের দেশ, অর্থাৎ ফ্রান্সের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন৷ জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে এই অনুপাত আরো বেশি, সেখানে মুসলিমদের ৯৮ শতাংশ যে দেশে তাঁরা বাস করেন, সেই দেশের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত বলে মনে করেন৷ ব্রিটেনে কিন্তু মুসলিমদের একটি অপেক্ষাকৃত কম অংশ (৮৯ শতাংশ) যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সংযোগ অনুভব করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
ইউরোপীয় মুসলিমদের জীবনে ধর্ম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অভিবাসী মুসলিম পরিবারগুলোর স্বধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে অটুট থাকে৷ যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মুসলিমদের ৬৪ শতাংশ নিজেদের খুব বেশিভাবে ধর্মপরায়ণ বলে বর্ণনা করেছেন৷ অস্ট্রিয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলিমের অনুপাত ৪২ শতাংশ, জার্মানিতে ৩৯ শতাংশ, ফ্রান্সে ৩৩ শতাংশ ও সুইজারল্যান্ডে ২৬ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Dean
কি পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী ডিগ্রির জন্য পড়েন?
জরিপ অনুযায়ী, জার্মানিতে জন্ম নেয়া মুসলিমদের ৩৬ শতাংশ ১৮ বছরে পা দেবার আগেই পড়াশুনা সমাপ্ত করেন৷ অস্ট্রিয়ার ক্ষেত্রে এই অনুপাত ৩৯ শতাংশ৷ ফ্রান্সে শিক্ষাব্যবস্থা অধিকতর সমতামূলক হওয়ার কারণে সেখানে মুসলিমরা শিক্ষাক্ষেত্রে লক্ষণীয় প্রগতি অর্জন করেন৷ ফ্রান্সে প্রতি ১০ জন মুসলিম ছাত্রছাত্রীর মধ্যে মাত্র একজন ১৭ বছর হবার আগে স্কুল ছাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
চাকরির বাজারে মুসলিমদের অনুপাত
২০১০ সলের আগে যেসব মুসলিম জার্মানিতে এসেছেন, তাঁদের প্রায় ৬০ শতাংশের আজ ফুলটাইম চাকরি আছে; আরো ২০ শতাংশ পার্টটাইম কাজ করছেন৷ অমুসলিমদের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান অনুরূপ৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশে পার্থক্য অনেক বেশি, যেমন ফ্রান্সে মুসলিমদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৪ শতাংশ, কিন্তু অমুসলিমদের ক্ষেত্রে মাত্র ৮ শতাংশ৷
ছবি: picture alliance/dpa/U.Baumgarten
ইসলামকে প্রত্যাখ্যান কতটা বিস্তৃত?
অস্ট্রিয়ায় চারজন অমুসলিমের মধ্যে একজন বা তার বেশি কোনো মুসলিম প্রতিবেশি চান না৷ যুক্তরাজ্যে এই হার ২১ শতাংশ৷ জার্মানিতে অমুসলিম উত্তরদাতাদের ১৯ শতাংশ বলেছেন যে, তাঁরা কোনো মুসলিম প্রতিবেশি কামনা করেন না৷ সুইজারল্যান্ডে এই অনুপাত হলো ১৭ শতাংশ ও ফ্রান্সে ১৪ শতাংশ৷ সব মিলিয়ে মুসলিমরা সর্বাধিক প্রত্যাখ্যাত সামাজিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে গণ্য৷
ছবি: AP
‘সমাজে অন্তর্ভুক্ত কিন্তু স্বীকৃত নয়’
ব্যার্টেল্সমান নিধির যে জরিপটি থেকে এই ছবিঘরের তথ্যগুলি নেওয়া হয়েছে, সেটির নাম ‘ইউরোপীয় মুসলিম: সমাজে অন্তর্ভুক্ত কিন্তু স্বীকৃত নয়?’ জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে প্রায় ১০,০০০ মানুষকে নিয়ে জরিপ করে এই সব ফলাফল পাওয়া গেছে৷ যেসব মুসলিম উদ্বাস্তু ২০১০ সালের পরে ইউরোপে এসেছেন, তাদের এই জরিপে বিবেচনা করা হয়নি৷
8 ছবি1 | 8
অপরদিকে জার্মানিতে হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য যৌনশিক্ষা অথবা বিবর্তনবাদের ক্লাসে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক, ধর্মীয় কারণে তা থেকে রেহাই পাবার কোনো উপায় নেই৷ ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো অভিভাবকদের পক্ষে বাধ্যতামূলক – ধর্মীয় কারণে তাদের বাড়িতে রেখে পড়াশুনো করানো আইনগতভাবে অবৈধ৷
জার্মানিতে ইসলামের আইনগত পরিস্থিতি
ইসলাম জার্মানিতে ‘এন্টিটি আন্ডার পাবলিক ল', অর্থাৎ সার্বজনিক আইন দ্বারা স্বীকৃত ধর্মীয় গোষ্ঠী নয়৷ এক্ষেত্রে মূল বাধা হলো জার্মানিতে ইসলামের বিভিন্ন ধারার অনুগামীদের উপস্থিতি: সুন্নি, শিয়া, আলাওয়াইট, আহমদি, সুফি, ইবাদি ও অপরাপর নানা সম্প্রদায়ের মুসলিম এখানে বাস করেন৷
দ্বিতীয়ত, জার্মানিতে মুসলিমদের মাত্র ২০ শতাংশ কিংবা তার কিছু বেশি বিভিন্ন মুসলিম সমিতি ও তথাকথিত ‘আমব্রেলা' বা গোষ্ঠী সংগঠনগুলির সদস্য৷ জাতি ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে সৃষ্ট এই সব সমিতির ভিত্তি হলো সমিতি গঠন সংক্রান্ত আইন, যদিও তারা জার্মান সংবিধানের সাত নম্বর সূত্রের তৃতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘ধর্মীয় সমাজ' হিসেবে স্বীকৃতি পেতে, এমনকি পিএলসি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সচেষ্ট৷ আবার ঠিক ঐ বৈচিত্র্যের কারণেই রাষ্ট্র – অর্থাৎ ফেডারাল বা রাজ্য সরকারসমূহ ইসলামকে পিএলসি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি নন৷ অপরদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলেছেন, খ্রিষ্টীয় গির্জাগুলির সঙ্গে রাষ্ট্রের বোঝাপড়া হিসেবে সৃষ্ট ‘রাষ্ট্র-গির্জা-আইন' আজকের জার্মানিতে সমসাময়িক কিনা৷ যে ধরনের কেন্দ্রীয় সংগঠন ও নিয়মিত, নথিবদ্ধ সদস্যতা থেকে একটি বা একাধিক কেন্দ্রীয় ইসলাম সংগঠন সৃষ্টি হতে পারে, যাদের সঙ্গে সরকার আলাপ-আলোচনা চালাতে পারবেন, যেমন শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে চালিয়ে থাকেন – মুসলিমদের সে ধরনের সংঘবদ্ধতা বা সংগঠন জার্মানির ক্ষেত্রে অলীক৷ কিন্তু তা বলে জার্মানিতে যে ৪৪ থেকে ৪৭ লাখ মুসলিমের বাস – সর্বাধুনিক জনসংখ্যাগত জরিপ যা বলছে – দীর্ঘমেয়াদি সূত্রে তাদের সমষ্টিগত দাবিদাওয়াকে বিবেচনা করার কোনো না কোনো পন্থা উদ্ভাবন করা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠতে পারে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷