সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ইহুদিবিদ্বেষ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সন্ধ্যায় জার্মানির বিভিন্ন শহরে সমাবেশ হয়েছে৷ বার্লিনের সমাবেশে মুসলমানসহ দুই হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে বার্লিনে ইহুদিদের বিশেষ টুপি ‘কিপা' পরিহিত ইসরায়েলের (ইহুদি নয়) এক তরুণের উপর তিন আরবিভাষী হামলা চালায়৷ ঐ ঘটনার ভিডিও অনলাইনে প্রকাশের পর জার্মানিজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে৷
এর আগে স্কুলগুলোতে ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের শিকার হওয়ার কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিল৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় ইহুদি পরিষদের প্রধান ইওসেফ শুস্টার বড় শহরগুলোতে ইহুদিদের কিপা না পরার পরামর্শ দিয়েছিলেন৷ বুধবার বার্লিনের সমাবেশে তিনি তাঁর এই বক্তব্য আরেকটু স্পষ্ট করে বলেন, আসলে তিনি সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে একা কিপা পরে না যাওয়ার কথা বলেছেন৷ তাঁর বক্তব্যে তিনি ইহুদি মা-বাবাদের তাঁদের সন্তানদের দেয়া সাম্প্রতিক পরামর্শের কথাও উল্লেখ করেন৷ ঐ মা-বাবারা তাঁদের সন্তানদের বেসবলের টুপির নীচে কিপা লুকিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন৷ ‘‘২০১৮ সালে এটিই জার্মানির বাস্তবতা,'' বলেন শুস্টার৷
ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি জেফারসন চেজ ঐ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন৷
বার্লিন ছাড়াও কোলন ও অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ জার্মানির কেন্দ্রীয় মুসলিম পরিষদ ও তুর্কি গোষ্ঠীগুলো এই সমাবেশের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷ তুর্কি সম্প্রদায়ের প্রধান গোকায় সোফুগলু বার্লিনের এক পত্রিকাকে বলেছেন, ‘‘আপনি যদি ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাহলে আপনি ইহুদিবিদ্বেষও সহ্য করতে পারেন না৷ আর আমরা জানি অতীতে জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল৷''
জার্মানির দৈনিক ‘টাগেসস্পিগেল' সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গতবছর জার্মানিতে দিনে গড়ে চারটি ইহুদিবিদ্বেষ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ ২০১৬ সালেও সংখ্যাটি প্রায় সেরকমই ছিল৷ মোট ১,৪৫২টি অপরাধের মধ্যে ১,৩৭৭টির জন্য উগ্র ডানপন্থিরা দায়ী ছিল৷
অবশ্য ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের চেয়ে জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা এখনও কম বলে জানিয়েছেন বার্লিনের ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতা গিডেওন ইওফে৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে বার্লিনে এমন ঘটনা বেড়ে তা ‘অস্বস্তিকর' পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে বলে জানান তিনি৷
ইহুদিবিদ্বেষ ঠেকাতে জার্মানিতে একজন ইহুদিবিদ্বেষ বিষয়ক কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ সাবেক কূটনীতিক ফেলিক্স ক্লাইন আগামী মাস থেকে এই দায়িত্ব পালন শুরু করবেন৷ বার্লিনে বুধবারের সমাবেশে তিনি উপস্থিত ছিলেন৷ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি সব ধরনের ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেন৷
যেভাবে চরমে উঠল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
গাজাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘ দিনের৷ তবে এবছর কয়েকটি বিশেষ ঘটনার ফলে উত্তেজনা চরমে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
সীমান্তে বোমাবাজি
গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি সীমান্তে একটি বোমা বিস্ফোরণে চারজন ইসরায়েলি সৈন্য আহত হন৷ প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিভিন্ন লক্ষ্যের উপর বিমান হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
জাতিসংঘের সাহায্য
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ) গাজা স্ট্রিপের অর্ধেক মানুষের মুখ্য সরবরাহের উৎস৷ ২৫শে ফেব্রুয়ারি তারিখে সংস্থাটি সাবধান করে দেয় যে, গাজায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে৷ কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউএনআরডাব্লিউএ-র জন্য অর্থসাহায্য বন্ধ করেছে৷ সংস্থাটি পরে জানায় যে, অন্তত জুলাই মাস অবধি গাজায় সরবরাহ চালু থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Jarar'Ah
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী আক্রান্ত
১৩ই মার্চ ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহর গাড়ির বহর গাজায় আক্রান্ত হয়৷ পশ্চিম জর্ডানের ফাতাহ গোষ্ঠীর রাজনীতিক হামদাল্লাহ সচরাচর গাজা সফর করেন না৷ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ঐ আক্রমণের জন্য হামাসকেই দায়ী করেছেন, কেননা হামাস হামদাল্লাহর পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ অপরদিকে হামাসের দাবি যে, ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ও সম্প্রীতির হানি ঘটানোর জন্যই ঐ আক্রমণ চালানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
ইসরায়েলি বিমান হানা
১৮ই মার্চ গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণের ফলে কেউ আহত না হলেও, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বিমান হানা চালিয়ে হামাসের একটি সুড়ঙ্গ প্রণালী ধ্বংস করে৷ পরবর্তী কয়েক দিনে বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি সীমান্তের ক্ষতিগ্রস্ত কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
সীমান্ত বিক্ষোভের ঘোষণা
গাজা স্ট্রিপের ফিলিস্তিনিরা ঘোষণা করে যে, ইসরায়েল অধিকৃত এলাকাগুলিতে প্রত্যাবর্তনের অধিকারের দাবির সমর্থনে সীমান্তে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আয়োজন করা হবে৷ ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তনের দাবি মেনে নিতে রাজি নয়৷
ইসরায়েল কর্তৃক ভূমি দখলের বিরুদ্ধে ১৯৭৬ সালে আরব প্রতিবাদের স্মরণে ৩০শে মার্চ তারিখটিকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷ এবছর ভূমি দিবসের পদযাত্রায় প্রায় ৩০,০০০ ফিলিস্তিনি অংশগ্রহণ করেন৷ কিছু বিক্ষোভকারী সীমান্তের বেড়া পার হবার চেষ্টা করেন ও ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে ১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও অনেকে আহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hams
সীমান্তে প্রতিবাদের দ্বিতীয় পর্ব
৬ই এপ্রিল সীমান্তে বিভিন্ন প্রতিবাদ ও সংঘর্ষে একজন সাংবাদিক ও ন’জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
‘আমরা ওদের ওপর আঘাত হানবো’
৯ই এপ্রিল তারিখে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সীমান্তের কাছে অবস্থিত স্ডেরট শহরে ঘোষণা করেন, ‘‘আমাদের একটি সহজ-সরল নীতি আছে, যা আমরা বারংবার জ্ঞাপন করার চেষ্টা করি৷ যদি কেউ তোমাকে আক্রমণ করে, তাহলে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে আক্রমণ করো৷ আমরা ওদের এই গাজা সীমান্তে আমাদের ওপর আঘাত হানতে দেবো না; বরং আমরা ওদের ওপর আঘাত হানবো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/G. Tibbon
সীমান্তে বিক্ষোভের তৃতীয় পর্যায়
১৩ই এপ্রিল তারিখে উদ্যোক্তারা সীমান্তের কাছে বিক্ষোভরত জনতাকে ইসরায়েলের পতাকার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে বলেন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া
১৩ই এপ্রিল সীমান্তের কাছে আহত এক তরুণকে সাহায্য করার জন্য ছুটে এসেছেন তাঁর সঙ্গীরা৷ ৩০শে মার্চ প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন ও শত শত আহত হয়েছেন৷