ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ জার্মানিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে৷ ইসরায়েল-বিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অনেক ক্ষেত্রে ইহুদি বিদ্বেষের রূপ নেওয়ায় জার্মানিতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল ও গাজায় অশান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অনেক প্রান্তে মানুষ পথে নেমে ক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷ অনেক বিক্ষোভে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে৷ কিন্তু ঐতিহাসিক কারণে জার্মানিতে এমন বিক্ষোভ অত্যন্ত স্পর্শকাতর৷ রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল এবং সে দেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে৷ তবে সেই প্রতিবাদ সামগ্রিকভাবে ইহুদি বিদ্বেষে রূপ নিলে জার্মানির পুরানো ক্ষত আবার বেরিয়ে আসে৷ নাৎসি আমলের ইহুদি নিধন যজ্ঞের কলঙ্কের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রকে কড়া অবস্থান নিতে হয়৷
ইসরায়েল-বিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জের ধরে জার্মানিতে ইহুদি উপাসনালয় ও স্থাপনার উপর হামলার ঘটনা বাড়ছে৷ অদূর ভবিষ্যতে এমন আররও অপ্রিয় ঘটনার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানিতে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের একাংশ ছাড়াও চরম বামপন্থি এবং চরম দক্ষিণপন্থিরা এমন বেপরোয়া অপরাধের ঘটনায় জড়িয়ে পড়তে পারে৷ বুধবার তিনটি শহরে ১২ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ জার্মানি ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বর্ষপূর্তি হিসেবে বুধবার অনেক শহরে ইসরায়েলি পতাকা শোভা পাচ্ছিল৷ সেই পতাকা নষ্ট করার বেশ কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে৷
জার্মানির কেন্দ্রীয় ইহুদি সংগঠন বৃহস্পতিবার সিনাগগের সামনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে৷ পশ্চিমে গেলজেনকিয়ের্শেন শহরে সিনাগগের সামনে ফিলিস্তিনি ও তুর্কি পতাকা নিয়ে অনেক মানুষকে ইহুদি-বিদ্বেষী বুলি আওড়াতে শোনা গেছে৷ সেই ভিডিও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ইহুদি সংগঠন মনে করিয়ে দিয়েছে, রাজপথের মাঝে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিষাদগার অনেককাল আগেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল৷ এমন মনোভাবকে ইহুদি-বিদ্বেষ ছাড়া অন্য কিছুই বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছে ইহুদি সংগঠন৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস জার্মানিতে সিনিগগের উপর হামলার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স' বা আপোশহীন মনোভাবের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন৷ মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলির জন্য রাজপথ ও সোশাল মিডিয়ায় জার্মানিতে বসবাসরত ইহুদিদের দায়ী করা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ সবাই মিলে সেটা স্পষ্ট করে দিতে হবে, বলেন মাস৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারও কড়া ভাষায় ইহুদি-বিদ্বেষের সমালোচনা করেছেন৷ বৃহস্পতিবার থেকেই জার্মানির সিনাগগগুলির নিরাপত্তা আরো কড়া করা হয়েছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
জার্মানিতে ইহুদিদের ১৭০০ বছরের ইতিহাসের গল্প
জার্মানিতে ইহুদিদের ১৭০০ বছরের ইতিহাস দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Jüdisches Museum Berlin
প্রাচীন বাতি
প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন চতুর্থ শতকের এই অয়েল ল্যাম্প৷ইহুদিবাদের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতীকটি পাওয়া গিয়েছিল জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ট্রিয়ারে৷দেখে মনে হয় এটি হয়ত উত্তর আফ্রিকার শহর কার্থেজে তৈরি৷
ছবি: Rheinisches Landesmuseum Trier
কানের দুল
মধ্যযুগে জার্মানির রাইনলান্ড অঞ্চলের স্বর্ণকারদের বিশেষ সুখ্যাতি ছিল৷কিছু ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই শিল্পে ইহুদি এবং খ্রিস্টান স্বর্ণকারদের দক্ষতার সাক্ষ্য দেয়৷ছবির এই কানের দুলটি ২০১১ সালে কোলন শহরে পাওয়া যায়৷
ছবি: MiQua. LVR-Jüdisches Museum Köln
মোজেস মেন্ডেলসনের চশমা
ইহুদি দার্শনিক মোজেস মেন্ডেলসনের ব্যবহার করা চশমা এটি৷১৮ শতকে তিনি জ্ঞানের জগতে আলো ছড়িয়েছিলেন, খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের মাঝে এক সংলাপেও ভূমিকা রেখেছিলেন৷তার বন্ধু গঠোল্ড এফ্রাইম লেসিং ‘নাথান দ্য ওয়াইজ’ নাটকে মেন্ডেলসনের দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷
ছবি: Jüdisches Museum Berlin
হাইনরিশ হাইনের স্মৃতিচিহ্ন
লেখক হাইনরিশ হাইনের জন্ম ইহুদি পরিবারে৷ তবে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে খ্রিষ্টান হয়ে যান৷ধর্মান্তরিত হওয়া যে ভুল ছিল তা নিজেই পরে স্বীকার করেছেন৷একবার দুঃখ করে লিখেছিলেন, ‘‘ইহুদি এবং খ্রিষ্টানরা আমাকে সমানভাবে ঘৃণা করে৷ খ্রিষ্টান হওয়ার জন্য আমি অনুতপ্ত৷’’ ওই একটি সিদ্ধান্তের জন্য ইসরায়েলে এখনো হাইনরিশ হাইন এক বিতর্কিত নাম৷
ছবি: Heinrich Heine Institut in Düsseldorf
ইহুদি বীর সেনা
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে যে এক লাখ ইহুদি অংশ নিয়েছিলেন, নাবিক মাক্স হালার তাদের একজন৷১৯১৫ সালে স্বপ্রণোদিত হয়ে সাবমেরিন বহরে যোগ দেন৷সেখানে নাবিক হিসেবে অনন্য ভূমিকার জন্য ‘আয়রন ক্রস’ পুরস্কার দেয়া হয় তাকে৷ প্রথম যুদ্ধের পর ব্যবসা শুরু করেন হালার৷ নাৎসি বাহিনী ইহুদিদের বর্জন করলে নিজের দোকানের জানালায় বীরত্বের জন্য পাওয়া পুরস্কারগুলো সাজিয়ে রাখেন৷ফলে তার দোকানে নাজিদের হামলা হয়নি৷
ছবি: Jüdisches Museum Berlin
মপেড
পূর্ব জার্মানিতে এই মপেড পরিচিত ছিল সায়মন শলবে বা সায়মন সোয়ালো নামে৷ইহুদি পরিবারে জন্ম নেয়া সায়মন এ ধরনের বাহন তৈরির কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৫৬ সালে৷নাৎসিরা এই কোম্পানি বাজেয়াপ্ত করায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সায়মন৷
ছবি: AKF Fahrzeugteile GmbH/Janos Bayer
ভার্চুয়াল প্রদর্শনী
‘শেয়ার্ড প্রোজেক্ট’-এর ওয়েবসাইটে শুরু হয়েছে ইহুদিদের এমন ৫৮টি প্রাচীন স্মৃতিচিহ্নের প্রদর্শনী৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে প্রতি সপ্তাহে একটি করে নতুন সামগ্রী দেখানো হবে৷প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ভাবন, পেইন্টিং, স্টাম্বলিং ব্লক থেকে শুরু করে হলোকস্টের শিকার ইহুদিদের নানা রকমের স্মৃতিচিহ্নও থাকবে সেখানে৷