ইহুদিদের ছুটির দিনে পূর্ব জার্মারির হালে শহরের সিনাগগে এক নব্য-নাৎসির এলোপাতাড়ি গুলি থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন উপাসকরা৷ ডয়চে ভেলের এডিটর-ইন-চিফ ইনেস পোল মনে করেন, ইহুদিবিদ্বেষকে ছোট করে দেখা একেবারেই উচিত নয়৷
বিজ্ঞাপন
ইহুদিদের ইয়ম কিপুর ছুটিতে ৭০ জনেরও বেশি নারী ও পুরুষ প্রার্থনা করে, গান গেয়ে দিনটি উদযাপন করতে পূর্ব জার্মানির এক সিনাগগে সমবেত হয়েছিলেন৷ উপাসনালয়ের নিরাপত্তা-দরজাই হ্যান্ড গ্রেনেড ও ব়্যাপিড ফায়ার রাইফেল নিয়ে আসা এক জার্মানের রক্তবন্যা বইয়ে দেয়ার চেষ্টা রুখে দিলো৷
ঘটনাটি ২০১৯ সালের নয় অক্টোবরের,অর্থাৎ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ৮০ বছর পর, যে যুদ্ধে ৬০ লাখেরও বেশি ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল৷ সিনাগগে গিয়ে প্রকাশ্যে উপাসনা করতে এখন নিশ্চয়ই ইহুদিদের আবার ভয় করবে৷
ভিডিওগেমের প্ল্যাটফর্মে প্রচার
এই বিষয়টি জার্মানি সম্পর্কে কী বার্তা দেয়? এমন ঘটনার দৃশ্য হেলমেটে লাগানো ক্যামেরায় ধারণ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিওগেম প্ল্যাটফর্মে প্রচার করা হয়, কিছু মানুষ তা আবার দেখেন — এ থেকে কী বোঝা যায়? ক্রাইস্টচার্চের হামলাকারীর মতো এখানকার লোকটিও হামলা শুরুর আগে তা প্রচার শুরু করে আর সারা বিশ্বের দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলে, ‘‘সব সমস্যার মূলে ইহুদিরা৷''
ক্ষয়ক্ষতির তুল্যমূল্য বিচার হয় না এবং কখনোই তা করা যাবে না৷ সুতরাং, খুনি যে নারী এবং যে পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাঁদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা৷
তবে মূল জায়গা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাখলে চলবে না৷ ভুলে গেলে চলবে না যে, একটু এদিক-সেদিক হলে বুধবার জার্মানিতে সবচেয়ে বড় মাত্রার ইহুদি নারী-পুরুষ-হত্যার ঘটনা দেখতে হতো আমাদের৷
শুধু ইসলামিস্টদের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়
এ ঘটনা একটি বিষয় আবার পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলো যে, ইহুদিবিদ্বেষ শুধু মুসলিম সন্ত্রাসীদের মাঝেই বাড়ছে না৷ এখনো যারা এমন কথা বলবেন, তারা মিথ্যা বলবেন এবং তারা নিশ্চয়ই বাস্তবতাকে এড়িয়ে যেতে চান৷ এ ঘটনায় নাৎসি আমল শেষ হওয়ার প্রায় ৭৫ বছর পরও যে জার্মানিতে ইহুদিদের প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা দেয়া খুব দরকার, তা-ও বোঝা গেল৷ ইয়ম কিপুরের মতো ছুটির দিনেও সিনাগগে নিরাপত্তা জোরদার না করায় প্রশ্নটি আরো বড় হয়ে দেখা দিয়েছে৷
জার্মানিতে ইহুদি উপাসনালয়ে যত হামলা
জার্মানির হালে শহরে বুধবার ইহুদিদের একটি উপাসনালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছে৷ তবে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন এক জার্মান আততায়ী৷ ছবিঘরে কয়েকটি সিনাগগে হামলার ঘটনা তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago Images/S. Schellhorn
কোলন, ১৯৫৯: স্বস্তিকা ও হেট স্পিচ
১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে ‘ডয়চে রাইশপার্টাই’ নামের একটি চরম ডানপন্থি দলের সদস্যরা কোলনের সিনাগগে স্বস্তিকা এঁকে দিয়েছিল৷ এছাড়া ‘জার্মানদের দাবি: ইহুদিরা চলে যাও’ শব্দগুলোও লিখে দেয় তারা৷ এরপর জার্মানির বিভিন্ন এলাকায়ও ইহুদিবিরোধী গ্রাফিতির দেখা পাওয়া গিয়েছিল৷ ঐ ঘটনায় জড়িতদের ধরা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন ‘মানুষের উসকানিমূলক’ কিছু করতে না পারে সেজন্য সংসদে আইন পাস হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/Joko
ল্যুবেক, ১৯৯৪: অগ্নিসংযোগ
মার্চ মাসের এই ঘটনা সারা বিশ্বের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল৷ চরম ডানপন্থি চার ব্যক্তি ল্যুবেকের সিনাগগে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল৷ এই ঘটনার এক বছর পর আবারও একই সিনাগগে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
এসেন, ২০০০: পাথর ছোড়া
লেবানন থেকে আসা ১০০-র বেশি ফিলিস্তিনি ২০০০ সালের অক্টোবরে এসেন শহরের পুরনো সিনাগগে পাথর ছুড়ে মেরেছিল৷ ‘মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত’-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শেষে এই হামলা করা হয়৷ এই ঘটনায় একজন পুলিশ আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/B. Boensch
ড্যুসেলডর্ফ, ২০০০: অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপ
ইহুদি ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নিতে ১৯ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিন ও ২০ বছর বয়সি মরক্কোর এক নাগরিক আগুন ও পাথর দিয়ে ড্যুসেলডর্ফের নতুন সিনাগগে হামলা করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
মাইনৎস, ২০১০: মলটফ ককটেল হামলা
১৯৩৮ সালে নাৎসি বাহিনী মাইনৎসের একটি সিনাগগ পুড়িয়ে দিয়েছিল৷ সেখানে নতুন করে একটি সিনাগগ নির্মাণ করা হয়৷ তবে উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরই সেখানে মলটফ ককটেল হামলা চালানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg/Bildarchiv Steffens
ভুপার্টাল, ২০১৪: অগ্নিসংযোগ
ফিলিস্তিনি তিন তরুণ ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ভুপার্টালের সিনাগগের প্রবেশ দরজায় দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মেরেছিল৷ তবে এই ঘটনায় ইহুদিবিদ্বেষের পক্ষে ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে আদালত রায় দিয়েছিলেন৷ জার্মানির ইহুদি ও বিদেশি গণমাধ্যম এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
বার্লিন, ২০১৯: ছুরি নিয়ে হামলা
অক্টোবরের ৪ তারিখ শাবাতের পূর্বে বার্লিনের নতুন সিনাগগে স্থাপন করা একটি বেড়ায় ছুড়ি নিয়ে উঠে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধরে ফেলেন৷ পরে ছেড়েও দেন৷ ইহুদি নেতারা পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে বিচারব্যবস্থার ‘ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Avers
হালে, ২০১৯: গুলি
ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষ্যে ৯ অক্টোবর সিনাগগে উপস্থিত হয়েছিলেন ৭০-৮০ জন মানুষ৷ অস্ত্র নিয়ে সেই সিনাগগে ঢোকার চেষ্টা করেছিল ২৭ বছর বয়সি জার্মান আতাতয়ী৷ তবে নিরাপত্তারক্ষীদের বাধার মুখে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে রেগে গিয়ে গুলি করে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন তিনি৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার জানিয়েছেন, ইহুদি-বিদ্বেষের কারণেই তিনি হামলা চালিয়েছেন৷
ছবি: Imago Images/S. Schellhorn
8 ছবি1 | 8
এই (হামলার) অপরাধ প্রমাণ করল যে, ইহুদি-বিদ্বেষের খুব ছোট কোনো ইঙ্গিতকেও গুরুত্ব দেয়া দরকার, তারও তদন্ত হওয়া দরকার৷ইসরায়েলের পতাকা পোড়ানো কিংবা ইয়ামুলকে (কিপা) পরে ধর্মবিশ্বাস প্রকাশ করায় কাউকে অপদস্থ করা— কোনো ঘটনাকেই ছোট করে দেখা যাবে না৷
ইহুদিবিদ্বেষকে ছোট করে দেখা উচিত হবে না৷ একটু ইহুদিবিদ্বেষী বলে আসলে কিছু হয় না৷ কোথাও হয় নাা, বিশেষ করে জার্মানিতে তো নয়ই৷