জার্মানির বিভিন্ন শহরে উগ্র ডানপন্থা এবং অভিবাসনবিরোধী রাজনৈতিক দল এএফডির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সপ্তাহান্তে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। রোববারেও একাধিক শহরে হয়েছে গণবিক্ষোভ।
বিজ্ঞাপন
জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রতিবাদীদের। রোববার বার্লিন থেকে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, "এই মানুষগুলো আমাদের সকলকে সাহস জোগায়। তারা আমাদের গণতন্ত্রকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করছে। তারা আমাদের সংবিধান রক্ষা করছে। তারা মানবতাকে রক্ষা করছেন।"
আজ কাতারে কাতারে মানুষ আবার জার্মানির রাস্তায় নেমেছেন৷ রোববার জার্মানির উগ্র ডানপন্থি দল এএফডির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থি নাগরিকেরা জোরালো সমাবেশ করেন। বার্লিন, কোলন, ড্রেসডেন, লাইপজিশ এবং বন সহ একাধিক জায়গায় রোববারেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
এআরডি জানিয়েছে, মিউনিখের পুলিশ বলেছিলো, ২৫ হাজার পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ভিড়ের কারণে একটা সময় পর বিক্ষোভ সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হয় বলে পুলিশের মুখপাত্র বার্তাসংস্থা ডিপিএকে জানিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, আনুমানিক ৮০ হাজার অংশগ্রহণকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি বলে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় দুই লাখ মানুষ মিউনিখের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। কোলনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিলে পা মিলিয়েছেন।
বার্লিনে সপ্তাহান্তে সক্রিয় প্রতিবাদদেখা গিয়েছে। প্রায় তিন লাখ বিক্ষোভকারী ইতিমধ্যেই শনিবার সারা দেশের শহরগুলিতে জড়ো হন। গণণাধ্যম এআরডি জানায়, বিক্ষোভকারীরা "নাৎসি আউট" এর মতো পোস্টার নিয়ে এসেছিলেন।
বাভারিয়ার দক্ষিণ থেকে উত্তর সর্বত্র বিক্ষোভ হয়েছে। হামবুর্গ শহর এবং পশ্চিমের শহরগুলি যেমন ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে এরফুর্ট পর্যন্ত, পূর্বে সালেতেও (যেখানে এএফডি প্রায় ৩০% সমর্থন পেয়েছে।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী) বিক্ষোভ হয়েছে। রোববারেও এই জায়গাগুলোয় জনসমাবেশ হতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছিলো।
এমনকি নর্থ সির সিল্ট, যা রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত নয়, সেখানেও প্রায় ৬০০ জন অতিডানপন্থিদের বিরুদ্ধে সপ্তাহান্তের বিক্ষোভ অংশ নেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সপ্তাহান্তে চরম ঠান্ডা আবহাওয়া সত্ত্বেও হামবুর্গ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, হানোফার, কাসেল, ডর্টমুন্ড, ভুপারটাল, কার্লশ্রুহে, নুরেমবার্গ, এরফুর্ট এবং অন্যান্য জার্মান শহরে সবমিলিয়ে শনিবারে আনুমানিক তিন লাখ মানুষ জড়ো হন। তাদের হাতের পোস্টারে লেখা ছিল "ফ্যাসিবাদ বিকল্প নয়।"
সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যা থেকে জানা গিয়েছে এএফডি সদস্যরা নভেম্বরে উগ্রডানপন্থিদের একটি সভায় যোগ দেন। পটসডামের মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীরা আলোচনা করেছেন। আশ্রয়প্রার্থী এবং অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, এমনকি সমাজে যথেষ্ট একীভূত হননি, এমন কারো জার্মান পাসপোর্ট থাকলেও তাদের প্রত্যাবাসন করা হতে পারে বলে আলোচনায় উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানী আউটলেট কারেকটিভের প্রতিবেদন ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়। ফলে জার্মানিতে একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যেখানে মানুষ আতঙ্কিত৷
সাম্প্রতিককালে পূর্ব জার্মানির তিনটি নির্বাচনে ভোটের সংখ্যা বেড়েছে এএফডির।
জার্মান রাজ্যগুলোতে চলতি বছরের শেষের দিকে আঞ্চলিক নির্বাচন হওয়ার কথা৷ এরই মাঝে পটসডামের বৈঠকে উগ্র ডানপন্থিরা "রিমাইগ্রেশন" শব্দটিব্যবহার করেছে বলে খবর। এটি অভিবাসী এবং সংখ্যালঘুদের বহিষ্কার করা বোঝাতে অতিডানপন্থিরা ব্যবহার করে থাকেন।
জার্মান ডানপন্থি গোষ্ঠী ভের্টে ইউনিয়ন (ভ্যালুজ ইউনিয়ন) শনিবার জানিয়েছে তারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করতে চায়, আগের স্থিতিশীল দলের এটাও একটা অংশ হবে।
কট্টর-ডানপন্থি দল এএফডির উত্থানে উদ্বেগ বাড়ছে জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ অভিবাসনবিরোধী দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিও উঠেছে বিভিন্ন শহরের প্রতিবাদ, বিক্ষোভে৷
ছবি: Michael Kuenne/ZUMAPRESS/picture alliance
কোলনে ৩০ হাজার মানুষ
মঙ্গলবার কোলন শহরে এএফডি-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হন৷ টানা পাঁচদিন ধরে জার্মানির বিভিন্ন শহরে চলছে এই প্রতিবাদ৷
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
‘ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রীদের জোট’
কোলন শহরে জড়ো হওয়ারা বিভিন্ন বার্তা নিয়ে হাজির হন৷ একজন প্ল্যাকার্ডে ‘ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে সব গণতন্ত্রীদের জোট’ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ নানা ইস্যুতে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা হ্রাস আর ডানপন্থি দলের সমর্থন বাড়ায় কেউ কেউ লিখে এনেছেন, ‘বর্ণবাদীরা বিকল্প হতে পারে না৷’
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
চ্যান্সেলরের সমর্থন
কোলনের এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও৷ তিনি বিক্ষোভকারীদের উৎসাহ ও সাহস জোগাতে বার্তা দিয়েছেন৷ দেবেন ই বা না কেন? এএফডির উত্থানে যে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্ষমতাসীনেরা৷
ছবি: Marc John/IMAGO
‘নাৎসিদের সরকারে নয়’
একইদিনে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ এসেনে অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি বা এএফডি দলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন৷ ‘নাৎসিদের সরকারে নয়’, ‘ধূসর নয়, রঙিনকে বেছে নিন’, এমন স্লোগান দেন তারা৷
ছবি: David Young/dpa/picture alliance
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লাইপসিশ
এএফডি ছাড়াও উগ্র-রক্ষণশীল দল ভ্যালুস ইউনিয়ন নামের আরেকটি দলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন পূর্বের শহর লাইপসিশের মানুষ৷ মোবাইলে আলো জ্বালিয়ে শহরের ফেডারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্টের সামনে জড়ো হন তারা৷ ‘ফ্যাসিবাদ আর কখনো নয়’, ‘এএফডিকে না’, ‘এএফডি নাৎসি দল’, এমন স্লোগান দেন তারা৷ সোমবার এই বিক্ষোভে পাঁচ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
ছবি: Jan Woitas/dpa/picture alliance
গ্য়োটিঙেনে মুখোমুখি
শনিবার গ্য়োটিঙেনে বিক্ষোভ করেছেন উগ্র ডানপন্থার পক্ষ ও বিপক্ষের মানুষ৷ ডানপন্থাবিরোধী জোট নামে একটি পক্ষ পুলিশের বাধার সামনে রাস্তায় বসে পড়েন (ছবিতে)৷ একই সময়ে ডানপন্থি ১০টি সংগঠনের সদস্যরা লোয়ার স্যাক্সনির শহরটিতে পাল্টা প্রতিবাদ করেছেন৷
ছবি: Swen Pförtner/dpa/picture alliance
বার্লিনে ঐক্যের ডাক
তার আগে রোববার বার্লিনে প্রতিবাদে শামিল হন ২৫ হাজার মানুষ৷ ফ্রাইডে ফর ফিউচারসহ বিভিন্ন এনজিও ও আন্দোলনকর্মীরা এতে অংশ নেন৷ কট্টর ডানপন্থার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের মূল্যবোধের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ঐক্যের ডাক দেন তারা৷
ছবি: Rainer Keuenhof/picture alliance
প্রতিবাদে সরকারও
এএফডির কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তায় আছে সরকারও৷ একদিকে তাদের জনপ্রিয়তা কমছে, অন্যদিকে ডানপন্থিদের বাড়ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব রক্ষায় জোট সরকারের তিন দলের নেতারাও ডানপন্থা ঠেকানোর দাবিতে মানুষের সাথে শামিল হয়েছেন৷ রোববার পটসডামে এসপিডির নেতা জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস, গ্রিন পার্টির নেত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকও বিক্ষোভে অংশ নেন।
ছবি: Sebastian Gollnow/dpa/picture alliance
যে কারণে ক্ষোভ
অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম কারেকটিভ জানিয়েছে, সম্প্রতি পটসডামে এএফডিসহ উগ্র ডানপন্থি দলগুলো একটি বৈঠক করে৷ নির্বাচনে জয়লাভের পর ‘রিমাইগ্রেশন’ বা জার্মানিতে আসা অভিবাসীদের কীভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়- সেই কৌশল নিয়ে তারা আলোচনা করে৷ এই বৈঠকে জার্মান পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে কারেক্টিভ৷ এমন পরিস্থিতিতে এএফডিকে নিষিদ্ধ করার দাবি আবারো জোরালো হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷