জার্মানিতে উগ্র ডানপন্থি দলের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ
২৭ জানুয়ারি ২০২৫
জার্মানির বিভিন্ন শহরে শনিবার রাজপথে নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ৷ উগ্র ডানপন্থি এএফডি দলের নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর দিনে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন তারা৷
কট্টর-ডানপন্থি এএফডি এবং ডানপন্থি চরমপন্থার বিরুদ্ধে বার্লিনে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
উগ্র ডানপন্থি চরমপন্থা এবং অভিবাসীবিরোধী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-র বিরুদ্ধে সপ্তাহান্তে রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন বেশ কয়েক হাজার মানুষ৷
বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটে বিক্ষোভকারীদেরকে হুইসেল বাজাতে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গান গাইতে দেখা গেছে৷ অন্যদিকে কোলনে এএফডির নিন্দা করে ব্যানার প্রদর্শন করেছেন প্রতিবাদকারীরা৷
ফ্যাসিবাদ বিরোধী এই বিক্ষোভ এমন এক সময়ে আয়োজন করা হলো যখন হালে শহর থেকে এএফডি নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছে৷ সেখানে একটি সমাবেশকেন্দ্রে সাড়ে চার হাজারের মতো এএফডি সমর্থক জড়ো হন৷ তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন এএফডির চ্যান্সেলর প্রার্থী আলিস ভাইডেল৷
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে আলোচনায় অভিবাসন
ভাইডেল তার বক্তব্যের শুরুতে অভিবাসন ইস্যু নিয়ে কথা বলেন৷ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পর নির্বাচনি প্রচারণায় এই বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে দলটি৷
বাভারিয়ার অ্যাসচাফেনবুর্গ শহরে বুধবার এক ছুরি হামলায় দুই বছরের এক শিশু এবং এক নারী প্রাণ হারান৷ বিতাড়নের অপেক্ষায় থাকা এক আফগান ব্যক্তি এই হামলায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷
এএফডির নির্বাচনি ইশতেহারে আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদেরকে দ্রুত বিতাড়নের বিষয়টি রয়েছে৷ দলটির এরকম বিভিন্ন ধারনার বিপুল সমালোচনা রয়েছে৷
দ্বিতীয় অবস্থান দেখে প্রফুল্ল এএফডি
পোল ট্র্যাকারের হালনাগাদ পূর্বাভাস বলছে, এএফডির প্রতি ২০% ভোটারের সমর্থন রয়েছে৷ অর্থাৎ তাদের অবস্থান দ্বিতীয়৷ ৩১% সমর্থন নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ এবং এটির বাভারিয়া অংশ খ্রিষ্টীয় সামাজিক দল সিএসইউ৷
অন্যদিকে, বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি ১৫% সমর্থন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷
এএফডির নির্বাচনি প্রচারণায় শনিবার ভিডিও লিংকের মাধ্যমে যুক্ত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা এবং ধনকুবের ইলন মাস্ক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এএফডিকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত৷ আমি মনে করি আপনারা জার্মানির জন্য সত্যিই সেরা আশা৷''
জার্মান হওয়া নিয়ে ‘‘গর্ব করা'' ঠিক আছে বলেও মনে করেন তিনি৷
উগ্র-ডানপন্থিদের মাঝে অভিবাসী জীবন
09:25
This browser does not support the video element.
মাস্ক বলেন, ‘‘খোলাখুলিভাবে বললে অতীত অপরাধবোধের দিকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ আমাদেরকে এটা পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে৷ শিশুদের তাদের বাবামা বা প্রপিতামহের পাপের দায় নেয়া উচিত নয়৷''
ভাইডেল তার বক্তব্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন এবং ট্রাম্পের নির্বাচনি স্লোগানের সঙ্গে মিলিয়ে বলেছেন: ‘‘মেইক জার্মানি গ্রেট এগেইন৷''
হালেতে ভাইডেলের অনুষ্ঠানস্থলের কাছেও প্রতিবাদ করেছেন অনেক মানুষ৷ ইউরোপের দেশটির বিভিন্ন শহরে বেশ কয়েক হাজার মানুষকে উগ্রপন্থার বিপরীতে অবস্থান নিতে দেখা গেছে৷
কোলনে প্রতিবাদ বিক্ষোভে বিশ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ যদিও আয়োজকরা ধারণা করেছিলেন পাঁচ থেকে দশ হাজার মানুষ জড়ো হতে পারেন৷
তবে বড় সমাগম হলেও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি বলেও জানিয়েছেন পুলিশের মুখপাত্র৷
২০২৫-এর নির্বাচনে জার্মানির চ্যান্সেলর প্রার্থী যারা
২০২৫-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগের আগাম নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করছে৷ ছবিঘরে দেখে নেয়া যাক কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর প্রার্থী।
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
ওলাফ শলৎস, এসপিডি
বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এবারও চ্যান্সেলর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের ৬৬ বছর বয়সি চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শলৎসের নিজের একটি আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অতীতে হামবুর্গ শহরের মেয়র, দেশের শ্রমমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শলৎসের জনপ্রিয়তা এখন অবশ্য বেশ পড়তির দিকে।
ছবি: Annegret Hilse/REUTERS
ফ্রিডরিশ ম্যারৎস, সিডিইউ
রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটদের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ফ্রিডরিশ ম্যারৎসের জন্ম ১৯৫৫ সালে। আইনজীবী ম্যারৎস বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা ব্ল্যাকরক-এ কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।
ছবি: Ruffer/Caro/picture alliance
রবার্ট হাবেক, গ্রিন পার্টি
৫৫ বছর বয়সি রবার্ট হাবেক গ্রিন পার্টি চ্যান্সেলর প্রার্থী। তার সবচেয়ে বড় গুণ নিজের ভুল স্বীকার করতে পিছপা হন না। রবার্ট হাবেক-ই প্রথম বর্তমান জোট সরকারের ব্যর্থতা ও জোটের শরিকদের মধ্যে মতবিরোধ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন। রাজনীতির বাইরে হাবেক একজন লেখক, অনুবাদক ও দার্শনিক।
ছবি: appeler/dpa/picture alliance
আলিস ভাইডেল, এএফডি
অর্থনীতিতে পিএইচডি করা আলিস ভাইডেলের জন্ম ১৯৭৯ সালে৷ উগ্র ডানপন্থি দল এএফডির কো-চেয়ারম্যান পড়ালেখা ও চাকরি করেছেন চীনে। অভিবাসনবিরোধী প্রচারণার কারণে আলিস ভাইডেল ইতিমধ্যে বেশ আলোচিত-সমালোচিত। শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত এক নারী তার ‘সিভিল পার্টনার’৷ বছরের বেশির ভাগ সময় সেই নারীর সঙ্গে সুইজারল্যান্ডে থাকেন আলিস। দুটি শিশু দত্তক নিয়েছেন তারা।
আলিস ভাইডেলের মতো জার্মানির বর্তমান অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারের জন্মও ১৯৭৯ সালে। মন্ত্রীসভা থেকে তাকে বহিষ্কার করার মাধ্যমেই ভেঙে পড়ে জোট সরকার। ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার পড়াশোনা করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে৷ একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ সংস্থার মালিক লিন্ডনার জার্মান বিমান বাহিনীর একজন রিজার্ভ সদস্যও। ৩৪ বছর বয়সে নিওলিবারেল রাজনৈতিক দল ফ্রি ডেমোক্র্যাট (এফডিপি)-র চেয়ারম্যান হন তিনি।
ছবি: Hannes P Albert/dpa/picture alliance
জাহরা ভাগেন্কনেখট, বেএসভে
রাজনৈতিক টকশোর পরিচিত মুখ, সাবেক বাম রাজনীতিবিদ জাহরা ভাগেন্কনেখট বর্তমানে পপুলিস্ট মতাদর্শের প্রচারক। রক্ষণশীল সামাজিক নীতি, বাম ধারার অনুপ্রাণিত অর্থনৈতিক নীতি ও অভিবাসন বিরোধিতার কারণে তিনি বেশ পরিচিত। জারাহ জলবায়ু পরিবর্তন ও ন্যাটোর বিষয়েও কঠোর।
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
ইয়ান ফান আকেন, লেফট পার্টি
পশ্চিম জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করা ইয়ান জীববিজ্ঞানে পিএইচডি৷ ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কাজ করেছেন জাতিসংঘের বায়োলজিক্যাল উইপন্স পরিদর্শক হিসেবে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত জার্মান সংসদে বামদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ইয়ান। চলতি বছর অক্টোবরে জার্মান বাম দলের কো-চেয়ার নির্বাচিত হয়েছেন ৬৩ বছর বয়সি ইয়ান।