1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে উৎসব-সমাবেশে নিরাপত্তা

১১ অক্টোবর ২০১৬

জার্মানরা সুসংগঠিত, কাজেই এদেশে কার্নিভাল বা বড়দিনের বাজার, গানের জলসা বা অক্টোবরফেস্ট, সব কিছুই চলে ঘড়ি কাঁটার মতো৷ আগে পরিকল্পনা, মাঝে নিরাপত্তা, শেষে ঝাড়া-মোছা৷ তবে অঘটন যে ঘটে না, এমন নয়৷

Deutschland Unglück bei der Loveparade in Duisburg
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Wiffers

ইউরোপের দেশগুলির মধ্যেও জার্মানি নজর কাড়ে, তা সে পশ্চিম ইউরোপেই হোক আর পূর্ব ইউরোপেই হোক৷ তার একটি কারণ, জার্মানরা কোয়ালিটি বা মানের ক্ষেত্রে আপোশ বোঝে না৷ বিশ্বের বাজারে কোনো উন্নততর পণ্য থাকতে জার্মানরা তার চেয়ে কম মানের কোনো পণ্য ব্যবহার করবে, এ যেন হতেই পারে না – বিশেষ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেরা পণ্যটি যখন জার্মানিতেই তৈরি, ‘মেড ইন জার্মানি'৷

দ্বিতীয়ত, জার্মানিতে ভাগ্য, ভবিতব্য, কাকতালীয় বলে কিছু নেই – যদি কিছু ঘটে, তবে তা নিশ্চয় কারো দোষে৷ সেই ব্যক্তি বা বস্তুটির খোঁজ না পাওয়া অবধি এদেশে কারো শান্তি নেই, নিস্তারও নেই – কেননা বীমাসংস্থারা অপেক্ষা করছে, কার অ্যাকাউন্ট থেকে তারা কাকে ক্ষতিপূরণ দেবে৷ এর বেশি বলার দরকার নেই: এ থেকেই বুঝতে পারবেন যে, জার্মানিতে উৎসব বা সভা-সমাবেশে সাধারণত বড় রকমের কোনো বিভ্রাট ঘটার কোনো সম্ভাবনা থাকে না৷ যে কারণে ২০১০ সালে ডুইসবুর্গের লাভ প্যারেড বিপর্যয়ের ধাক্কা আজও জার্মানরা সামলে উঠতে পারেননি৷

লাভ প্যারেড বিপর্যয়, ২০১০

এই জনপ্রিয় ফেস্টিভাল তথা শোভাযাত্রার সূচনা আশির দশকের শেষে, বার্লিনে৷ সেখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে লাভ প্যারেডকে জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমে নর্থ রাইন পশ্চিম ফালিয়াতে আসতে হয় মূলত একটি কারণে: শোভাযাত্রার পরের দিন বার্লিনের রাস্তা থেকে দর্শক ও লাভ প্যারেড মোদীদের ফেলে যাওয়া আবর্জনা সরানোর খরচ দেবে কে?

এইভাবেই ডুইসবুর্গের বিপর্যয়ের সূচনা৷ এই প্রথম খোলা রাস্তায় না হয়ে, ইলেকট্রনিক ড্যান্স মিউজিক ফেস্টিভালটির আয়োজন করা হয়েছিল একটি সাবেক রেলওয়ে সাইডিং-এ৷ জায়গাটা ঘেরা; সেখানে ধরে প্রায় আড়াই লাখ দর্শক, উদ্যোক্তাদের সেটা জানা ছিল, যেমন তাদের জানা ছিল যে, দশ লাখের বেশি মানুষ আসবে এই লাভ প্যারেডে৷

হয়ত এমন একটি স্থান নির্বাচন করাটাই ভুল হয়েছিল, কেননা লোকেশনে পৌঁছাতে হয় ২৪০ মিটার লম্বা একটি টানেল, অর্থাৎ সুড়ঙ্গ দিয়ে; এছাড়া অন্যান্য একাধিক আন্ডারপাস এসে মিশেছে একটি ব়্যাম্প বা ঢালে৷ লোকে একবার আসতে শুরু করলে এখানে যে একটা ভিড় ও ঠেলাঠেলি শুরু হতে পারে, সেটা আন্দাজ করা উচিত ছিল৷ ঘটলও ঠিক তাই; পুলিশ লাউডস্পিকার দিয়ে জনতাকে এদিকে আসতে বারণ করলেও, সে কথায় কেই কর্ণপাত করেনি৷ ওদিকে আরেক পুলিশ অফিসার চাপ দেখে শেষ বেড়াটাও খুলে দিতে বলেছেন৷ ভুলের পর ভুল৷ ২৪শে জুলাই-এর সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২১ জন, আহত হন অন্তত ৫০০ মানুষ৷ নিহতদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৩৮ বছরের মধ্যে৷ এর পর আর জার্মানিতে লাভ প্যারেড কোনোদিন অনুষ্ঠিত হয়নি

কোলোনে নিউ ইয়ার্স ইভ, ২০১৫

এখানেও প্রমাণ হয়েছে যে জার্মানরা যতই সুসংগঠিত হোন না কেন, দুনিয়া, দেশ ও পরিবেশ যখন বদলায়,তখন তারাও সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকেন না৷ ৩১শে ডিসেম্বরের রাত্রে কোলোনের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশন ও প্রখ্যাত কোলোন ক্যাথিড্রালের মাঝখানের চত্বরে মহিলাদের যৌন হয়রানি ও সেই সঙ্গে চুরি-ছিনতাই-এর ব্যাপক ঘটনা ঘটে৷ একদল পুরুষ মিলে একটি মহিলাকে ঘিরে ফেলে সেই মহিলার শরীর স্পর্শ করা থেকে শুরু করে ধর্ষণ অবধি যৌন নিপীড়নের এই প্রথা নাকি আরব বিশ্বে ‘তাহররুশ জমাই' বলে পরিচিত; এই কুপ্রথার সূচনা নাকি মিশরের তাহরির চত্বরে ২০১১ সালের বিপ্লব চলার সময়৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

কোলোনের এই ঘটনা জার্মানিতে চলতি উদ্বাস্তু সংকট ও সমস্যার প্রতি বহু মানুষের মনোভাব পাল্টে দিয়েছে, এমনকি জার্মান রাজনীতির উপর প্রভাব ফেলেছে৷ কোলোনেও: ঘটনা শুরু হওয়া থেকে শুরু করে ঘটনা পরবর্ত্তী তদন্ত ও বিবৃতি প্রদানে পুলিশ শুধু তাদের বিমূঢ়তা আর অদক্ষতাই প্রমাণ করেছে৷ অর্থাৎ বোঝা গেছে যে প্রস্তুতি দু'ধরনের হতে পারে এবং হওয়া উচিত: প্রথমত এযাবৎ যা ঘটে এসেছে, তার বিরুদ্ধে; দ্বিতীয়ত, নতুন যা কিছু ঘটতে পারে, তার বিরুদ্ধে৷ উদ্বাস্তু সংকট ও ইউরোপে সন্ত্রাসী আক্রমণ পরবর্তী জার্মানিতে উৎসব, সভা-সমাবেশে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বিপদ ঘটতে পারে৷ তার মোকাবিলা করার জন্য জার্মান পুলিশ ও প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে?

মিউনিখের অক্টোবরফেস্ট, ২০১৬

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেলায় এবার সন্ত্রাসী আক্রমণের ভয় ছিল৷ কাজেই অক্টোবরফেস্টের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেঁচে গণ্ডূষ করে বিবেচনা করা হয়েছিল৷ ২০১৬-র ‘ভিজ'ন'-এ বড় ব্যাকপ্যাক বা ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ সব ক'টি প্রবেশদ্বারে ছোট ব্যাগ প্রয়োজনে খুলে পরীক্ষা করে দেখার ব্যবস্থা ছিল৷ টেরেজিয়েনহ্যোহে-র ঢাল বরাবর একটি নিরাপত্তা বেড়া খাড়া করা হয়, যাতে লোকে বিনা নিয়ন্ত্রণে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে না পারে৷ এছাড়া ছিল ৩,২০০ পুলিশ ও ৪৫০ জন সিকিউরিটি ওয়ার্ডেন৷ ভালোই কেটেছে এবারের অক্টোবরফেস্ট৷ মোট অতিথি-দর্শকের সংখ্যা ষাট লাখের নীচেই থেকেছে, তবে তাতে আনন্দের কোনো কমতি ঘটেনি

ওদিকে গত তেসরা অক্টোবর ড্রেসডেনে জার্মান ঐক্য দিবসে জার্মান প্রেসিডেন্ট আর জার্মান চ্যান্সেলরকে দুয়ো পর্যন্ত শুনতে হয়েছে – জার্মানদের কাছ থেকে৷ রাষ্ট্রপ্রধান ইওয়াখিম গাউক পরে ড্রেসডেনে একটি ‘‘বাদলা দিনের'' কথা বলেছেন৷ এ-ও এক ধরনের প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তুতি৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ