কোভিড-১৯ ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের লক্ষ্যে জার্মানির এক কোম্পানি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পেয়েছে৷ ফেডারেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য চলতি বছরই জনসাধারণের জন্য টিকা প্রস্তুত হবে বলে মনে করছে না৷
বিজ্ঞাপন
গোটা বিশ্বে গবেষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা ভাইরাসের টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এমন টিকা আবিষ্কার হলে করোনা ভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে৷ এখনো পর্যন্ত প্রায় ৮০টি এমন প্রকল্প চলছে৷ মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে৷ এই প্রথম জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানও সেই প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি পেয়েছে৷ ঠিক কবে থেকে এই পরীক্ষা শুরু হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
ফেডারেল স্তরে প্রতিষেধক ও বায়োমেডিসিন কর্তৃপক্ষ পাউল-এয়ারলিশ ইনস্টিটিউট বা পিইআই বুধবার বিয়নটেক নামের এক কোম্পানিকে সেই অনুমতি দিয়েছে৷ পিইআই জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নিরাপদ ও কার্যকর টিকা তৈরির পথে মানুষের উপর পরীক্ষা জার্মানি ও অন্যান্য দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ সম্ভাব্য এই টিকার উপাদানের কার্যকরিতা ও ঝুঁকি পরীক্ষা করেই এমন অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ উল্লেখ্য, এই নিয়ে গোটা বিশ্বে বিশেষ এই প্রতিষেধকের কার্যকারিতা নির্ণয় করতে চতুর্থ পরীক্ষা চালানো হচ্ছে৷
বিয়নটেক কোম্পানির সূত্র অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সি ২০০ সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর উপর এই টিকা পরীক্ষা করা হবে৷ বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বিয়নটেক টিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে৷ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরের জন্য আরএনএ বা জিন-ভিত্তিক সম্ভাব্য এই টিকা কতটা উপযুক্ত ও নিরাপদ, তা পরীক্ষা করা হবে৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের উপরেও পরীক্ষা চালানো হতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে প্যাথোজেনের জিন সম্পর্কে তথ্যের ভিত্তিতে শরীরে বিশেষ ধরনের প্রোটিন উৎপাদন করা হচ্ছে৷ এই প্রোটিনের কল্যাণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ প্রণালী উপযুক্ত অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তখন ভাইরাস সেই মানুষকে সহজে কাবু করতে পারবে না৷ উল্লেখ্য, বিয়নটেক কোম্পানি মূলত ক্যানসারের রোগীদের জন্য ইমিউনোথেরাপি নিয়ে কাজ করে চলেছে৷
পাউল-এয়ারলিশ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, চলতি বছর কোভিড-১৯-এর একটি সম্ভাব্য প্রতিষেধকের চারটি ‘ক্লিনিকাল ট্রায়াল' চালানো হবে৷ তবে এ বছরই জনসাধারণের জন্য টিকা প্রস্তুত হবার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
জার্মানিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জীবন
করোনা-সংকট সত্ত্বেও জার্মানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে ফেরার উদ্যোগ শুরু করছে৷ প্রথম পর্যায়ে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে৷ তবে প্রতিটি রাজ্য এ ক্ষেত্রে নিজস্ব পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
নতুন করে দৈনন্দিন জীবনের স্বাদ
প্রায় এক মাস কড়কড়ির পর জার্মানির মানুষ আবার কিছু স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছেন৷ কিন্তু দেশের সব প্রান্তে বিধিনিয়ম এক নয়৷ ১৬টি রাজ্য এ বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ কিছু রাজ্যে ২০শে এপ্রিল থেকে ৮০০ বর্গ মিটারের কম আয়তনের দোকানপাট খোলা হয়েছে৷ তবে এমন অভিজ্ঞতার জন্য বার্লিনের মতো কিছু রাজ্যের মানুষকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: Reuters/A. Gebert
যত মত, তত পথ
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া অবিলম্বে দোকানবাজার খোলার পথ বেছে নিয়েছে৷ বন শহরের অনেক মানুষ চুটিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন৷ আরো এক ধাপ এগিয়ে এ রাজ্যে এমনকি হবু মায়েদের প্রয়োজনীয় পণ্যের বড় দোকান খোলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
সাইকেল কেনার উৎসাহ
ডিন্সলাকেন শহরে সোমবার সাইকেলের দোকান খোলার পর নতুন সাইকেল কেনার আশায় অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন৷ জার্মানির সব রাজ্যেই সাইকেল, বই ও গাড়ির দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ অন্যান্য দোকানের মতো এ ক্ষেত্রে আয়তন সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না৷
ছবি: Getty Images/L. Baron
ব্যবসা-বাণিজ্য আবার চালু
দোকানের মালিকরা আবার ক্রেতাদের স্বাগত জানাতে পেরে খুবই সন্তুষ্ট৷ বসন্ত উপলক্ষ্যে কিছু ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের লুডভিগসবুর্গ শহরে এক দোকানের সামনে লেখা আছে ‘‘আমরা ফিরে এসেছি৷ আপনাদের আবার দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFPT. Keinzle
আবার স্কুলে ফেরার আনন্দ
কিছু রাজ্যে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে আবার স্কুলে ফিরতে পারছে৷ বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গ ও স্যাক্সনি রাজ্য বেশি বয়সের শিক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি ও মূল পরীক্ষার জন্য সোমবার থেকে স্কুল ভবনে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে৷ জার্মানির বেশিরভাগ রাজ্যে ৪ঠা মে থেকে শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ পাবে৷ শুধু বাভেরিয়া রাজ্যে ১১ই মে পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Michael
চিড়িয়াখানা ও মিউজিয়ামও দরজা খুলছে
কড়াকড়ির কারণে জার্মানির চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ কয়েকটি রাজ্যে সেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে৷ মেকলেনবুর্গ-ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ ও রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্য চিড়িয়াখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই তিনটি এবং আরো কিছু রাজ্যে মিউজিয়ামও খোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Kuegeler
মাস্ক পরার চল বাড়ছে
কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় প্রকাশ্যে মাস্ক পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জার্মানির কিছু অঞ্চলে অবশ্য আরো বেশি মাস্ক-পরা মানুষ চোখে পড়ছে৷ দেশজুড়ে বাধ্যতামূলক না হলেও কয়েকটি রাজ্য ও পৌর কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম চালু করছে৷ যেমন স্যাক্সনি রাজ্যে এপ্রিল মাস থেকে ট্রাম-বাস বা ট্রেনে এবং দোকানবাজারে মাস্ক পরা অথবা অন্য কোনো উপায়ে মুখ ও নাক ঢাকা বাধ্যতামূলক৷ বাভেরিয়াসহ আরো কিছু রাজ্যেও এমন নিয়ম চালু হয়েছে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
ব্যবধান বজায় রাখুন!
গোটা দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷ বাসার মানুষ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে৷ যে সব দোকান খোলা হচ্ছে, সেখানেও নানাভাবে ক্রেতাদের মধ্যে এই দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে৷