করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এরিমধ্যে জার্মানিতে হানা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির স্যাক্সোনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মিচায়েল ক্রেটশমার৷ নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটির রোগনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান আরকেআই৷
বিজ্ঞাপন
সংবাদপত্র রাইনিশে পোস্টকে মিচায়েল ক্রেটশমার বলেন, ‘‘(জার্মানিতে) করোনা ভাইরাস এরিমধ্যেদ্বিতীয় আঘাত হেনেছে৷ প্রতিদিনই আক্রান্ত বাড়ছে৷ আমরা প্রতিদিনই সংক্রমণের নতুন ক্লাস্টার পাচ্ছি যা উচ্চ সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে পারে৷’’
রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের (আরকেআই) পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে জার্মানিতে করোনায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০৷ সংস্থার একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে বলেছেন, ‘‘এই পরিবর্তন খবই শঙ্কার৷ আরকেআই খুবই নিবিড়ভাবে তা পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে৷’’ সংক্রমণের আরো ভয়াবহতা ঠেকানো অনিবার্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে ৭৮১ জন নতুন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন৷ আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮১৫৷ রোগী প্রতি সংক্রমণের হার আগে যেখানে এক ভাগের কম ছিল তা বেড়ে হয়েছে এক দশমিক শূন্য আটজন৷ অর্থাৎ একজন করোনা আক্রান্ত গড়ে একজনের বেশিজনকে সংক্রমিত করছেন৷ এই হার একের নিচে রাখার ব্যাপারে জোর দিয়ে আসছে আরকেআই৷
টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে কে কত এগিয়ে
করোনা ভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অন্তত দশটি দেশে চলছে ১৭০টিরও বেশি প্রচেষ্টা৷ তবে এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়টি পৌঁছাতে পেরেছে পরীক্ষার শেষ ধাপে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
পৌনে দুইশ’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে ১৭০ টির বেশি উদ্যোগ৷ একেকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-পর্ব সারতেই সাধারণত বছরের পর বছর সময় লাগে৷ তবে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে তা ১২ থেকে ১৮ মাসে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Reuters/B. Guan
প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্ব
বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই এখনো প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে৷ এই ধাপে বিজ্ঞানীরা ভাইরাস বা তার কোনো একটি অংশ তৈরি করেন৷ সেটি অন্য প্রাণীদের উপর প্রয়োগ করে দেখেন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকঠাক সাড়া দিচ্ছে কিনা৷ ১৩৯ টি প্রচেষ্টা এখনো এই ধাপে আটকে আছে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
প্রথম ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রথম ধাপে সীমিত সংখ্যক মানুষের মধ্যে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়৷ দেখা হয়, প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্বে পশুর দেহে যেভাবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, মানুষের শরীরেও তা একইভাবে কাজ করছে কিনা৷ বর্তমানে ২৫টি টিকা রয়েছে এই ধাপে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Gobet
দ্বিতীয় ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে আছে ১৫টি ভ্যাকসিন৷ সম্ভাব্য টিকাটি কতটা নিরাপদ আর তা কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, এই ধাপে মূলত সেটি দেখেন বিজ্ঞানীরা৷ এজন্য কয়েকশ’ মানুষের শরীরে টিকাটি পরীক্ষা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/University of Oxford
তৃতীয় ধাপ
তৃতীয় ধাপে ভ্যাকসিন পরীক্ষার আওতায় আসেন কয়েক হাজার মানুষ৷ কার্যকরীতা, শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকগুলোতে এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা মনযোগ দেন৷ এই ধাপটিতে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর মাত্র সাতটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পৌঁছাতে পেরেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pochard-Casabianca
অনুমোদন
পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন বাজারজাতের অনুমোদন দেয় দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ৷ গত জুনে ক্যানসিনো বায়োলোজিক্স এর ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে চীনের সামরিক বাহিনী৷ অন্যদিকে পরীক্ষায় সফল হয়েছে দাবি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান গামালিয়া ইন্সটিটিউটের ভ্যাকসিনের অনুমোদন করেছে রাশিয়া৷ যদিও তাদের এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতে নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
শেষ ছয়
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে পৌঁছানো সাতটি ভ্যাকসিনের তিনটি চীনের৷ এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে টিকা তৈরি করেছে সাইনোভেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ জুলাইতে আরব আমিরাতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু করেছে সাইনোফার্ম নামে দেশটির আরেকটি কোম্পানি৷ শেষ ধাপের এই দৌড়ে আরো আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিও৷
ছবি: Reuters/J. Akena
আলোচনায় অক্সফোর্ড
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু থেকে আলোচনায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷ ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে তারা৷ পৌঁছে গেছে তাদের উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষার শেষ ধাপে৷ দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্রাজিলে চলছে তার ট্রায়াল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Sibeko
8 ছবি1 | 8
জার্মানির ১৬টি রাজ্যে অবশ্য আক্রান্তের সংখ্যা একইভাবে বাড়ছে না৷ নতুন শনাক্তদের ৬০ ভাগের বেশি নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া এবং বাডেন ভুর্টেমব্যার্গে৷ জার্মানির ১৬ টি রাজ্যের সরকার স্বাধীনভাবে তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে৷ এ কারণে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও তা সামাল দেয়ার বিষয়ে আশাবাদী মিচায়েল ক্রেটশমার৷ তিনি মনে করেন ফেডারেল ব্যবস্থার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থার তুলনায় জার্মানি দেশ হিসেবে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে৷
শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় মোট শনাক্ত হয়েছেন প্রায় দুই লাখ পাঁচ হাজার জন, যাদের প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার জনই সুস্থ হয়েছেন৷ মৃত্যুবরণ করেছেন নয় হাজার ১১৮ জন৷