জার্মানিতে নতুন সরকার কার্যভার গ্রহণের আগেই সম্ভবত এক সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটি করোনা সংকট মোকাবিলায় কাজ শুরু করছে৷ ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর শলৎস কোনো পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের চাপে জার্মানিতে নতুন সরকার গঠনের আগেই ভবিষ্যৎ শাসকদের সক্রিয় হয়ে উঠতে হচ্ছে৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎস চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নেবেন৷ তার আগেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংকট সামলাতে চ্যান্সেলর দফতরের অধীনে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে সমন্বয় করতে এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করছেন তিনি৷ জার্মান সেনাবাহিনীর এক জেনারেল সেই কমিটির সভাপতিত্ব করবেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ মেজর জেনারেল কার্স্টেন ব্রয়ার বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীর অভিযানের দায়িত্ব পালন করছেন৷
সংকট সামলাতে কমিটি গঠনের বিষয়টি সম্পর্কে ঐকমত্য হলেও অন্যান্য পদক্ষেপের প্রশ্নে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে৷ জার্মানিতে বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণ ও করোনার ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের আবির্ভাবের প্রেক্ষাপটে চ্যান্সেলর ও মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ৯ই ডিসেম্বরের বদলে আরও এগিয়ে আনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় নি৷ তাছাড়া ভবিষ্যৎ সরকারি জোট সংক্রমণ সুরক্ষা আইন সংশোধন করে করোনা মোকাবিলার লক্ষ্যে যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, শেষ পর্যন্ত সেগুলি যথেষ্ট হবে কিনা, সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে৷ তবে জার্মানির স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আগে যে ভাবে হোক মানুষের মধ্যে যোগাযোগ কমানোর প্রয়োজন স্বীকার করছে নতুন সরকারের তিন শরিক দল৷
ওলাফ শলৎস বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো পদক্ষেপই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ তার মতে, দেশের সামনে আবার ‘নাটকীয় নতুন চ্যালেঞ্জ' এসে পড়েছে৷ শলৎস বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিদায়ী ও আগামী সরকার নিবিড় সহযোগিতা করছে৷ তিনি সব টিকাপ্রাপ্ত প্রাপ্তবয়স্কদের সময় হলেই বুস্টার ডোজ নেবার আহ্বান জানান৷ উল্লেখ্য, বর্তমানে জার্মানির জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ করোনা টিকার বুস্টার ডোজ পেয়েছেন৷
জার্মানিতে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণের গড় সাপ্তাহিক হার সোমবার ৪৫২ পেরিয়ে গেছে৷ হাসপাতালের উপর চাপ কমাতে বিমানবাহিনী গুরুতর অসুস্থ রোগীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বদিকে অনেক হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট ভরে যাওয়ায় এমন চরম পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে৷ তবে গোটা দেশে পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও রোগী স্থানান্তর করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন৷
জার্মানিতে করোনার চতু্র্থ ঢেউ
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি৷ সংক্রমণের হার, দৈনিক মৃতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জার্মানিতে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব আসলে চতুর্থ ঢেউ আঘাত হানার ইঙ্গিত৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
দৈনিক মৃত্যু বাড়ছে দ্রুত
ওপরের ছবিটি বন শহরের এক কবরস্থানের৷ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া স্ত্রীকে স্মরণ স্বামী৷ জার্মানির অনেক শহরেই এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট (আরকেআই)- এর তথ্য অনুযায়ী, গত পহেলা অক্টোবর সারা দেশে করোনায় মারা গিয়েছিলেন ১৮ জন৷ ১৮ নভেম্বর সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২০১ জন৷ একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড এটি৷
ছবি: Ute Grabowsky/photothek/imago images
কফিনেও সতর্কবার্তা
কবরস্থানে কফিনের সারি৷ একটি কফিনে জার্মান ভাষায় লেখা, ‘ইনফেকসিয়ন্সগেফার’, যার অর্থ ‘ইনফেকশনের ঝুঁকি’৷
ছবি: Robert Michael/dpa/picture alliance
ঝুঁকিতে বয়স্করা
ছবিতে এক ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ একজনকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার দৃশ্য৷ করোনায় বয়স্কদের প্রাণহানির শঙ্কা সবসময়ই বেশি৷ সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধাশ্রমে নতুন করে হানা দিয়েছে করোনা৷
ছবি: Jens Kalaene/dpa/picture alliance
শিশুরাও আক্রান্ত
জার্মানিতে শিশুরাও করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের সংক্রমণের হার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে৷ জার্মানির স্কুলে আগে থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষা করানো হয়৷ এখন সব শিশুকে টিকা দেয়া শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
আইসিইউ সংকট
লাইপসিশের এক হাসপাতালের আইসিইউতে করোনার চিকিৎসার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ওপরের ছবিতে৷ সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর ভিড়ও বাড়ছে৷ আইসিইউ খালি পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে অনেক হাসপাতালে৷
ছবি: Jan Woitas/dpa/picture alliance
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি
হামবুর্গের এই স্টেশনের মতো জার্মানির সব শহরের গণপরিবহনে আবার ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ তবে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থবিধির কঠোর অনুসরণও সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ দুই ডোজ টিকা নেয়া, করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়া কিংবা করোনা থেকে অতি সম্প্রতি সেরে ওঠা ব্যক্তিরাই কেবল ট্রেন, ট্রাম বা বাসে উঠতে পারেন৷
ছবি: Eibner/imago images
হোম অফিস
একটা সময় সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় জার্মানিতে হোম অফিসের বাধ্যবাধকতা অনেক শিথিল করা হয়েছিল৷ কিন্তু ‘ফোর্থ ওয়েভ’-এর আশঙ্কা জাগতেই আবার নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন৷ সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ঘরে বসে কাজ করাকেই আবার অগ্রাধিকার দিচ্ছেন অনেকে৷৷
ছবি: Imago/S. Midzor
ক্রিসমাস মার্কেটে কঠোরতা
ওপরে ফ্রাইবুর্গ শহরের ক্রিসমাস মার্কেটের ছবি৷ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে ক্রিসমাস মার্কেট চলছে সেখানে৷ জার্মানির বেশিরভাগ শহরেই এভাবে ক্রিসমাস মার্কেট বসেছে৷ তবে বাভারিয়া রাজ্য কর্তৃপক্ষ খুব কঠিন নিয়মে শুরু করেছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ কোনো শহরে সপ্তাহে সংক্রমণ এক হাজার হবার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকা লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বাভারিয়া৷
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
আবার বিনা পয়সায় করোনা পরীক্ষা
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় সবাইকে নিজের খরচে করোনা পরীক্ষা করানোর কথা বলেছিল জার্মান সরকার৷ কিন্তু করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত দেখা দিতেই আবার বদলে গেছে নিয়ম৷ ফিরে এসেছে বিনে পয়সায় করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
9 ছবি1 | 9
জার্মানির এমন নাজুক পরিস্থিতির উপর করোনা ভাইরাসের নতুন ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ দক্ষিণ আফ্রিকার মতো জার্মানিতেও ডেল্টা ভেরিয়েন্ট কোণঠাসা করে ওমিক্রন আধিপত্য বিস্তার করলে কী পরিণতি হবে, সেটাও এখনো স্পষ্ট নয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ আপাতত ওমিক্রন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে৷