রবিবারের হিসেব অনুযায়ী জার্মানিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের গড় হার ২.৮৮ ছুঁয়েছে৷ মাত্র দুই দিনের মধ্যে এমন বৃদ্ধির জন্য বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে দায়ী করা হলেও সার্বিকভাবে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বজুড়ে করোনা সংকটের মাঝে জার্মানির ‘সাফল্য' অনেক দেশেই নজর কেড়েছে৷ পুরোপুরি লকডাউনের পথে না গিয়ে সামাজিক ব্যবধানের মতো নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিয়ম চালু করে সংক্রমণের হার কমানো গেছে৷ পরিস্থিতির উন্নতির পর ধাপে ধাপে সে সব কড়াকড়ি শিথিল করার পরেও সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে থেকেছে৷ কিন্তু রবিবার রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, যে গোটা দেশে সংক্রমণের গড় হার আচমকা বেড়ে ২.৮৮ ছুঁয়েছে৷ এর মানে হচ্ছে, একজন করোনা রোগী ২.৮৮ জনকে সংক্রমিত করছেন৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংখ্যাটা ১ এর নীচে থাকা ভালো৷ শনিবার জার্মানিতে এই হার ছিল ১.৭৯৷ ফলে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ কারণ সংক্রমণ বাড়লে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামোর উপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে৷
আচমকা এমন অবনতির পেছনে মূলত কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকেই দায়ী করা হচ্ছে৷ গ্যোটিঙেনের মতো শহরে অনেক মানুষ সামাজিক ব্যবধান বা কোয়ারান্টিনের নিয়ম মানছেন না বলে অভিযোগ উঠছে৷ রবিবার সেখানে কর্তৃপক্ষকে রাজপথে দাঙ্গা পুলিশ নামিয়ে কোয়ারান্টিন কার্যকর করতে হয়েছে৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে গ্যুটার্সলো শহরে এক বিশাল কসাইখানার ১,৩০০ জনেরও বেশি কর্মীর শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে৷ ফলে আশেপাশের এলাকার প্রায় ৭,০০০ মানুষকে কোয়ারান্টিনে রাখতে হচ্ছে৷ স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ এই শিল্পখাতে এর আগেও এমন ব্যাপক সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আর্মিন লাশেট স্থানীয় পর্যায়ে আবার কড়া বিধিনিয়ম চালু করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না৷ উল্লেখ্য, তিনিই জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের উপর বিধিনিয়ম শিথিল করার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন৷
রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, যে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণের হার মারাত্মক আকার ধারণ করায় গড় হিসেবের উপরও সার্বিক প্রভাব পড়ছে৷ গত কয়েক সপ্তাহে একাধিক বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, শরণার্থী কেন্দ্র, কসাইখানা ও লজিস্টিক্স কোম্পানিতে এমন ব্যাপক সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে৷ মৌসুমি ফসল তোলার কর্মী ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেও এমন প্রবণতা দেখা গেছে৷ রবিবারের হিসেব অনুযায়ী জার্মানিতে এখনো পর্যন্ত মোট ১৮৯,৮২২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ মৃতের সংখ্যা ৮,৮৮২৷
জার্মানির বাকি অংশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কড়াকড়ি শিথিল করার বিষয়ে বিতর্কের অবসান ঘটছে না৷ একদল অবশিষ্ট বিধিনিয়ম আরও শিথিল বা পুরোপুরি তুলে দেবার জন্য চাপ দিচ্ছে৷ অন্য শিবির নতুন করে সংকট এড়াতে সতর্কতা বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করছে৷ তারা সাম্প্রতিক ঘটনাগুলিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরছে৷
এসবি/জেডএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ)
জার্মানিতে করোনার গুচ্ছ প্রাদুর্ভাব
জার্মানিতে সাধারণভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে৷ কিন্তু প্রায়ই বিভিন্ন কমিউনিটিতে হুট করে প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert
সার্বিকভাবে কমেছে করোনা
গেল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের হিসেবে এ পর্যন্ত জার্মানিতে এক লাখ ৮৫ হাজারের কিছু বেশি কেস ধরা পড়েছে৷ এদের আট হাজার ৭৫৫ জন মারা গেছেন৷ প্রায় ছয় হাজার এখনো অসুস্থ৷ ১২২টি জেলায় আর কোন আক্রান্ত নেই
ছবি: imago images/Arnulf Hettrich
সংক্রমণ থেমে নেই
করোনার সংক্রমণের হার কমলেও থেমে যায়নি৷ গেল সপ্তাহে দেশটিতে গড়ে লাখে প্রায় তিনজন (২.৯ জন) আক্রান্ত হচ্ছেন৷ লাখে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাভেরিয়া (৩৬৪), বাডেন-ভ্যুটেমব্যের্গ (৩১৬), জারলান্ড (২৭৯) ও হামবুর্গ (২৭৮)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
গুচ্ছভাবে ছড়াচ্ছে
নতুন আক্রান্তের সংখ্যা সম্প্রতি বেড়েছে এমন রাজ্যগুলোতে দেখা গেছে, তা কোনো ছোট কমিউনিটিকে কেন্দ্র করে বাড়তে শুরু করেছে৷ কোথাও শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের ক্যাম্প ও আবাস এলাকায়, কোথাও মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা কিংবা লজিস্টিক্স কোম্পানিতে, কোথাও মৌসুমী ফসল তোলার সময় কর্মীদের মাঝে এবং কোথাও ধর্মীয় উৎসব কিংবা পারিবারিক মিলনমেলায় ঘটনাগুলো ঘটছে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
গ্যোটিঙ্গেন নিয়ে আলোচনা
লোয়ার সাক্সনি রাজ্যোর শহর গ্যোটিঙ্গেনে সর্বশেষ গুচ্ছ ঘটনাটি ঘটেছে৷ নগরকর্তৃপক্ষ বলছে, ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্সের এক ঈদ পুনর্মিলনী জমায়েত থেকেই নতুন করে শুরু হয় সংক্রমণ৷ এতে স্কুল ও ডে কেয়ার সেন্টারগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়৷ বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ তা না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pförtner
ব্রেমারহাফেনের চার্চ থেকেও
রাজ্যের ব্রেমারহাফেন শহরের একটি চার্চের সভা থেকেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে৷ এছাড়া সেখানে একটি বড় পারিবারিক অনুষ্ঠানও হয়৷ এ থেকে শুধু ব্রেমারহাফেনই নয়, পার্শবর্তী কুক্সাভেন শহরেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে৷ আরো কয়েকটি রাজ্যে নানা ধর্মের মানুষের সমাবেশ থেকে করোনা ছড়িয়েছে৷
ছবি: Gemeinde der Christuskirche Bremerhaven
আইশাখ-ফ্রিডব্যের্গে কী ঘটল?
বাভেরিয়া রাজ্যের আইশাখ-ফ্রিডব্যের্গ এলাকায় ফসল তোলার সময় কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে করোনা৷ বিষয়টি ধরা পড়লে ফসল তোলা বন্ধ করে দেয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে৷ ট্রেসিং ও টেস্টিং শুরু হয়৷ কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
জনারব্যের্গের নার্সিং হোম
থুরিঙ্গিয়া রাজ্যের জনারব্যের্গ শহরে বয়স্কদের জন্য একটি নার্সিং হোমেও সম্প্রতি সার্স-কোভ-২ ছড়িয়ে পড়ে৷ নার্সিং হোমের বাসিন্দা ও কর্মচারীদের অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন৷ পার্শ্ববর্তী শহর কোবুর্গেও এমন ঘটনার কথা শোনা যায়৷ ডায়লাইসিস চিকিৎসার সঙ্গে এই ছড়িয়ে পড়ার সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়৷
ছবি: Imago Images/photothek/I. Kjer
কারখানায়, কোম্পানিতে
কয়েকটি রাজ্যে মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা থেকে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে৷ পরে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়৷ এছাড়া নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া ও লোয়ার সাক্সনি রাজ্যের কয়েকটি বড় লজিস্টিক্স কোম্পানির কর্মীদের মাঝে নতুন করে করোনার সংক্রমণ দেখা গেছে৷