জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার লাগাতার বেড়ে চলায় লকডাউনসহ আরো কড়া পদক্ষেপের জন্য চাপ বাড়ছে৷ হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীর জরুরি চিকিৎসার নিশ্চয়তা আর দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা৷
বিজ্ঞাপন
এখনো পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপই জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের ঊর্দ্ধগতি থামাতে পারছে না৷ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সাপ্তাহিক গড় সংক্রমণের হার শুক্রবার ৪৩৮ পেরিয়ে গেছে৷ দৈনিক সংক্রমণের হার ৭৬,০০০-এরও বেশি৷ করোনা মহামারির সূচনা থেকে এখনো পর্যন্ত জার্মানিতে মৃতের সংখ্যা এক লাখ পেরিয়ে গেছে৷
সারা দেশে হাসপাতালগুলির উপর চাপ বেড়ে চলায় বিশেষজ্ঞরা প্রমাদ গুনছেন৷ বৃহস্পতিবার জার্মানির ১৬টি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা দেশজুড়ে জরুরি নয় এমন অপারেশনের তারিখ পিছিয়ে দেবার ডাক দিয়েছেন৷ বিশ্ব চিকিৎসক সংগঠনের সভাপতি জার্মানির ফ্রাংক উলরিশ মন্টগোমারি বলেছেন, সব গুরুতর অসুস্থ মানুষকে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে আর স্থান দেওয়া যাবে না৷ বাঁচার সম্ভাবনার ভিত্তিতে রোগী বাছাই করতে হবে৷ ইতোমধ্যেই এমন কঠিন পদক্ষেপের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে৷ দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে হাসপাতালের উপর চাপ কমাতে জার্মানির বিমানবাহিনী অসুস্থ রোগীদের দেশের অন্য প্রান্তে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার কাজে সহায়তা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ আপাতত দুটি বিমান এই কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ বাভেরিয়া, স্যাক্সনি ও টুরিঙ্গিয়া রাজ্যে এমন চরম পদক্ষেপের প্রয়োজন বাড়ছে৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও জার্মান রোগী স্থানান্তর করার প্রয়োজন হতে পারে৷
বিদায়ী চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ কমানোর আরও কড়া পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ৷ ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর মহামারি সামলাতে জরুরি কমিটি গড়ার যে উদ্যোগ নিচ্ছেন, ম্যার্কেল সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই সেই পদক্ষেপে সহায়তার আশ্বাস দেন৷ তবে চ্যান্সেলর ও মুখ্যমন্ত্রীদের আগামী বৈঠক ৯ই নভেম্বরের বদলে আগেই আয়োজন করার ডাক সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেন নি৷
পরিস্থিতি সামলাতে অস্ট্রিয়ার মতো জার্মানিতে সম্পূর্ণ লকডাউনের সম্ভাবনাও আর উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না৷ স্যাক্সনি ও উত্তরের মেকলেনবুর্গ ওয়েস্টার্ন পমারেনিয়া রাজ্য বড়দিন পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ সেইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সংকট সামলাতে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার জন্যও চাপ বাড়ছে৷ বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার গত সপ্তাহে খোলাখুলি এমন প্রস্তাব রেখেছেন৷ ম্যার্কেলও এমন পদক্ষেপের পক্ষে বলে সংবাদমাধ্যমের একাংশে দাবি করা হচ্ছে৷
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ দফতর পাঁচ থেকে এগারো বছর বয়সি শিশুদের জন্য করোনা টিকা অনুমোদন করায় স্কুলের উপর চাপ কিছুটা কমানোর আশা বাড়ছে৷ উল্লেখ্য, বর্তমানে স্কুলে করোনা সংক্রমণের হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ বড়দিনের আগেই শিশুদের করোনা টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে সরকার আশ্বাস দিচ্ছে৷ তবে জার্মানির টিকা কমিশনের পরামর্শ ছাড়া অনেক চিকিৎসক এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের আবহে জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেট
করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে জার্মানির কিছু শহর বড়দিন উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত রেখেছে৷ ক্রিসমাস মার্কেট বসছে না সেসব শহরে৷ তবে অনেক শহরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Robert Michael/dpa-Zentralbild/picture alliance
ন্যুরেমবার্গে হচ্ছে না
আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ন্যুরেমবার্গে ক্রিসমাস মার্কেট বসার কথা ছিল৷ তবে বাভারিয়ার করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠায় রাজ্যের অনেক শহরেই ক্রিসমাস মার্কেট এ বছরের জন্য বাতিল করা হয়েছে৷ ন্যুরেমবার্গও যোগ হয়েছে সেই তালিকায়৷
ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
ড্রেসডেনের ‘স্ট্রাইৎসেলমার্কট’ও হচ্ছে না
ড্রেসডেন শহরের ৫৮৭তম স্ট্রাইৎসেলমার্কট গতকাল (২২ নভেম্বর) শুরু হওয়ার কথা ছিল৷ তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করতে ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজন এ বছরের জন্য বাতিল ঘোষণা করেছে নগর কর্তৃপক্ষ৷ স্যাক্সনি রাজ্যের সব ধরনের মেলার আয়োজনই আপাতত বন্ধ৷
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture alliance
বার্লিনে গেনডারমেনমার্ক্ট
বাভারিয়া এবং স্যাক্সনি রাজ্যের পথ ধরে বার্লিন কিন্তু এখনো ক্রিসমাস মার্কেট বন্ধের ঘোষণা দেয়নি৷ তাই ২২ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে গেনডারমেনমার্ক্ট ক্রিসমাস মার্কেট৷ অবশ্য যারা টিকা নিয়েছেন অথবা একবার করোনায় ভুগে সেরে উঠেছেন, শুধু তারাই যেতে পারছেন সেখানে৷
ছবি: Paul Zinken/dpa/picture alliance
হাইডেলবার্গেও চলছে ক্রিসমাস মার্কেট
হাইডেলবার্গে আরো কঠিন নিয়মে শুরু করা হয়েছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ ১৮ নভেম্বর থেকে ‘থ্রি-জি’ নিয়ম কড়াকড়িভাবে মেনে চলছে এ আয়োজন৷ জার্মান ভাষার তিনটি শব্দের সংক্ষিপ্তরূপ থ্রি-জি-র মানে টিকাপ্রাপ্ত, রোগমুক্ত এবং পরীক্ষিত৷ হ্যাঁ, টিকা নেয়া অথবা করোনায় ভুগে ওঠা ব্যক্তি হলেও যাওয়া যাচ্ছে না সেখানে, ঢোকার সময় তাদেরও করাতে হচ্ছে করোনা পরীক্ষা৷
ছবি: Bildagentur-online/Widmann/picture alliance
চলছে ডর্টমুন্ডের ক্রিসমাস বাজার
টু-জি নিয়মে, অর্থাৎ টিকাপ্রাপ্ত এবং করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের প্রবেশের সুযোগ রেখে ডর্টমুন্ডের ক্রিসমাস বাজারও শুরু হয়েছে গত ১৮ নভেম্বর থেকে৷
ছবি: Peter Schickert/picture alliance
শেষ হলো কোলনবাসীর অপেক্ষা
কোলনেও গতকাল (২২ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ সেখানেও টু-জি নিয়ম মানতে হচ্ছে সবাইকে৷
ছবি: Jochen Tack/picture alliance
স্টুটগার্টে বাতিল
গতবছর না হওয়ায় স্টুটগার্টবাসীও এ বছর ক্রিসমাস মার্কেটের জন্য মুখিয়ে ছিল৷ কিন্তু মেয়র ফ্রাঙ্ক নোপার শেষ মুহূর্তে আয়োজনটি বাতিল ঘোষণা করেছেন৷
ছবি: Eibner-Pressefoto/picture alliance
হামবুর্গেও টু-জি
হামবুর্গের শ্পিলবুডেনপ্লাৎসে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ সেখানেও মানা হচ্ছে টু-জি নিয়ম, অর্থাৎ কেবল টিকা নেয়া অথবা করোনা থেকে সেরে ওঠাদেরই দেয়া হচ্ছে সেখানে যাওয়ার সুযোগ৷
ছবি: Marcus Brandt/dpa/picture alliance
ট্রিয়ারের সেরা ক্রিসমাস মার্কেট
ট্রিয়ারের ক্রিসমাস মার্কেটকে ‘২০২১ সালে জার্মানির সেরা ক্রিসমাস মার্কেট’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ট্যুরিজম প্ল্যাটফর্ম ‘ইউরোপিয়ান বেস্ট ডেস্টিনেশন্স’৷ ১৯ নভেম্বর থেকে টু-জি নিয়মেই চলছে আয়োজন৷