করোনা সংকটের মাঝেও দলীয় সম্মেলন আয়োজন করে অন্তর্কলহ মেটাতে পারলো না জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি৷ ‘করোনা ডিক্টেটরশিপ’ স্লোগান তুলে সরকারের জনপ্রিয় পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে দলটি৷
বিজ্ঞাপন
করোনা মহামারির কারণে সমাবেশের উপর সার্বিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি প্রায় ৫০০ ডেলিগেট নিয়ে দলীয় সম্মেলন আয়োজন করেছে৷ কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সপ্তাহান্তে এমন সমাবেশের অনুমতি পেলেও সম্মেলনকে ঘিরে বিতর্কের অভাব হয় নি৷ সম্মেলনে শেষের দিকে অনেককে নাকমুখ ঢাকা দিতে দেখা যায় নি৷ বাইরে প্রায় ৫০০ মানুষ এএফডি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷
জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এএফডি বেশ কিছুকাল ধরে ঐক্য ধরে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে৷ দলের জনপ্রিয়তাও কমে চলেছে৷ একদিকে বাস্তববাদী শিবির জার্মানির প্রতিবাদী ভোটারদের সমর্থন বজায় রাখতে উগ্র দক্ষিণপন্থি ভাবধারা থেকে দলকে দূরে রাখতে চায়৷ অন্যদিকে বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলে খোলামেলা চরমপন্থি অংশ আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে৷ রবিবার দলীয় সম্মেলনের শেষে ঐক্যের ডাক সত্ত্বেও বিভাজন দূর করা সম্ভব হয় নি৷ দলের শীর্ষ নেতা টিনো ক্রুপালা কমপক্ষে মতপার্থক্য প্রকাশ্যে তুলে ধরার বদলে দলীয় কাঠামোর মধ্যে আলোচনার আবেদন জানান৷
‘জার্মানির জন্য বিকল্প' নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করে অভাবনীয় নির্বিচনি সাফল্য সত্ত্বেও এএফডি এই মুহূর্তে কিছুটা সংকটের মধ্যে রয়েছে৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিবাদের বিষয় বেছে নিয়ে জনসমর্থন আদায় করতে ওস্তাদ এই দল প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও শরণার্থীদের শত্রু হিসেবে তুলে ধরেছিল৷ তারপর ইসলাম বিদ্বেষকে হাতিয়ার করে কিছু সমর্থন আদায় করে এএফডি৷ বর্তমানে করোনা সংকটের সময়ে সরকারের কড়া বিধিনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে দলের একটা অংশ৷ নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার দোহাই তুলে প্রতিবাদী মানুষের সমর্থন আদায় করতে চাইছে এএফডি৷ দেশে ‘করোনা ভাইরাস স্বৈরতন্ত্র’ চলছে বলে দলের কিছু নেতা মন্তব্য করছেন৷ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভে দলের নেতাদের উপস্থিত থাকতেও দেখা যাচ্ছে৷ নব্য নাৎসি ও আরও চরম ভাবধারার প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে একযোগে এমন সমাবেশে দলের নেতাদের উপস্থিতি সম্পর্কে অস্বস্তি বাড়লেও এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছে না এএফডি৷ দলীয় সম্মেলনেও বিরোধ মেটানো সম্ভব হয় নি৷
এখনো পর্যন্ত জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলির প্রতি মানুষের যথেষ্ট সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷ কিছু মানুষ অবশ্য সামাজিক ব্যবধান ও নাকমুখ ঢাকার নিয়ম অবজ্ঞা করে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ দেখিয়ে আসছে৷ সরকারের অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সাহায্য সত্ত্বেও যাদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে৷ এএফডি জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে এমন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে৷ উল্লেখ্য, শরণার্থী সংকটের সময় দলের জনপ্রিয়তা প্রায় ১৬ শতাংশ ছুঁলেও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী বর্তমানে মাত্র ১০ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছে এএফডি৷ সম্প্রতি সংসদে দলের বিতর্কিত ভূমিকার কারণেও কিছু মানুষের সমর্থন হারাচ্ছে দলটি৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)
করোনার টিকা বিতরণে জার্মানির পরিকল্পনা
করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়ার পর তা কীভাবে দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এখনো কোনো টিকার কার্যকারিতা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি৷ কিন্তু জার্মানিতে কাদের, কখন এবং কীভাবে তা দেয়া হবে এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নভেম্বরের শুরুতেই সারাদেশে কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’তে ১৫ পাতার পরিকল্পনা লেখা হয়েছে৷ যদিও টিকা পাওয়ার পর তা বিতরণের পরিকল্পনাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তারা৷ তারপরও চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সাথে সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীকে যাতে এর আওতায় আনা যায়৷
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
পরিকল্পনার লক্ষ্য
টিকা কবে নাগাদ আবিষ্কার হবে এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হবে, সেটা এখনও জানা যায়নি৷ কিন্তু টিকা হাতে আসার পর যাতে অন্য কোনো কারণে বিতরণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Schmidt
কর্মপরিকল্পনা
টিকা দেয়ার জন্য কর্মপদ্ধতি এবং কাজের ধরন এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্যাকসিনের জন্য ছয়টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর কোনো ভ্যাকসিন বের করলে ইইউ-এর মাধ্যমে তা পাবে জার্মানি৷ তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ৬০টি ভ্যাকসিন বিতরণ কেন্দ্রে তা পৌঁছে দেবে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
সাধারণ চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে
পুরো ব্যাপারটি ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার৷ সাধারণ চিকিৎসকরা এটা বিতরণ করতে পারবেন না৷ ফলে ধরেই নেয়া যায়, প্রথম দফায় সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না৷ এছাড়া সাধারণ চিকিৎসকদের অফিসে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুবিধা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa
যারা প্রাধান্য পাবেন
বয়স্ক মানুষ এবং যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তারা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িতরাও থাকছেন এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
বার্লিন
বার্লিনের স্থানীয় সরকার ছয়টি টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করছে৷ ফাইজার এবং বায়োনটেকের তথ্য অনুযায়ী, বার্লিনে প্রথম দফায় ৯ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সে হিসেবে প্রথম দফায় বার্লিনের প্রতি ১০ জনের একজন টিকা পাবেন৷ একেকটা কেন্দ্রে দিনে তিন হাজার ৪০০ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বার্লিন৷ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, ভ্যাকসিন যারা নিতে আসবেন তাদের লাইন এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টিকা আসার পর
জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের ইনফেকশাস ডিজিজ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন বিতরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা, টিকা হাতে পাওয়ার পরই করা সম্ভব৷ যখন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা বিভিন্ন বয়সে কীভাবে কাজ করে, কতটা কার্যকর ও নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/ANE
৩০ কোটি ভ্যাকসিন
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য সবচেয়ে সেরা পরিকল্পনা করতে৷ ইইউ-এর মাধ্যমে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন তারা৷
ছবি: Tobias Schwarz/AFP
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এথিক্স কাউন্সিলের প্রধান আলেনা বুইক্স জানিয়েছেন, কোন কোম্পানির ভ্যাকসিনে কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে, কোন বয়সের মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, সেটা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়৷ আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে, তবে এরজন্য বিশেষ ফ্রিজের প্রয়োজন হবে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
প্রয়োজন কর্মী
এই কাজে কেবল চিকিৎসক না, প্রয়োজন নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য কর্মী৷ সেজন্য সেনাবাহিনী এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাছে কর্মী চেয়ে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
গ্রামগুলোতে টিকা সরবরাহের চ্যালেঞ্জ
শহরে যাতায়াত ও অন্য সুবিধা থাকলেও শহর থেকে যারা অনেক দূরে থাকেন, সেসব এলাকায় প্রবীণ মানুষ কীভাবে টিকা দান কেন্দ্রে পৌঁছাবেন সেটা একটা চিন্তার বিষয়৷