1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিভিন্ন দেশের গৃহকর্মী

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী২১ অক্টোবর ২০১৫

পশ্চিমবঙ্গে বলতো ‘কাজের লোক', ‘ঠিকে-ঝি', যা কিনা আরো খারাপ৷ জার্মানির মতো সমৃদ্ধ দেশেও এই ‘আণবিক পরিবারের' যুগে গৃহকর্মীরা আছেন৷ ওদিকে দুনিয়ায় দরিদ্র, অভাবী মানুষের তো কোনো অভাব নেই...৷

Deutschland Polen Eine Putzfrau packt aus
ছবি: picture alliance/dpa

নামে কি বা আসে যায়৷ গৃহকর্মী বলাটা আজকাল ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট'৷ কিন্তু আরো বড় কথা, জার্মানিতে যাদের ‘পুট্সফ্রাউ' বা ঘর পরিষ্কারের লোক – অর্থাৎ গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে দেখি, তাদের আইনগত অধিকার বা মর্যাদা যা-ই হোক না কেন, নিজেদের সম্পর্কে, নিজেদের কাজ সম্পর্কে ধারণা – এবং সেই সঙ্গে আত্মসম্মানবোধ – আমাদের উপমহাদেশের চেয়ে অনেক বেশি৷

অথচ যাঁরা পরের বাড়ি ঘরের কাজ করতে আসেন, তাঁদের অনেকেই সে কাজ করেন বেআইনিভাবে, অর্থাৎ কর্মসংস্থান দপ্তরকে না জানিয়ে৷ নগদ পারিশ্রমিক পান, খুব সম্ভবত তার উপর আয়কর দেন না, যেমন গৃহকর্ত্রী বা গৃহকর্তারও বিভিন্ন সামাজিক বীমা খাতে যে অনুদান জমা করা উচিত, সেটা তারা বাঁচিয়ে নেন৷

একটা অস্বস্তিকর, বেআইনি পরিস্থিতি – কিন্তু যেহেতু দু'পক্ষেই প্রয়োজন এবং তাড়নাটা বৃহৎ, সেহেতু এই ‘প্রণালীটা' জার্মানির ঘরে ঘরে কাজ করছে এবং করবে, তা সরকার একে যতোই ‘শোয়ার্ৎসআর্বাইট' বা – কালো টাকার অনুকরণে – ‘কালো শ্রম' বলে দুষুন না কেন৷ আমার চেনা এক রুশ মহিলা – আদতে ছিলেন সাংবাদিকা – আজ ঘণ্টায় ১৫ ইউরো পারিশ্রমিকে বাড়ির কাজ করেন৷ এই হয়ত আয়নার কাচ পুঁছছেন; আবার প্রয়োজনে ভ্লাদিমির পুটিনের নতুন সঙ্গিনীকে নিয়ে নানা টাটকা কেচ্ছাও শুনিয়ে দিতে পারেন৷

একটি আঠেরো পরিবারের ফ্ল্যাটবাড়িতে যে কত জাতি, ভাষা ও ধর্মের গৃহকর্মীরা আসা-যাওয়া করে থাকেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত – তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না৷ এই সাহায্য যারা নিচ্ছেন – নিতে বাধ্য হচ্ছেন – তাঁদের মধ্যে অশীতিপর বৃদ্ধ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার আইটি বিশেষজ্ঞ – জার্মানি এসেছেন ডয়চে টেলিকমের বিশেষ কাজে – ওদিকে দুই কচি সন্তান নিয়ে হিমশিম খাওয়া তরুণী মা৷ এরই মধ্যে এক ফ্ল্যাটে ক্যানসার; সেখানে যে পোলিশ মহিলাটি আসেন, তাঁর রীতিমতো নার্সিং-এর অভিজ্ঞতা আছে৷

গাড়িতে যেমন পেট্রোল ছাড়াও মোটর অয়েল লাগে, এই গৃহকর্মীরা হলেন জার্মানির সংসারকর্মের মোটর অয়েল৷ এদের ছাড়া সংসার অচল৷ এই গৃহকর্মীদের উপর অত্যাচার বা নিপীড়নের ঘটনা নিশ্চয় ঘটে থাকে এবং তার নিশ্চয় সরকারি ও বেসরকারি পরিসংখ্যান আছে – কিন্তু সেই সংখ্যা আমাদের দেশের তুলনায় কিছুই নয়, বলে আমার ধারণা৷ এ দেশে অ্যামেরিকা, ক্যানাডা থেকে শিক্ষিত তরুণী মেয়েরা আসে ‘ও পেয়ার' বা বাচ্চাদের দেখাশোনা করার কাজ নিয়ে – নিখর্চায় ইউরোপে থেকে পড়াশুনা, পর্যটন, ভাষাশিক্ষা বা অন্য কোনো গভীর উদ্দেশ্য সাধনে৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

সেইভাবেই: গৃহকর্ম ও গৃহকর্মীর আদিম সম্পর্ক ও সমস্যাটা কখনো জলের তলায়, কখনো জলের ওপরে – মানে কখনো আইনি আবার কখনো বেআইনি৷ কিন্তু মনুষ্যসমাজ যতদিন আছে, ততদিন সে-ও আছে এবং থাকবে৷ তাকে অনেক অত্যাচার, অপমান ও অপব্যবহার সইতে হবে৷ জার্মানিতেও পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যে সব তরুণীদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে জার্মানিতে আনা হয়, তাদের যেমন মানুষের আদিমতম প্রবৃত্তির শিকার হতে হয় – এমনকি বেআইনিভাবে জার্মানিতে বসবাসকারী গৃহকর্মীদেরও সেরকম দুরবস্থা হয় বলে কখনো শুনিনি৷ গৃহকর্মীদের উপর অত্যাচার, নিপীড়ন এদেশে বিরল ও বিক্ষিপ্ত ঘটনা, পদ্ধতি বা প্রথাগত নয়৷

অপরদিকে জার্মান সমাজে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের সংখ্যা, একাকীত্ব ও অসহায়তা যত বাড়ছে, ততই গুগল করলেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে পোল্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানির নাম, যারা ২৪ ঘণ্টার নার্স বা পরিচারিকা দিতে পারে৷ আলৎসহাইমার বা পার্কিনসনে আক্রান্ত প্রবীণদের স্বগৃহে সসম্মানে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়াচ্ছেন এই সব আদি ও অকৃত্রিম ‘কাজের বুয়া'৷

জার্মানির কাজের বুয়াদের নিয়ে আপনার কোন প্রশ্ন আছে? থাকলে লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ