পশ্চিম বলকান অঞ্চলের দেশগুলো থেকে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ প্রতিবছর জার্মানিতে কাজ করতে আসেন৷ এসে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
পশ্চিম বলকান অঞ্চলের দেশ আলবেনিয়া, বসনিয়া, কসভো, মন্টেনেগ্রো, উত্তর মেসিডোনিয়া এবং সার্বিয়ার নাগরিকদের ২০১৬ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কাজের অনুমতি দিয়ে আসছে জার্মান সরকার৷ এই দেশগুলোর নাগরিকরা সংশ্লিষ্ট কাজে পর্যাপ্ত যোগ্যতা না থাকলেও জার্মানিতে এসে কাজ করতে পারেন৷ এই সুযোগ ২০২৩ সাল পর্যন্ত থাকবে৷ এমন কর্মী এবং ‘যোগ্যতাসম্পন্ন’ কর্মী মিলিয়ে প্রতি বছর পশ্চিম বলকান অঞ্চলের এই দেশগুলো থেকে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ জার্মানিতে আসেন কাজ করতে৷
জার্মানিতেএকা এলেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবারকেও নিয়ে আসতে চান সবাই৷ আর সেখানেই বাধে বিপত্তি৷ কাজের অনুমতি বা সুযোগ যত তাড়াতাড়ি মেলে, ‘ফ্যামিলি রিইউনিয়ন’, অর্থাৎ ‘পরিবারের পুনর্মিলন’-এর ভিসামেলে তার চেয়ে অনেক বেশি দেরিতে৷ কারো কারো ক্ষেত্রে সময়টা কয়েক বছরও লেগে যায়৷
জার্মানরা যখন অভিবাসী
উন্নত জীবনের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই আসেন জার্মানিতে৷ কিন্তু জানেন কি, প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ মানুষ জার্মান অন্যদেশে পাড়ি জমায়৷ ছবিঘরে দেখুন অভিবাসী হতে জার্মানদের পছন্দের দেশ কোনগুলো৷
ছবি: Getty Images/C. Koall
সুইজারল্যান্ড
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (ওএসিডি) ভুক্ত দেশ সমূহের মধ্যে সুইজারল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি জার্মানদের বাস৷ জার্মানির তুলনায় শতকরা ৫০ ভাগ বেশি আয়ের সুযোগ, ট্যাক্স প্রাদানের হার কম ও ভাষাগত মিল থাকায় এ দেশটিই জার্মানদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়৷ দেশটিতে মোট সাড়ে চার লাখ জার্মান নাগরিকের বাস যা জার্মান মোট অভিবাসীর ১৬ দশমিক তিন ভাগ৷
ছবি: imago/BE&W
অস্ট্রিয়া
জার্মান অভিবাসীদের শতকরা ১৩ দশমিক পাঁচ ভাগ রয়েছে অস্ট্রিয়াতে৷ সুইজারল্যান্ডের মতো এ দেশটির প্রধান ভাষাও জার্মান৷ কাজের পাওয়ার ক্ষেত্রেও ততোটা সীমাবদ্ধতা নেই৷ ওএসিডির তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রিয়াতে আছে প্রায় দুই লাখ জার্মান নাগরিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Diemer
যুক্তরাজ্য
তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য৷ তথ্য বলছে, এ দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ জার্মান নাগরিক রয়েছে, যা মোট জার্মান অভিবাসীর দশ ভাগ৷ বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য সেবাসহ নানা খাতে কর্মরত আছেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/AP-Photo/A. Pezzali
নেদারল্যান্ডস
জার্মানদের জন্য ডাচ ভাষা শেখা অনেকটা সহজ বিশেষ করে যারা ইংরেজি জানেন তাঁদের জন্য৷ ওএসিডি বলছে, জার্মান অভিবাসীদের মোট আট দশমিক সাত ভাগ রয়েছে নেদারল্যান্ডসে৷দেশটির আয়েশি জীবনযাপন জার্মানদের বেশ পছন্দ বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TASS/A. Ryumin
স্পেন
জার্মান অভিবাসীদের সাত দশমিক পাঁচ ভাগের বাস স্পেনে৷ দেশটি জার্মানদের অনেক পছন্দ৷ ছুটি কাটাতে তাঁদের অনেকেই ছুটে যান বার্সেলোনা বা মাদ্রিদে৷ তবে স্পেনের শ্রমবাজার জার্মানির মতো অতোটা শক্তিশালী না হওয়ার কারণে জার্মানদের অনেকেই আবার দেশটিকে বসবাসের জন্য ততোটা পছন্দ করেন না৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
তুরস্ক
ইউরোপীয়ার ইউনিয়নভুক্ত না হলেও ইউরোপের সীমানঘেষা এ দেশটি অনেক জার্মানের কাছেই বেশ পছন্দের৷ তথ্য বলছে, জার্মান অভিবাসীদের চার দশমিক সাত ভাগ রয়েছে এ দেশটিতে৷
ফ্রান্স
বলা হয়ে থাকে ইউরোপে জার্মানির সবচেয়ে কাছের বন্ধু নাকি ফ্রান্স৷জার্মান অভিবাসীদের মোট চার দশমিক তিন ভাগ রয়েছে প্রতিবেশি এ রাষ্ট্রটিতে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Porzycki
জাপান
এশিয়ার এ দেশটি অনেক জার্মানের কাছে বেশ পছন্দের৷ তথ্য বলছে, মোট অভিবাসীর চার দশমিক তিন ভাগ রয়েছে সুর্যোদয়ের এ দেশটিতে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Triballeau
যুক্তরাষ্ট্র
এশিয়া কিংবা আফ্রিকান অভাবিসীদের অনেকের কাছেই প্রধম পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু জার্মানদের বেলায় তা নয়৷ তথ্য বলছে জার্মান অভিবাসীদের তিন দশমিক নয় ভাগের বাস যুক্তরাষ্ট্রে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Drew
নিউজিল্যান্ড
তালিকায় সবার নিচে রয়েছে এ দেশটি৷মোট জার্মান অভিবাসীর তিন দশমিক সাত ভাগ রয়েছে নিউজিল্যান্ডে৷
ছবি: Getty Images/M. Bradley
10 ছবি1 | 10
এর ফলে জার্মানিতে কাজ করতে আসা হাজারো মানুষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা আর ক্ষোভ৷
একজন তাই ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ভাবছি লটারির টিকিট কেটে ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করবো৷ লটারি জেতা আর ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা পাওয়া তো প্রায় সমান ব্যাপার!’’
সেলিকো সার্বিয়া থেকে ড্রাইভারের চাকরি নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন ২০১৯ সালের শুরুর দিকে৷ বাভারিয়া রাজ্যের হফ শহরে চাকরি পেয়েই বড় একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলেন৷ সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী মিলিচা সিভোকিচ খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবেন, এ আশা করেই বড় বাসা নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মিলিচা এখনো ভিসা পাননি৷গত জুনে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর খারাপ লাগছে৷ মনে হয় যেন জার্মানি নয়, আমরা কোনো পাগলের বাড়ির দরজায় অপেক্ষা করছি৷’’
বাবার সঙ্গে বসবাস শুরুর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে সেলিকোর সাত বছরের ছেলের মানসিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে৷ স্থানীয় এক মনস্তত্ববিদ বলেছেন, ছেলের মতো সেলিকোর চার বছরের মেয়েও পড়েছে সমস্যায়৷ বাবা দীর্ঘ দিন ধরে দূরে থাকায় মেয়েটি মানসিক চাপে ভুগছে আর এ কারণে প্রস্রাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে সে৷
এর চেয়েও খারাপ দৃষ্টান্ত আছে৷ ডয়চে ভেলে এমন কিছু ভিসার আবেদন পেয়েছে, যাতে দেখা যায়, বাবা এবং মা দুজনই কাজ করতে এসেছেন জার্মানিতে৷ তাদের সন্তানরা রয়ে গেছে দাদী বা নানীর কাছে৷
ভিসা দিতে এমন দেরির কথা জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে৷ তবে করোনা সংকটের ডামাডোলে সারা বিশ্বই যখন প্রায় স্থবির, তখন এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না গ্যোকে আবুলুত৷ জার্মানির বাম দলের এই মুখপাত্র বলেন, ‘‘এসব (পশ্চিম বলকান) দেশের যে পরিবারগুলো জার্মানিতে বসবাস করছে, তারা নিজেদের দেশের অনেক পরিবারের চেয়ে অনেক ভালো আছে৷ তবে সব অভিবাসী কর্মী পরিবারের ক্ষেত্রে বাস্তবতা এমন নয়৷’’
এসিবি/ কেএম
১৮ জুনের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানিতে বাংলাদেশিদের পরিসংখ্যান
জার্মানির পরিসংখ্যান অফিস ‘ডেস্টাটিস’ বলছে, ২০১৯ সালে ২২৫ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন৷ জার্মানিতে বাংলাদেশিদের বসবাসের সংখ্যাও জানিয়েছে তারা৷
ছবি: DW/A. Mita
রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি
জার্মানির পরিসংখ্যান অফিস ‘ডেস্টাটিস’ বলছে, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ১৫ হাজার ৭১০ জন জার্মানিতে ছিলেন, যা যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷ ছবিতে কেমনিৎস প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Privat
২০১৫ থেকে দুই অংকে
ডেস্টাটিসের কাছে ১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশিদের হিসাব রয়েছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো জার্মানিতে থাকা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীর সংখ্যা ১০ হাজারের মাত্রা অতিক্রম করে৷ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সংখ্যাটি ছিল ১১ হাজার ৪৮৯ জন৷ এরপর প্রতিবছর সংখ্যাটি বেড়েছে৷ ছবিতে গ্যোটিঙ্গেন শহরে বাংলাদেশিদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন৷
ছবি: Azizur Rahman
দক্ষিণ এশিয়ার হিসাব
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর জার্মানিতে বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৭১০৷ ঐদিন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ দুই লাখ ৬৩ হাজার ৪২০ জন জার্মানিতে ছিলেন৷ এছাড়া ভারতের ছিলেন এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৫ জন, পাকিস্তানের ৭৫ হাজার ৪৯৫ ও নেপালের আট হাজার ১২০ জন৷
ছবি: DW/Ravi Ranjan
নাগরিকত্বের হিসাব
২০১৯ সালে ২২৫ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন৷ নাগরিকত্ব বিষয়ে ডেস্টাটিসের কাছে ২০০০ সাল থেকে হিসাব পাওয়া যায়৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ২০০৮ সালে ১০১ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন, যা সর্বনিম্ন৷ আর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিক হয়েছেন ২০০১ সালে (২৭০ জন)৷
ছবি: DW/A. Mita
দক্ষিণ এশীয়দের নাগরিকত্ব গ্রহণ
২০১৯ সালে আফগানিস্তানের দুই হাজার ৬৭৫ জন জার্মানির নাগরিকত্ব নেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ৷ এরপরে আছে ভারত, দুই হাজার ১৩০ জন৷ এছাড়া পাকিস্তানের এক হাজার ৭৯০, শ্রীলঙ্কার ৬৬০ ও নেপালের ১০৫ জন জার্মানির নাগরিকত্ব নিয়েছেন৷ ছবিতে স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের একটি দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/V. Kumar
বিশ্বের হিসাব
২০১৯ সালে ১৮৩ দেশের এক লাখ ২৮ হাজার ৯০৫ জন জার্মানির নাগরিকত্ব নেন, যা ২০০৩ সালের পর সর্বোচ্চ৷ ঐ বছর এক লাখ ৪০ হাজার ৭০০ জন জার্মানির নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন৷
ছবি: Imago/STPP
সবচেয়ে বেশি তুরস্কের
২০১৯ সালে তুরস্কের ১৬ হাজার ২০০ জন জার্মানির নাগরিক হয়েছেন, যা সর্বোচ্চ৷ এরপরেই আছে ব্রিটেন (১৪ হাজার ৬০০), পোল্যান্ড (ছয় হাজার) ও রোমানিয়া (পাঁচ হাজার ৮০০)৷