জার্মানিতে একটি ডে কেয়ারে শিশুদের জন্য আনা খাবারের সসে ডিটারজেন্ট আর স্যুপে জীবাণুর সংক্রমণ পাওয়া গেছে৷ এ নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি জার্মানির পশ্চিমের শহর লেভারকুজেনে একটি ডে কেয়ারে শিশুদের খাবারে বিষক্রিয়া ঘটেছে৷ তবে সেই খাবার পরিবেশনের আগেই কর্মীদের সন্দেহ হলে তাঁরা সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেন৷
ঘটনাটি চলতি বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারির বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ ডে কেয়ারের একজন কর্মী খাবার থেকে রাসায়নিকের গন্ধ পান৷ শিশুদের সেই খাবার না দিয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে সেগুলো ফেরত পাঠায় ডে কেয়ার কর্তৃপক্ষ৷ পরবর্তীতে ল্যাব পরীক্ষায় শিশুদের জন্য দেয়া সসে ডিটারজেন্টের অস্তিত্ব মিলেছে৷ সেই সঙ্গে স্যুপে বিষক্রিয়ারও প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ জার্মান সংবাদপত্র রাইনিশে পস্ট এমন তথ্য প্রকাশ করেছে৷
শিশুরা এই খাবারের সংস্পর্শে আসেনি বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ এবং ডে কেয়ার কর্মীরা৷ কীভাবে খাবার দূষিত হয়েছে এখন তার তদন্ত চলছে৷ ‘‘যেহেতু তদন্ত চলমান সেজন্য এখনই আমরা কোনো ফলাফল জানাতে পারছি না৷ আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না কীভাবে খাবারে দূষণ ঘটেছে,'' রাইনিশে পস্টকে জানান ডে কেয়ারটির প্রধান নাদিয়া গেওর্গিয়া৷
এই ঘটনার পর ডে কেয়ারগুলোতে খাবার সরবরাহ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ডে কেয়ার ও কিন্ডারগার্টেনগুলোর সংগঠনের প্রধান হান্স হ্যোরলড্ট৷ ‘‘আমরা খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে ছয়টি ধাপে তা পরীক্ষা করে দেখছি৷ সেই সঙ্গে প্রতিদিনের খাবারের নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্যও পাঠানো হচ্ছে,'' সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ডাব্লিউডিআরকে জানান তিনি৷
এদিকে পুলিশের ধারণা খাবারে এই বিষক্রয়া ইচ্ছাকৃতভাবেই ঘটানো হয়েছে৷ এর সাথে ডে কেয়ারে কর্মরত কেউ জড়িত থাকতে পারে৷ কেননা ল্যাব পরীক্ষায় দূষিত স্যুপে যে পরিষ্কারক পদার্থের অস্তিত্ব মিলেছে তা ডে কেয়ারটিতে ব্যবহার হয় বলে রাইনিশে পস্ট ও ডাব্লিউডিআর-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷
জার্মানির পাবলিক স্কুলগুলোতে কী হয়?
জার্মানিতে স্কুলগুলো একটি জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে৷ সেই জটিল প্রক্রিয়া আবার রাজ্য থেকে রাজ্যে ভিন্ন৷ প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উত্তরণ সবচেয়ে জটিল৷ ছবিঘরে একটি ধারণা পেতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/F. Kästle
টডলার থেকে টিনএজার
শিশুরা তাদের বয়স ৬ বছর হওয়া পর্যন্ত কিন্ডারগার্টেনে পড়ে৷ এরপর ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত (গ্রেড ১ থেকে ৯, কোথাও ১০ পর্যন্ত) স্কুলে উপস্থিতিতে ব্যাপক কড়াকড়ি৷ হোমস্কুলিংয়ের কোনো বিষয় নেই৷ তবে খুব বিরল কারণে (যেমন, ভয়াবহ অসুস্থতা) হোমস্কুলিং সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
প্রাথমিক পর্যায়
প্রথম দিন স্কুলে গেলে বিশেষ মিষ্টি উপহার পায় শিশুরা৷ সিরিয়াস বিষয়ের সঙ্গে আস্তে আস্তে তাদের পরিচিত করানো হয়৷ পড়াশোনার পদ্ধতি ঠিক করে রাজ্যগুলো, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই৷ বেশিরভাগ স্কুলে ৪ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে শিশুরা৷ কোথাও কোথাও ৬ বছর৷ এরপর মাধ্যমিক৷
ছবি: imago/Kickner
শিক্ষকের সুপারিশ
মাধ্যমিকে পড়তে যাবার সময় প্রাথমিকের শিক্ষক একটি সুপারিশ দেন৷ এই সুপারিশই নির্ধারণ করে শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের কোন স্কুলে যাবে৷ কারণ, মাধ্যমিকে গিমনাজিউম, রেয়ালশুলে ও হাউপ্টশুলে ছাড়াও গেজাম্টশুলে নামের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্কুল রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/R. Hottas
গিমনাজিউম
এটি মূলত অ্যাকাডেমিকস তৈরির স্কুল৷ এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য তৈরি করা হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে গ্রেড ১২ বা ১৩ শেষ করে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার এনট্রান্স পরীক্ষা (এ লেভেল) অথবা হাইস্কুল ডিপ্লোমা পরীক্ষা দিতে হয়ে৷
ছবি: picture alliance/BeyondFoto
রেয়ালশুলে
রেয়ালশুলেতেও (গ্রেড ৫-১০) গিমনাজিউমের বিষয়গুলো পড়ানো হয়৷ তবে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আছে৷ যেমন, বিদেশি ভাষার বিষয়ে ভিন্ন ধরনের চাহিদা থাকে৷ মূলত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে প্রযুক্তি বা বিজনেস স্কুলে পড়ার জন্য তৈরি করা হয়৷ যারা ভালো করে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে গিমনাজিউম বা গেজাম্টশুলেতে সুইচ করতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/W. Bahnmüller
হাউপ্টশুলে
এই স্কুলেও অন্যান্য উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়গুলো পড়ানো হয়, তবে ধীর গতিতে৷ এখানে মূলত কারিগরি শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়, যেন তারা ভবিষ্যতে কারিগরি স্কুল বা এ সংক্রান্ত শিক্ষানবিশী কর্মসূচিতে ভর্তি হতে পারে৷ তবে ভালো ফল করলে এখান থেকেও রেয়ালশুলে ডিপ্লোমা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
গেজাম্টশুলে
গেজাম্টশুলের ধারণাটি তুলনামূলক নতুন৷ তিন টায়ারের স্কুল পদ্ধতির বিপরীতে এর উৎপত্তি মূলত ৬০ ও ৭০-এর দশকে৷ এখানে গিমনাজিউম, রেয়ালশুলে ও হাউপ্টশুলে তিনটি স্কুলের ধারণাকে একীভূত করা হয়েছে৷ এখান থেকে শিক্ষার্থীরা গ্রেড ১৩ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে পারে, অথবা ৯ম বা ১০ম গ্রেড পাশ করে কারিগরি স্কুলে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/u. umstätter
বাড়ছে গেজাম্টশুলে’র জনপ্রিয়তা
সম্প্রতি গেজাম্টশুলে’র জনপ্রিয়তা খুব বেড়েছে৷ বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে সিটের চেয়ে আবেদন বেশি পড়ছে৷ কোলনে ২০১৮ সালে প্রায় ১ হাজার আবেদন উপেক্ষা করতে হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/M. Begsteiger
বদলাবার সুযোগ
পড়তে পড়তেই শিক্ষার্থীরা পদ্ধতি বদল করতে চাইতে পারে৷ যেমন, গিমনাজিউমে ৫ম ও ৬ষ্ঠ গ্রেডকে ট্রায়াল পিরিয়ড বলা হয়৷ এ সময় শিক্ষার্থীরা ভালো করতে না পারলে শিক্ষকেরা তাকে রেয়ালশুলে বা হাউপ্টশুলেতে পাঠাবার সুপারিশ করতে পারেন৷ তবে মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে গেজাম্টশুলেতে যাওয়া একটু কঠিন, কারণ, তাদের পড়াবার কৌশল একটু ভিন্ন৷ এছাড়া ভালো ফলাফল করলে রেয়াল বা হাউপ্টশুলে থেকে গিমনেজিউমেও যাবার সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
রাজ্য থেকে রাজ্যে ভিন্নতা
এই পদ্ধতিগুলোতে রাজ্য থেকে রাজ্যেও ভিন্নতা রয়েছে৷ যেমন, স্যাক্সনিতে স্কুলগুলো ওবারশুলে (রেয়াল ও হাউপ্টশুলে মিশ্রিত) ও গিমনাজিউম– এই দুই ভাগেই বিভক্ত৷ বাভেরিয়াতে মিটেলশুলে বলে একটি স্কুল-পদ্ধতি আছে৷ এছাড়া কারিগরি শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত হতে চাইলে আছে বেরুফসশুলে৷ সেখানে কোনো একটি কারিগরি দিকে উচ্চতর পড়াশোনা বা শিক্ষানবিশীর সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER
বিশেষায়িত স্কুল
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্যও রয়েছে আলাদা স্কুল, যেমন, ফ্যোর্ডারশুলে ও জন্ডারশুলে৷ তবে কোনো কোনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে সাধারণ বাচ্চাদের সঙ্গেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাচ্চারা শিক্ষাগ্রহণ করে৷