সিডিইউ-সিএসইউ দল ইতিমধ্যেই আলাপ-আলোচনা শুরু করতে চায়, কিন্তু এসপিডি দল এখনও নিশ্চিত নয়৷ তিন দলের সভাপতি এই প্রথম একটি বৈঠকে বসবার পর একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি ছাড়া আর কিছু দেননি ৷
বিজ্ঞাপন
তিন দলের তিন বিধাতার বৈঠকটি যে কোথায় হবে, তাও গোপন রাখা হয়েছিল: চ্যান্সেলরের দপ্তরে? নাকি বুন্ডেসটাগে? নাকি কোনো ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে? কোথায় যাবেন আলোকচিত্রীরা? শেষমেষ দেখা গেল, বুন্ডেসটাগ, অর্থাৎ জার্মান সংসদ ভবনেই মিটিং বসছে, সিডিইউ-সিএসইউ দলের সংসদীয় গোষ্ঠীর প্রধান ফল্কার কাউডার-এর অফিসে৷ সন্ধ্যে ছ'টা নাগাদ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল (সিডিইউ), হর্স্ট সেহোফার (সিএসইউ) ও সিএসইউ সংসদীয় গোষ্ঠীর প্রধান আলেক্সান্ডার ডোব্রিন্টকে বুন্ডেসটাগে যেতে দেখা যায়৷ তার কিছু পরেই এসপিডি সভাপতি মার্টিন শুলৎস ও দলের সংসদীয় গোষ্ঠীর প্রধান আন্ড্রেয়া নালেস এসে উপস্থিত হন৷ বৈঠক চলে আড়াই ঘণ্টা ধরে৷
বৈঠকের পরে কোনো নেতাই কোনো মৌখিক বিবৃতি দেননি, শুধু একটি সংক্ষিপ্ত লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আলাপ-আলোচনা ‘‘মুক্ত ও আস্থাপূর্ণ'' ছিল৷ আলাপ-আলোচনায় সিডিইউ-সিএসইউ দল একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা শুরু করার সপক্ষে মতপ্রকাশ করেছে৷ এসপিডি দল বলেছে, তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আরো কিছু সময় চায়৷ সামাজিক গণতন্ত্রীরা দৃশ্যত জোট সরকার গঠন সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা শুরু করার ব্যাপারে শুক্রবার কথাবার্তা বলবে ও সিদ্ধান্ত নেবে৷
জার্মানিতে সরকার গঠন করবে জামাইকা কোয়ালিশন?
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের পর সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷ সিডিইউ-সিএসইউ ওএসপিডি-কে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট নয়, নতুন সরকারের রং হতে পারে কালো-হলুদ-সবুজ৷ অর্থাৎ সিডিইউ-সিএসইউ-এর সঙ্গে জোট গড়তে পারে এফডিপি ও সবুজ দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
জার্মানিতে বিদেশি পতাকার রং
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আবারো নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করেছে সিডিইউ বা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীরা৷ অর্থাৎ চতুর্থবারের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর হতে চলেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কিন্তু সরকার গঠনের ক্ষেত্রে চিরাচরিত কালো-হলুদ নয়, দেখা দিতে পারে জামাইকা, কেনিয়া বা ট্র্যাফিক লাইটের মতো কোয়ালিশন৷
ছবি: Getty Images
কালো-লালের দিন শেষ?
চার বছর আগে, সিডিইউ-সিএসইউ আর সামাজিক গণতন্ত্রী, মানে এসপিডি দল একত্রে জোট সরকার গঠন করেছিল৷ অর্থাৎ বৃহৎ কোয়ালিশনের রং ছিল কালো-লাল৷ কিন্তু ২০১৭ সালের সংসদীয় নির্বাচনের পর এসপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস বেশ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে এবার আর মহাজোটের সম্ভাবনা নেই৷ বরং বিরোধী দল হিসেবেই সংসদে বসবে এসপিডি৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
তৃতীয় বৃহত্তম দল এএফডি
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে অলটারনেটিভ ফর জার্মানি বা জার্মানির জন্য বিকল্প দল (এএফডি)৷ এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে৷ তুলনামূলকভাবে জার্মানির রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন দল হলেও, প্রতিষ্ঠার পাঁচ মাস পরের নির্বাচনেই প্রায় পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে সাড়া ফেলে দেয় এই দল৷ আর এবার, সেই এএফডি-ই তৃতীয় বৃহত্তম দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
জামাইকা কোয়ালিশন
নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালেই এএফডি-র সঙ্গে জোট বাঁধতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল সিডিইউ-সিএসইউ, এসপিডি, মুক্ত গণতন্ত্রী (এফডিপি), সবুজ দল এবং বামদলের মতো বড় দলগুলি৷ নির্বাচনের পরেও তারা সেই অবস্থানেই রয়েছে৷ তাই এএফডি যদি জোটের বাইরে থেকে যায়, তবে সরকার গঠন করতে সিডিইউ-সিএসইউ দলের হাত ধরতে পারে এফডিপি আর সবুজ দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কেনিয়া কোয়ালিশন
ভোটের অঙ্ক অনুযায়ী অবশ্য আরো একটি কোয়ালিশনের সুযোগ আছে৷ আর সেটা হচ্ছে সিডিইউ-সিএসইউ, এসপিডি এবং সবুজ দলের, যদিও প্রথম দুটি দলেরই সম্মিলিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকছে৷ অর্থাৎ কেনিয়ার ফ্ল্যাগের রঙে কালো-লাল-সবুজের৷ অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এ সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিলেও গত বছর স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যেও কিন্তু জোট গঠন করেছিল এই দলগুলি৷
ছবি: Fotolia/aaastocks
লাল-লাল-সবুজ
এসপিডি আর বামদলের সঙ্গে সবুজ দলের জোট হলে তা হতে পারতো লাল-লাল-সবুজের জোট৷ তবে সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলে এসপিডি দলের ভরাডুবির ফলে সে সম্ভাবনা আর নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Michael Reichel
ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন
যথেষ্ট আসনসংখ্যা না থাকার কারণে লাল-হলুদ-সবুজ বা এসপিডি-এএফডি আর সবুজ দলেরও আর জোট গড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.Büttner
7 ছবি1 | 7
প্রথমে লুকোছাপা, তারপর এই সংক্ষিপ্ত বিবৃতি – কিন্তু কেন? ইতিপূর্বে মুক্ত গণতন্ত্রী ও সবুজদের সঙ্গে ইউনিয়ন দলগুলির ‘জামাইকা জোট' গঠন সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা ক্যামেরা, টুইট আর সাক্ষাৎকারের বন্যায় প্রায় ভেসে গিয়েছিল, কিন্তু শেষমেষ কোনো ফললাভ হয়নি৷ তাই দলীয় প্রধানরা এবার সাবধানে এগোতে চান৷ প্রাথমিক সংলাপে তাঁরা ছ'জনে মিলে ‘বৃহৎ জোটের' নতুন সংস্করণ বাজারে ছাড়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা কতটা, সেটা যাচাই করতে চেয়েছেন৷ দু'পক্ষের আস্থা আপাতত এতই ক্ষণভঙ্গুর যে, একটি অসাবধানী মন্তব্য বা টুইটেই তা গুঁড়িয়ে যেতে পারে৷
জামাইকা জোটের নতুনত্ব, প্রত্যাশা ও আশাবাদিতা এবার একেবারে অনুপস্থিত না হলেও, অন্তঃসলিলা – কাজেই সংসদীয় সমিতির বারান্দা থেকে দলীয় প্রতিনিধিরা প্রথমে পূর্ণ আস্থা নিয়ে, পরে গোমড়া মুখ করে কিভাবে হাত নাড়ছেন, সে ধরণের ফটো অপ এবার দেখা যাবে না৷
সংযত, কিন্তু দ্বিধাগ্রস্ত নয়
জার্মানির যে সাত রাজনৈতিক দলের নামও শোনেননি আপনি
জার্মানরা শুধু সিডিইউ বা এসপিডি নয়, কিছু ছোট এবং বিরল দলকেও ভোট দিতে পারে৷ এই যেমন, প্রাণী সুরক্ষা পার্টি কিংবা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি৷ ভাবছেন, এরা কারা? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
প্রাণী সুরক্ষা দল
জার্মানিতে প্রাণী অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টরা সুযোগ পেলে পুরো হাইওয়ে বন্ধ করে দেন যাতে ব্যাঙেরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে৷ এমন দেশে তাই ‘অ্যানিমেল প্রোটেকশন পার্টি’ বা প্রাণী সুরক্ষা দল থাকবে না, তা কি হতে পারে? তবে গ্রিন পার্টির কারণে এ দলের পালে হাওয়া কম থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
দ্য রিপাবলিকানস
ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর৷ জার্মানির রয়েছে নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টি, নাম আরইপি৷ তবে এই দলের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই৷ জার্মান রিপাবলিকনরা হচ্ছেন ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী, যারা নিজেদের ‘রক্ষণশীল দেশপ্রেমিক’ এবং দেশের ‘সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়’ রক্ষায় লড়াইরত বলে মনে করেন৷
ছবি: DW
দ্য পার্টি
হ্যাঁ, এই দলের নাম ‘দ্য পার্টি’৷ জার্মানির স্যাটায়ার ম্যাগাজিন ‘টাইটানিক’ এর সম্পাদকরা ২০০৪ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ দলটির প্রধান হচ্ছেন মার্টিন স্যোনেবর্ন (ছবিতে)৷ ২০১৪ সালে তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে দলটির জন্য একটি আসন নিশ্চিত করেন৷ ভবিষ্যতে দলটির অবস্থা আরো ভালো হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon/M. Ossowski
গণভোট দল
জার্মানির রেফারেন্ডাম পার্টি বা গণভোট দলের কাছে সুইজারল্যান্ড এক বিশাল অনুপ্রেরণা৷ দলটি চায় দেশের সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গনভোটের মাধ্যমে জনগণ নেবে৷ সুইজারল্যান্ডে ২০১৬ সালে তেরোটি গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি
জার্মানির এমএলপিডি একটি ছোট দল, যদিও দেশটির অর্ধেক মানুষ এক সময় কমিউনিস্ট ছিলেন৷ মানে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৯ সাল অবধি যখন জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানি তখন শাসন করেছিল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি৷ বর্তমানে উগ্র বামপন্থি এমএলপিডি’র জার্মান রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Link
ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি
‘অ্যালায়েন্স সি - ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি’ একটি ক্রিশ্চিয়ান পার্টি, যেটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে৷ খ্রিষ্টান-মৌলবাদীদের একটি দল এবং শ্রমিক, পরিবেশ এবং পরিবারভিত্তিক একটি দল একত্র হয়ে এই দল গড়ে৷ বাইবেলের মান রক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে চায় এই দল৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall
6 ছবি1 | 6
জামাইকা উচ্ছ্বাসের পর যে দু'পক্ষ এবার পুরোপুরি নীরব, তা নয়৷ বৈঠক শুরু হবার আগেই দু'পক্ষের রাজনীতিকরা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নানা ধরণের দাবির কথা উল্লেখ করেছেন – এবং সঙ্গে সঙ্গে অপর পক্ষ থেকে তার জবাবও এসেছে৷ কাজেই এবারের বৈঠকে পরিবেশ যে একেবারে উত্তেজনাবিহীন ছিল না, তা অনুমান করা যায়৷ নির্বাচনের পর পরই এসপিডি দলনেতা শুলৎস ‘বৃহৎ জোটের' পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা নাকচ করেন, অপরদিকে সবুজ আর মুক্ত গণতন্ত্রীরা তাদের সব পুরনো কাজিয়া ভুলে জামাইকা জোটে সামিল হবার প্রস্তুতি নেয়৷ সে স্বপ্নভঙ্গ হবার পর আবার কেঁচে গণ্ডূষ করে ‘বৃহৎ জোট'? ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে সরকার গঠন এর চাইতে সমস্যাকর ও জটিল আগে কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ে না৷
বিশেষ করে চাপে পড়েছে সামাজিক গণতন্ত্রীরা৷ গত সংসদীয় নির্বাচনে এসপিডি দল তাদের চিরকালের সর্বনিকৃষ্ট ফলাফল করে৷ জনতা বৃহৎ জোট চায় না, এই সিদ্ধান্তে আসেন সামাজিক গণতন্ত্রীরা৷ তাহলে নতুন করে বৃহৎ জোট গঠন করে কি কোনো লাভ আছে? তাতে কি এসপিডি-র শুধু ক্ষতিই হবে না? অপরদিকে দলপ্রধান মার্টিন শুলৎস জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারের যুক্তিও ফেলতে পারেননি৷ ‘‘রাজনৈতিক দায়িত্ব পাবার জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর, সেই দায়িত্ব হাতে এলে, তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়,'' বলেছিলেন স্টাইনমায়ার৷ কাজেই শুলৎসকে দলের আপামর সদস্যদের কাছ থেকে নতুন সনদ নিয়ে ইউনিয়নের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় নামতে হয় – তবে তাঁর শর্ত ছিল, আলাপ-আলোচনার ফলাফল আগে থেকে ঠিক করলে চলবে না৷
‘সহযোগিতা জোট' না ‘বৃহৎ জোট'?
এক কথায়, সরকার গঠনের অন্যান্য মডেল নিয়েও আলোচনা করতে চায় এসপিডি৷ যেমন দলের বামঘেঁষা সদস্যরা বৃহৎ জোটের পরিবর্তে একটি ‘সহযোগিতা জোটের' ধুয়ো তুলেছেন৷ এর অর্থ, জোট সহযোগীরা কয়েকটি বিষয়ে তাদের যৌথ লক্ষ্য সম্পর্কে একমত হলেও, অপরাপর বিতর্কিত বিষয়গুলি খোলা থাকবে, অর্থাৎ অনির্ধারিত থাকবে৷ নেতৃস্থানীয় সিডিইউ-সিএসইউ রাজনীতিকরা সঙ্গে-সঙ্গে এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন; তাদের মতে, হয় পুরোপুরি এক জোটে, নয়তো আদৌ নয়৷ সিএসইউ প্রধান সেহোফার বলেছেন, ‘‘শিশুসুলভ'' প্রস্তাব৷
এসপিডি দল জোটের বাইরে থেকে একটি সংখ্যালঘু সিডিইউ-সিএসইউ সরকারকে সমর্থন করবে, এই প্রস্তাবেও ইউনিয়ন দলগুলি সুখি নয়৷ তারা চান জার্মানির জন্য একটি স্থিতিশীল সরকার – ম্যার্কেলযেমন একাধিকবার বলেছেন৷ বৃহৎ জোটের সপক্ষে ইউনিয়ন দলগুলির যুক্তি হল, নতুন বৃহৎ জোটকে যে পুরনো বৃহৎ জোটের নকল হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই, বরং তা একটা নবসূচনা হতে পারে৷ সেই নবসূচনা নির্ভর করবে দু'পক্ষের আলাপ-আলোচনার উপর৷
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ম্যার্কেল চান ‘তৃতীয় বৃহৎ জোট'
সেই বৃহৎ জোটের নীতি কি হবে, তা নিয়েও ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে৷ যেমন এসপিডি দল চায় সকলের জন্য একটি সমান ও সাধারণ স্বাস্থ্য বীমা; এছাড়া এসপিডি চায় যে, উদ্বাস্তুদের পুনরায় তাদের পরিবারবর্গকে জার্মানিতে নিয়ে আসার সুযোগ দেওয়া হোক৷ ইউনিয়ন দলগুলি উভয়েরই বিরোধী৷ তবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল স্বভাবতই চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত থাকতে চান, কাজেই তিনি ইতিমধ্যেই কাজিয়া শুরু করার বিরুদ্ধে৷ তিনি নাকি এসপিডি দলের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঐকমত্যের সম্ভাবনা দেখেন, বলে বুধবার ম্যার্কেলকে বলতে শোনা গেছে৷ বৃহস্পতিবার ম্যার্কেল একটি টেলিফোন কনফারেন্সে দলের নেতৃবর্গকে এসপিডি-র সঙ্গে তাঁর কথাবার্তার ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করবেন৷ আর সামাজিক গণতন্ত্রীদের সিদ্ধান্ত জানা যাবে শুক্রবার৷ তার অর্থ কি সপ্তাহান্তের মধ্যেই জার্মানিতে তৃতীয় বৃহৎ জোট?
ক্রমশ প্রকাশ্য৷
নিনা ভ্যার্কহয়জার, সাবিনে কিনকার্ৎস/এসি
জার্মানিতে তবে কি মহাজোট সরকারই গঠন হবে? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷