রান্নাঘরে থালাবাসন পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখলেন সাবান নেই৷ কী করবেন তখন? ঘরে কোকাকোলা থাকলে তা দিয়ে ভিজিয়েই ধুয়ে ফেলতে পারেন সব থালাবাসন৷ কড়াই বা হাঁড়িতে অনেক তেল-চর্বি জমেছে? কোকাকোলা ঢেলে কিছুক্ষণ গরম করুন, তারপর ঘষে ঘষে ধুয়ে নিন, দেখবেন কড়াই বা হাড়িটা কেমন চকচক করছে!

কাপড়ের দাগও দূর করতে পারে কোকাকোলা৷ রক্ত বা তেলের দাগ হলে অল্প কিছুক্ষণ কোকাকোলা দিয়ে কাপড়টা ভিজিয়ে রাখার পর ভালোভাবে ধুয়ে নিলেই দাগ চলে যাবে৷ তবে সাদা বা হাল্কা রঙের কাপড়ে কোকাকোলা ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা, কোকোকোলার নিজস্ব রং-ও আছে এবং সেই রং কাপড়ের প্রকৃত রং-কে কিছুটা বদলে দিতে পারে৷

হ্যাঁ, রান্নাতেও কোকাকোলা ব্যবহার করা যায়৷ বিশেষ করে সয়া সস জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে হয় এমন খাবারে সসের পরিবর্তে কোকাকোলা দিয়ে রান্না করলে খেতে ভালোই লাগে৷

বাইরে খাবারের গন্ধ পেলেই মাছি এসে ভন ভন করতে শুরু করে৷ খাবারে মাছি বসলে সেই খাবার খেতে কার ভালো লাগে! হাতের কাছে কোকাকোলা থাকলে এমন সমস্যায় পড়তে হবে না৷ একটা কাপে কোকাকোলা নিয়ে কাপটা একটু দূরে রেখে দিন, দেখবেন রান্না করা খাবার ছেড়ে সব মাছি ওই কোকাকোলার কাপে গিয়ে বসছে৷

গাড়ির কাঁচ ময়লা হলে এক টুকরো কাপড় কোকাকোলায় ভিজিয়ে সেই কাপড় দিয়ে কাঁচটা মুছে ফেলুন৷ কাঁচ পরিষ্কার হয়ে যাবে৷

লোহার মরচেও তুলতে পারে কোকাকোলা৷ মরচে ধরা জায়গাটা কোকাকোলায় কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে সেই জায়গাটা ভালো করে ঘষে দেখুন মরচে আর থাকে কিনা৷

তেল পড়লে ঘরের মেঝে ভীষণ নোংরা দেখায়৷ বিশেষ করে গাড়ির গ্যারেজে তো প্রায়ই তেল পড়ে, পরিষ্কার করতে গিয়ে গলদঘর্মও হতে হয়৷ এমন হলে মেঝেতে কোকাকোলা ঢেলে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন৷ তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন৷ ঘরের টাইলস পরিষ্কার করাতেও কোকাকোলার জুড়ি মেলা ভার৷

পানিতে ভিজানো চুলে কোকাকোলা ঢেলে কিছুক্ষণ বসে থাকুন৷ তারপর আয়নায় দেখুন, কোকাকোলার সোডা চুলে কেমন লাল ধরণের একটা আভা এনেছে৷ তবে কোকাকোলার রং স্বাভাবিকভাবেই পাকা হয় না, সাবানে একটু ধুয়ে নিলেই সে রং চলে যায়৷

টয়লেট পরিষ্কার করার কাজেও কোকাকোলা দারুণ৷ কমোডে কোকাকোলা ঢেলে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন৷ তারপর ব্রাশ দিয়ে ঘষে দেখুন হারপিকের চেয়ে কোকাকোলা কম কিসে!

গাছের ফলন বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে কোকাকোলা৷ দেখা গেছে, এক ধরণের ফুল গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে কোকাকোলা ঢেলে দিলে সেই গাছে আরো বেশি ফুল হয়৷

ভুলবেন না গরমে কোকাকোলা যত ভালোই লাগুক, ঘরে যত রকম কাজেই ব্যবহার করা যাক না কেন, কোকাকোলা কিন্তু শরীরে ক্ষতিও করে৷ কোকাকোলা বেশি পান করলে ডায়াবেটিস হতে পারে৷ এছাড়া চোখের সমস্যা, দাঁতের সমস্যা, মাথা ঘোরা, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া – এ সবও হতে পারে কোকাকোলার কারণে৷

বিশ্বের দু-শ’টিরও বেশি দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড়শ’ কোটি বোতল কোকাকোলা বিক্রি হয়৷

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটলান্টার চিকিৎসক ড. জন পেমবার্টন ১৮৮৬ সালের ৮ মে প্রথম কোকাকোলার ফর্মুলা তৈরি করেন৷ শুরুর দিকে শুধুমাত্র ওষুধের দোকানে পানীয়টি বিক্রি হতো৷

এক জরিপ বলছে, বিশ্বের প্রায় ৯৪ শতাংশ মানুষ কোকাকোলার নাম জানে৷ আর ‘ওকে’ শব্দের পর কোকাকোলাই হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দ, যেটা মানুষ উচ্চারণ করে থাকে৷

কোকাকোলা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, এখন পর্যন্ত যত কোকাকোলা উৎপাদন করা হয়েছে সেগুলো যদি সাড়ে সাত ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের বোতলে (আট আউন্স সমপরিমাণ পানীয়) রাখা হয়, তারপর একটির পর আরেকটি বোতল জোড়া লাগানো হয়, তাহলে যে দৈর্ঘ্যটা হবে, সেটা পৃথিবী থেকে চাঁদে ১,৬৭৭ বার যাওয়া-আসার সমান হবে৷

কোকাকোলা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কোকা গাছের পাতা আর কোলা গাছের ফল৷ সেখান থেকেই নাম হয়েছে কোকাকোলা৷ কোকা গাছ সাধারণত দক্ষিণ অ্যামেরিকায় জন্মায়৷ আর কোলা গাছের বাসস্থান পশ্চিম আফ্রিকায়৷

কোকাকোলা মানেই ঠান্ডা পানীয়৷ তবে হংকং-এ ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে পান করা হয় গরম কোকাকোলা!

কোন দেশের মানুষ বেশি কোক খায় জানেন? মাল্টা৷ দক্ষিণ ইউরোপের এই দ্বীপ রাষ্ট্রের একেকজন বাসিন্দা বছরে গড়ে ১৪০ লিটার করে কোক পান করেন৷