অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জার্মানিতে ধনী আর গরিবের ব্যবধান ক্রমাগত বাড়ছে৷ গৃহায়ন সমস্যাও বাড়ছে ধীরে ধীরে৷ পাশাপাশি সরকারি ভর্তুকিতে গৃহ নির্মাণও কমছে আশঙ্কাজনকভাবে৷ তাই চিন্তা বাড়ছে ক্রমশই৷
বিজ্ঞাপন
২০১৩ সালে সারা জার্মানির ১৪ লাখ ৮০ হাজার অ্যাপার্টমেন্টই ছিল রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির সুবিধা নিয়ে তৈরি৷ দু'বছর আগের, অর্থাৎ ২০১১ সালের চেয়ে সংখ্যাটি ৬৩ হাজার কম৷ জার্মান সংসদের উপনেতা ক্যারেন লে সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘সামাজিক গৃহায়নে ক্রমহ্রাস' লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা রীতিমতো শঙ্কাজনক৷'' তাঁর মতে, জার্মানিতে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় ভর্তুকিতে অন্তত দেড় লাখ বাড়ি নির্মাণ করা দরকার৷
জার্মানিতে অভিবাসন প্রত্যাশী এবং পর্যটক বাড়ছে৷ কিন্তু সেই অনুযায়ী আনুপাতিক হারে নতুন ঘর তৈরি হচ্ছে না৷ ফলে বাড়িভাড়া বাড়ছে৷ স্থান বিশেষে প্রতি বর্গমিটার ৫ থেকে সাড়ে ৫ ইউরো হিসেবে বাড়ানো হচ্ছে বাড়ি ভাড়া৷
জার্মানিতে বাড়ি সমস্যায় অভিবাসীরা
অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ তবে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷এ সমস্যা জার্মানিতে বসবসারত তুর্কিদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়৷ কারণ জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ তুর্কি আছেন৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
অভিবাসী তুর্কিদের সমস্যা বেশি
জার্মানিতে অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ এগুলোর মধ্যে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷ জার্মানিতে অভিবাসীদের মধ্যে তুর্কিদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ লাখ৷ কাজেই সমস্যাটাও ওদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট পায়
তুর্কিদের সাধারণত বাসা ভাড়া দেওয়া হয় পুরনো এলাকায় বহু বছরের পুরনো বাড়িগুলোয়৷ সেই সব বাড়িতে হয়ত দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় না বা জানালা দিয়ে বাতাস ঢোকে বা খানিকটা খোলা থাকে৷ অথবা শীতকালে হিটার কাজ করে না, অর্থাৎ ঠান্ডায় কাটাতে হয়৷ বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলেও ঠিক করানো যায়নি৷ এভাবেই জানান তিন দশক আগে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসা আহমেদ খালিফি৷
ছবি: DW/C. Ruta
বাড়ির অবস্থা অস্বাস্থ্যকর
আহমেদ খালিফির ছেলে আদেলের বাড়িতেও প্রায় একই সমস্যা৷ বাড়িটি ৪০ বছরের পুরনো হওয়ায় খুবই স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার এবং অস্বাস্থ্যকর৷ এ ব্যাপারে অবশ্য বাড়িওয়ালার মাথা ব্যথা নেই, কয়েকবার বলেও কোনো কাজ হয়নি৷
ছবি: DW/C. Ruta
অবশেষে নিজেই দায়িত্ব নেন
আবদাল ১৫ বছর এ বাড়িতে আছেন, কিন্তু একবারও রঙ করা হয়নি৷ আর সেকথা বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে তিনি যেন নিজেই এ কাজ করে নেন৷ তাই আবদাল এ কাজ ভালো না জানা সত্ত্বেও নিজেই করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
শীতের কথা ভেবে ভীত
একটি মাত্র ঘর আর সেখানেই বাচ্চাদের নিয়ে থাকেন আলিয়া৷ ঘরে যেসব জিনিসের জায়গা হয় না, সেসব জিনিস স্থান পেয়েছে বাড়ির বারান্দায়৷ কিন্তু শীতের সময় এসব প্রয়োজনীয় জিনিসের কি হবে – তা ভেবে অস্থির আলিয়া৷ এই অবস্থা অবশ্য শুধু আলিয়ার একার নয়৷
ছবি: DW/C. Stefanescu
অভিবাসীদের বেশি সন্তান
অভিবাসীদের বাড়ির বড় সমস্যা৷ তার কারণ, তাঁরা বড় শহরগুলোর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করতে পছন্দ করেন৷ তাছাড়া জার্মানদের তুলনায় অভিবাসীরা কম রোজগার করেন এবং তাঁদের সন্তান সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাড়ি পেতেও অসুবিধা হয়৷ এছাড়া একই ধরণের বাড়ির জন্য জার্মানদের তুলনায় তাঁদের কাছে বেশি ভাড়াও চাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বাড়ির অবস্থা করুণ
অভিবাসীদের বাসস্থান সমস্যা অবশ্য নতুন সমস্যা নয়৷ অভিবাসীরা যেসব এলাকায় থাকেন সেই পুরনো বাড়িগুলোকে ঠিকঠাক না করানোয়, দিনদিন সেগুলি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে৷ এই অবস্থা নিদিষ্ট কোনো শহরে নয়, প্রায় শহরেই এই একই অবস্থা৷
ছবি: Fars
আগুনে পরিবারের আট জনের মৃত্যু
প্রায় চার মাস আগে বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গের বাকনাং শহরে একটি বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন ছিল বিপজ্জনক এবং একথা বারবার মালিককে বলার পরও তা ঠিক করা হয়নি৷ যার ফল হয় মর্মান্তিক৷ ঘর গরম বা পানি গরমের জন্য ব্যবহার করা হতো কাঠের চুল্লি৷ ঐ বাড়িতেই আগুন লেগে একজন তুর্কি মা তাঁর সাত সন্তানসহ মারা যান৷ ছবিতে বাকনাং শহরের কিশোর-কিশোরীরা মৃত পরিবারের প্রতি ফুল আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ি মালিকদের মত
বাড়িওয়ালাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, তুর্কি পরিবারগুলো অনেক বড়, সবসময় হৈচৈ লেগে থাকে এবং তেমন পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন নয়৷ আর সেজন্যই তাঁদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা আপত্তি থাকে বাড়িওয়ালাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তরুণদের ভিন্নমত
বয়স্ক অভিবাসীরা বাসস্থানের ব্যাপারে যতটা বৈষম্যের শিকার হন বলে মনে করেন, এই প্রজন্মের তুর্কিরা তেমনটা মনে করে না৷ সম্ভবত এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা জার্মান ভাষা ভালো জানার কারণেই এমনটা ঘটছে৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
10 ছবি1 | 10
ভর্তুকিযুক্ত বাড়ির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কমেছে স্যাক্সনিতে৷ সেখানে এক সময় ভর্তুকি সুবিধাপ্রাপ্ত বাড়ি ছিল মোট ৪২ হাজার, এখন আছে মাত্র ৭ হাজার৷ তবে স্যাক্সনির গৃহায়ন সমিতির প্রেসিডেন্ট রাইনার সাইফার্ট তারপরও অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য পর্যাপ্ত বাসস্থান আছে৷''
এদিকে জার্মানির সব বড় শহরে নতুন গৃহ নির্মাণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ-র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে সারা দেশে মোট ৩৯ হাজার নতুন অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়৷ সবচেয়ে বেশি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়েছে মিউনিখ শহরে৷ প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য গড়ে ৪ দশমিক ৭টি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়েছে সেখানে৷ অন্যদিকে রাজধানী বার্লিনে ১ হাজারের জন্য নতুন বাড়ি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৪৫টি৷ অথচ সেই শহরে গত তিন বছরে ৪৫ হাজার মানুষ বেড়েছে৷ বার্লিনে এখন প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের বাস৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার বজায় থাকলে ২০৩০ সালে সেখানে মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৪০ লাখ৷ গৃহায়ন সমস্যা নিয়ে এখন থেকে না ভাবলে তখন এত মানুষ থাকবে কোথায়?