করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে আরো কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি লিওপলডিনা৷ স্যাক্সনি রাজ্যে আগামী সপ্তাহ থেকেই কড়াকড়ি শুরু হতে যাচ্ছে৷
ছবি: Ying Tang/NurPhoto/picture alliance
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জার্মানির বিধিনিষেধে আরো কড়াকড়ি হতে পারে বলে জানান মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান৷ পাবলিক ব্রডকাস্টার ফোনিক্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে করোনায় সফল হওয়ার জন্য সম্ভবত স্বল্প এবং ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ ২রা নভেম্বর থেকে জার্মানিতে আংশিকভাবে লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্বও চালু রয়েছে, যা দেশব্যাপী সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা কমালেও সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি৷
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার না কমলে এবিষয়ে নতুন করে আলোচনা করতে হবে বলে জানান স্পান৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন সময় এ মন্তব্য করেন যখন দেশের শীর্ষ রাজনীতিকরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন করোনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য৷ এর আগে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল রাজনীতিকদের করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে মত ব্যক্ত করেন৷ ম্যার্কেল তাঁর সহকর্মীদের প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার কথা বলেন৷
মঙ্গলবার জার্মানির প্রভাবশালী জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি, লিওপলডিনা করোনার বিস্তার কমাতে ২৪ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের দাবি জানায়৷ তাদের পরামর্শ ক্রিসমাসের অন্তত দু'সপ্তাহ পরেও পুরো জার্মানিতেই কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা৷
ক্রিসমাসহলিডেকে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হারকে আবার নিয়ন্ত্রণে আনার এক মোক্ষম সুযোগ বলে ডয়চে ভেলেকে বলেন লিওপলডিনার বিবৃতির অন্যতম প্রণেতা এবং বার্লিনের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের মনোবিজ্ঞানী প্রফেসার রাল্ফ হ্যার্টভিগ৷
এনএস/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ, কেএনএ, এএফপি)
করোনার টিকা বিতরণে জার্মানির পরিকল্পনা
করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়ার পর তা কীভাবে দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এখনো কোনো টিকার কার্যকারিতা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি৷ কিন্তু জার্মানিতে কাদের, কখন এবং কীভাবে তা দেয়া হবে এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নভেম্বরের শুরুতেই সারাদেশে কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’তে ১৫ পাতার পরিকল্পনা লেখা হয়েছে৷ যদিও টিকা পাওয়ার পর তা বিতরণের পরিকল্পনাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তারা৷ তারপরও চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সাথে সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীকে যাতে এর আওতায় আনা যায়৷
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
পরিকল্পনার লক্ষ্য
টিকা কবে নাগাদ আবিষ্কার হবে এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হবে, সেটা এখনও জানা যায়নি৷ কিন্তু টিকা হাতে আসার পর যাতে অন্য কোনো কারণে বিতরণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Schmidt
কর্মপরিকল্পনা
টিকা দেয়ার জন্য কর্মপদ্ধতি এবং কাজের ধরন এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্যাকসিনের জন্য ছয়টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর কোনো ভ্যাকসিন বের করলে ইইউ-এর মাধ্যমে তা পাবে জার্মানি৷ তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ৬০টি ভ্যাকসিন বিতরণ কেন্দ্রে তা পৌঁছে দেবে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
সাধারণ চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে
পুরো ব্যাপারটি ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার৷ সাধারণ চিকিৎসকরা এটা বিতরণ করতে পারবেন না৷ ফলে ধরেই নেয়া যায়, প্রথম দফায় সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না৷ এছাড়া সাধারণ চিকিৎসকদের অফিসে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুবিধা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa
যারা প্রাধান্য পাবেন
বয়স্ক মানুষ এবং যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তারা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িতরাও থাকছেন এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
বার্লিন
বার্লিনের স্থানীয় সরকার ছয়টি টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করছে৷ ফাইজার এবং বায়োনটেকের তথ্য অনুযায়ী, বার্লিনে প্রথম দফায় ৯ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সে হিসেবে প্রথম দফায় বার্লিনের প্রতি ১০ জনের একজন টিকা পাবেন৷ একেকটা কেন্দ্রে দিনে তিন হাজার ৪০০ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বার্লিন৷ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, ভ্যাকসিন যারা নিতে আসবেন তাদের লাইন এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টিকা আসার পর
জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের ইনফেকশাস ডিজিজ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন বিতরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা, টিকা হাতে পাওয়ার পরই করা সম্ভব৷ যখন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা বিভিন্ন বয়সে কীভাবে কাজ করে, কতটা কার্যকর ও নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/ANE
৩০ কোটি ভ্যাকসিন
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য সবচেয়ে সেরা পরিকল্পনা করতে৷ ইইউ-এর মাধ্যমে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন তারা৷
ছবি: Tobias Schwarz/AFP
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এথিক্স কাউন্সিলের প্রধান আলেনা বুইক্স জানিয়েছেন, কোন কোম্পানির ভ্যাকসিনে কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে, কোন বয়সের মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, সেটা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়৷ আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে, তবে এরজন্য বিশেষ ফ্রিজের প্রয়োজন হবে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
প্রয়োজন কর্মী
এই কাজে কেবল চিকিৎসক না, প্রয়োজন নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য কর্মী৷ সেজন্য সেনাবাহিনী এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাছে কর্মী চেয়ে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
গ্রামগুলোতে টিকা সরবরাহের চ্যালেঞ্জ
শহরে যাতায়াত ও অন্য সুবিধা থাকলেও শহর থেকে যারা অনেক দূরে থাকেন, সেসব এলাকায় প্রবীণ মানুষ কীভাবে টিকা দান কেন্দ্রে পৌঁছাবেন সেটা একটা চিন্তার বিষয়৷