ক্রিসমাস মার্কেটে হামলার প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে
অলিভার পিপা/জেডএইচ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ সেই নির্বাচনে গত শুক্রবার ক্রিসমাস মার্কেটে হওয়া হামলার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা৷
বিজ্ঞাপন
মাগডেবুর্গ শহরের ঐ ক্রিসমাস মার্কেটে একটি গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েন এক ব্যক্তি৷ এতে পাঁচজন নিহত হন৷ আহত হন ২৩৫ জন৷ নিহতদের মধ্যে নয় বছর বয়সি এক শিশু আছে৷ বাকি চারজন ৪৫, ৫২, ৬৭ ও ৭৫ বছর বয়সি নারী৷
হামলার পর সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তার নাম তালিব এ. (জার্মান প্রেসকোড মেনে পুরো নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না)৷ তিনি সৌদি আরবের নাগরিক৷ ২০০৬ সাল থেকে তিনি জার্মানিতে বাস করছেন৷ তিনি ইসলাম ধর্মের কট্টর সমালোচক এবং জার্মানির অভিবাসনবিরোধী দল এএফডিকে পছন্দ করেন বলে জানা গেছে৷ ২০১৬ সালে এক্স এ তিনি লিখেছিলেন, ‘‘জার্মানিকে রক্ষায় একই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছি আমি আর এএফডি৷''
শুক্রবারের ঐ হামলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভুয়া তথ্য ছড়ানো শুরু হয়েছিল৷ এতে দাবি করা হয়েছিল যে, হামলাকারীর সংখ্যা পাঁচজন, তাদের মধ্যে এখনও তিনজন পালিয়ে আছেন৷ হামলাকারীরা ২০১৫ ও ২০১৬ সালে শরণার্থী হিসেবে সিরিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছিলেন বলেও গুজব ছড়ানো হয়৷ হামলায় অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়৷
এসব তথ্য ছড়ানোর পেছনে অন্যতম পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন অস্ট্রিয়ার ন্যাশনালিস্ট নেতা মার্টিন জেলনার৷ এরপরই জার্মানির এএফডি দলের রাজনীতিবিদেরা হামলা থেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিলেন৷ তাদের মধ্যে একজন স্ফেন ট্রিচলার৷ তিনি জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের সংসদে এএফডির ডেপুটি চেয়ারম্যান৷ সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘একমাত্র এএফডিই ঐ ব্যক্তিকে অনেক আগেই (নিজ দেশে) ফেরত পাঠাতো৷'' তখনও তারা জানতেন না যে, হামলাকারী তাদের দলই পছন্দ করেন৷
এএফডি নেতা আলিস ভাইডেন, যিনি দলের চ্যান্সেলর প্রার্থীও, তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘এই পাগলামি কবে থামবে?''
জার্মানির কেমনিৎস শহরের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বেনইয়ামিন হ্যোয়নে ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘প্রবণতাটা বেশি বেশি ডানে সরছে৷ ডানপন্থি মতাদর্শ দ্রুত ছড়াচ্ছে৷ বৈশ্বিক মানবাধিকারকে স্বীকার করে গ্রহণ করা খোলা অভিবাসন নীতির দুর্দিন চলছে এখন৷ মাগডেবুর্গের মতো বিপর্যয়মূলক ঘটনা এমন পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে৷''
জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডিপিএ এক প্রতিবেদনে বলেছে, সন্দেহভাজন হামলাকারী হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে সৌদি সরকার আগেই জার্মানিকে জানিয়েছিল৷ এই তথ্যের ভিত্তিতে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্যাজার কঠোর সমালোচনা করেছে বিএসডাব্লিউ দল৷ তারাও অভিবাসন নীতি কঠোর করার পক্ষে৷
সাম্প্রতিক সময় জোলিঙ্গেন ও মানহাইম শহরে ছুরি হামলার ঘটনা উল্লেখ করে বিএসডাব্লিউ দলের নেতা সারা ভাগেনক্নেশট জনগণকে রক্ষায় ‘একটি বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা' প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যোয়নে মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনে নিরাপত্তা ও অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে৷ সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত পূর্ব জার্মানির রাজ্য নির্বাচনগুলোতে এই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল বলে জানান তিনি৷
হ্যোয়নে বলেন, বর্তমানে অভিবাসনকে শুধুমাত্র সম্ভাব্য ও প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ জার্মানির দক্ষ কর্মী সংকট কাটাতে যে অভিবাসন সহায়ক হতে পারে সেই আলোচনা পেছনে পড়ে যাচ্ছে৷ মাগডেবুর্গের ঘটনায় এই আলোচনা আরও পেছনে পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী৷
জার্মানির যত আশ্চর্য সুন্দর ক্রিসমাস মার্কেট
ক্রিসমাস বা বড়দিনের আগে একমাস ধরে জার্মানির বিভিন্ন শহর মিলিয়ে আয়োজিত হয় প্রায় আড়াই হাজার ক্রিসমাস মার্কেট৷ ছবিঘরে দেখুন বাছাই বাজারের ছবি৷
ছবি: Essen Marketing GmbH
ড্রেসডেন: সবচেয়ে পুরোনো ক্রিসমাস মার্কেট
১৪৩৪ সালের একটি নথিতে প্রথমবার ড্রেসডেন ক্রিসমাস মার্কেটের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ এই বাজারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এখানকার স্টোলেন, যা এক রকমের কেক৷ ড্রেসডেনে জার্মান স্টোলেন কেককে বলা হয় স্ট্রিজেল৷ এই বাজারের পুরোনো নামও ছিল এই কেকের নামেই৷
ছবি: picture alliance/dpa/dpa-Zentralbild
নুরেমবার্গ: বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রিসমাস মার্কেট
এই ক্রিসমাস মার্কেট প্রতি বছর উদ্বোধন হয় ক্রিস্টকিন্ডের হাত ধরে এবং এটাই এই বাজারের বৈশিষ্ট্য৷ প্রতি বছর এক কিশোরীকে বেছে নেওয়া হয় ক্রিস্টকিন্ডের ভূমিকার জন্য৷ তার গলায় একটি নির্দিষ্ট কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমেই চালু হয় এই বাজার৷ এই মার্কেটের নামও নুরেমবার্গ ক্রিস্টকিন্ড মার্কেট এবং এই বাজারের শুরু হয় ১৫৩০ সালে৷
ছবি: picture alliance/Geisler-Fotopress
কোলোন: পরিবেশের কথা ভেবে...
এই শহরের ক্রিসমাস মার্কেট মোটেও এত পুরোনো নয়৷ প্রতি বছর এই ক্রিসমাস মার্কেট দেখতে ভিড় জমান প্রায় ৪০ লাখ মানুষ৷ এই বাজারে স্টল দিতে গেলে আপনার পণ্যকে হতে হবে ‘ফেয়ারট্রেড’ সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত৷ এই সার্টিফিকেট যাচাই করে পণ্যগুলি পরিবেশবান্ধব হবার সাথে সাথে শ্রমের ন্যায্য দামের দিকটিও৷
ছবি: picture alliance/Panama Pictures
বার্লিন: রাজধানীতে যেমন
এবছর বার্লিনে মোট ৮০টি ক্রিসমাস মার্কেট রয়েছে, কিন্তু তবুও মনে হয় যেন প্রতি বছরই নতুন বাজার যোগ হচ্ছে৷ এই সময় সবচেয়ে সেরা দৃশ্য দেখতে বার্লিনের রোটেস সাটহাউসের সামনে এই চরকিতে উঠতে পারেন৷ ৫০ মিটার উঁচু এই চরকি থেকে শহরের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়৷
ছবি: Janina Mähliß
ল্যুবেক: উত্তরাঞ্চলে যেমন
জাতিসংঘের ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় আছে জার্মানির উত্তরের এই শহরের নাম৷ ল্যুবেকের ক্রিসমাস মার্কেটটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো৷ নানা ধরনের মিষ্টির জন্য এই শহর বেশ বিখ্যাত৷ বিশেষ করে ক্রিসমাসের সময় সবাই ভিড় করে মারজিপানের মিষ্টি কিনতে৷
ছবি: picture alliance/dpa
লাইপৎজিশ: ঐতিহ্য মেনে...
শহরের পুরোনো অংশে পনেরোশ শতাব্দী থেকে আযোজিত হয়ে আসছে এই ক্রিসমাস মার্কেট৷ এই বাজারে প্রতি বছর প্রায় আড়াইশ দোকান থাকে, যেখানে বিক্রি হয় নানা ধরনের সসেজ, মশলাযুক্ত ওয়াইন বা গ্ল্যুওয়াইন ও মিষ্টি বাদাম৷
ছবি: picture alliance/dpa
ডর্টমুন্ড: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিসমাস ট্রি
৪৫ মিটার উঁচু এই ক্রিসমাস ট্রিতে একটি গাছের বদলে রয়েছে এক হাজার স্প্রুস গাছ৷ অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হয়ে যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রিসমাস ট্রির আয়োজন৷ তবেই সঠিক সময়ে নভেম্বরে জনগণ উপভোগ করতে পারবেন এই বাজারের আমেজ৷
ছবি: picture alliance/dpa
এসেন: আন্তর্জাতিক ছোঁয়া
জার্মানির নর্থ রাইন ভেস্টফালেন রাজ্যের এই শহরের ক্রিসমাস মার্কেটে অন্তত ২০টি দেশের পণ্য পাওয়া যায় ক্রিসমাস মার্কেটের ২৫০টি দোকানে৷ নানা দেশের মশলাপাতি থেকে ঘর সাজানোর সামগ্রী, সবই পাবেন এখানে৷ এই সময়ে বিশেষ আলোর সাজও অনেক মানুষকে এই শহরে টেনে আনে৷
ছবি: Essen Marketing GmbH
লিনডাউ: ক্রিসমাস পানির কাছে
অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের অদূরেই আল্পস পর্বতমালার গায়ে এই জার্মান শহর৷ এই শহরের ক্রিসমাস মার্কেট আয়োজিত হয় লেক কন্সটান্সের পাশে৷ আর পানির কাছে বলেই সেন্ট নিকোলাউস অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বরের পর এই লেকে সাঁতার কাটার চল রয়েছে৷ এই ধারার নাম ‘নিকোলাউসশুইমেন’৷ কিন্তু মাইনাস ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কতজনের সেই সাহস হয়, তা দেখার বিষয়৷