বার্লিনে ক্ষমতাকেন্দ্রে পরিবর্তনের মাঝেই করোনা সংকট গুরুতর আকার ধারণ করছে৷ হাসপাতালগুলির উপর বাড়তি চাপের পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য জোট সরকারের শরিকেরা নতুন আইনি খসড়ার প্রস্তাব দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাস যে মানুষের সুবিধা-অসুবিধার ধার ধারে না, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ যেমন জার্মানিতে সরকার বদলের সময়ে বেড়ে চলা সংক্রমণের হার বিদায়ী ও সম্ভাব্য সরকারের জন্য গভীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ জনসংখ্যার একটা বড় অংশ করোনা টিকা নেওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ ফলে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সংগঠন আরও কঠিন পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে৷ নতুন করে সংকট এড়াতে বিশেষজ্ঞরা আরও বেশি মানুষকে দ্রুত করোনা টিকার আওতায় আনার পক্ষে সওয়াল করছেন৷ শিশু চিকিৎসকরা দ্রুত ১২ বছরের কমবয়সি শিশুদের জন্য করোনা টিকার অনুমোদনের আশা করছেন৷ ইউরোপীয় ওষুধ সংস্থা ইএমএ বুধবারই জানিয়েছে, যে বড়দিনের আগেই পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশু-কিশোরদের জন্য সেই অনুমোদন চূড়ান্ত হয়ে যাবে৷
জার্মান হাসপাতাল সংগঠনের প্রধান গেরাল্ড গাস বলেন, বর্তমান প্রবণতা চালু থাকলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রোগীদের সংখ্যা আবার তিন হাজার ছুঁতে পারে৷ বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৮০০ রোগী আইসিইউ ও চার হাজার ৩০০ মানুষ হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন৷ উল্লেখ্য, করোনা সংকটের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির সময়ে জার্মানিতে প্রায় পাঁচ হাজার ৭০০ মানুষ আইসিইউ-তে ভর্তি ছিলেন৷ এমন অবস্থায় ডাক্তার ও চিকিৎসা কর্মীদের উপর মারাত্মক চাপ দেখা যায়৷
জার্মানিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার মাঝে এমন সংকটের মুখে রাজনৈতিক নেতারাও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবার প্রয়োজনীয়তা টের পাচ্ছেন৷ বিদায়ী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান আগামী ২৫শে নভেম্বরের পর জাতীয় স্তরে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আর না বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছেন৷ কিন্তু রাজ্য সরকারগুলির আশঙ্কা, এমন আইনি রক্ষাকবচ ছাড়া প্রয়োজনে জরুরি পদক্ষেপ নেবার ক্ষেত্রে প্রশাসন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে৷ সেই পরিস্থিতি এড়াতে সম্ভাব্য জোট সরকারের তিন শরিক দল একযোগে এক সমাধানসূত্র পেশ করেছে৷ বুধবার এসপিডি, এফডিপি ও সবুজ দল জরুরি অবস্থান মেয়াদ না বাড়িয়ে বিকল্প আইনি কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে৷ এর আওতায় ২৫শে নভেম্বরের পর ২০২২ সালের ২০শে মার্চ পর্যন্ত জাতীয় স্তরে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিয়ম চালু রাখা হবে৷ নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই সংসদে সেই প্রস্তাব অনুমোদনের উদ্যোগ নিচ্ছে এই তিন দল৷ তবে রাজ্যগুলি সেই আইনি খসড়ার খুঁটিনাটি বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানাতে চায়৷
ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় জার্মানিতে করোনা টিকাপ্রাপ্ত মানুষের অনুপাত অপেক্ষাকৃত কম৷ ইটালি, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মতো দেশের মতো সুযোগ সত্ত্বেও টিকা না নেওয়া মানুষের উপর চাপও তেমন নেই৷ অনেক আবেদন-নিবেদন, প্রচার অভিযান সত্ত্বেও এমন মানুষদের সহজে টিকা নিতে রাজি করানো যাচ্ছে না৷ বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য বুস্টার শটের ব্যবস্থা করতেও বিলম্ব ঘটছে৷ ফলে শীতের মাসগুলিতে করোনা সংকট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা অনেক কাল ধরে পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)
জার্মানিতে ব্যালট বাক্স থেকে সরকার গঠনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া
জনগণের ইচ্ছার ন্যায্য প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে জার্মানির নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে উঠেছে৷ অনেক নাগরিকেরও সব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেই৷ এমনই কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Kalker
নেই আলাদা ভোটার তালিকা
জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সব মানুষকেই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে নাম নিবন্ধন করতে হয়৷ তাই সেই তালিকা থেকে শুধু জার্মান নাগরিকদের বেছে নিয়ে ডাকযোগে ভোট দেবার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়৷ জাতীয় পরিচয়পত্র ও সেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে নির্ধারিত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গেলেই ভোট দেওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Güttler
ডাকযোগে ভোট দেবার সুযোগ
ভোটার হিসেবে আমন্ত্রণপত্র পেলে সশরীরে ভোট না দিলেও চলবে৷ কোনো কারণ না দেখিয়ে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগেভাগেই ভোট দেওয়া সম্ভব৷ যে সব জার্মান নাগরিক বিদেশে থাকেন, তারাও জার্মানিতে তাদের সর্বশেষ বাসস্থানের পৌরসভার মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট সংগ্রহ করতে পারেন৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/picture alliance
নাগরিকদের দুটি করে ভোট
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা দুটি করে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ প্রথমটি নির্বাচনি কেন্দ্রে সরাসরি প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের কোনো দলের জন্য৷ প্রার্থী ও দল ভিন্ন হলেও চলবে৷ দ্বিতীয় তালিকায় দলীয় সমর্থনের অনুপাতের ভিত্তিতে সংসদে অর্ধেক আসনে প্রার্থী স্থির করা হয়৷
ছবি: C. Ohde/blickwinkel/McPHOTO/picture alliance
‘বোনাস’ ভোটের জটিল হিসেব
ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯ জন স্থানীয় প্রার্থীর সরাসরি এবং দ্বিতীয় ভোটের ভিত্তিতে বাকি ২৯৯ জনের দলীয় মনোনয়ন অনুযায়ী সংসদে আসন পাওয়ার কথা৷ কিন্তু বাস্তবে সংসদে সদস্যসংখ্যা ৫৯৮ ছাপিয়ে যায়৷ কোনো দল যদি শতকরা হিসেবে দ্বিতীয় ভোটের তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রথম ভোট পায়, তখন জটিল এক নিয়মের ভিত্তিতে সেই দল সংসদে কিছু বাড়তি আসন লাভ করে৷ তখন ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে বাকি দলগুলিকেও বেশি আসন দিতে হয়৷
সব দল সংসদে স্থান পায় না
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানির গণতন্ত্রের দুর্বলতা কাটাতে সংবিধান প্রণেতারা অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলির ক্ষমতা সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় ভোটের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ না পেলে কোনো দল সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগে স্থান পায় না৷ তবে নির্বাচনি কেন্দ্রে কমপক্ষে তিনটি আসন পেলেও সংসদীয় দলের মর্যাদা পাওয়া সম্ভব৷
ছবি: Tim Brakemeier/dpa/picture alliance
ভোটগ্রহণের দিন রোববার
জার্মানিতে ভোটগ্রহণের জন্য সাধারণত রোববারের দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়৷ নাগরিকেরা ছুটির দিনে নির্বিঘ্নে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হলে গণনা শুরু হয়৷ শিল্পোন্নত দেশ হয়েও জার্মানি নিরাপত্তার খাতিরে এখনো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে না৷ কাগজের ব্যালট গণনার পর দ্রুত ফলাফল জানতে অবশ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Stratenschulte
ভোটের ফল প্রকাশের পর জনগণ ‘ক্ষমতাহীন’
নির্বাচনি প্রচারের শেষে ভোট দেবার সময় পর্যন্ত ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী ও দলকে বেছে নিতে পারেন৷ তবে জার্মানিতে সাধারণত জোট সরকার ক্ষমতা গড়ে৷ নির্বাচনের পর আসনসংখ্যার বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী দল জোট গড়ার উদ্যোগ শুরু করে৷ সাধারণত প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর নির্দিষ্ট শরিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ দলীয় কর্মসূচি নিয়ে দরকষাকষির পর জোট সরকারের ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি স্থির হয়৷