অন্যান্য যে কোনো শিল্পের মতোই যৌনশিল্পের বিধিনিয়ম নির্দেশ করে দেয় সরকার; যৌনকর্মীদের শোষণ প্রতিরোধ ও গ্রাহকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে; যৌনব্যবসায় থেকে কর আদায় করে৷ তা সত্ত্বেও নানা সমস্যা আছে ও থাকবে৷
বিজ্ঞাপন
শুধু জার্মানি কেন, ইউরোপ জুড়ে গণিকাবৃত্তি ব্যাপক ও অনেক ক্ষেত্রেই দৃষ্টিগোচর, তা সে প্যারিসের বোয়া দ্য বোলোনিয়েতেই হোক আর আমস্টারডামের গ্রাখটেনের ধারেই হোক কিংবা হামবুর্গের রিপারবানেই হোক৷
অপরদিকে গণিকাবৃত্তির ভালোমন্দ নিয়ে নৈতিক বিতর্ক চিরকাল চলেছে ও চলবে৷ আসল প্রশ্ন হলো, সমাজ ও সরকার গণিকাবৃত্তির ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নেবে৷ সুইডেনে ১৯৯৯ সালে আইন করা হয় যে, যৌনসেবা কেনাটা অপরাধ কিন্তু বেচাটা অপরাধ নয় – অর্থাৎ গণিকা স্বয়ং কোনো অপরাধ করছেন না, অপরাধ করছে তার খদ্দের! জার্মানির প্রখ্যাত নারীবাদি অ্যালিস শোয়ারৎসার জার্মানিতেও এ ধরনের একটি আইন চালু করতে চান৷ জার্মানিতে ২০০৯ সালে আর ২০১৪ সালে দু-দু'বার শোনা গেছে যে, গণিকার কাছ থেকে যৌনসেবা নেওয়ার জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বিধান করে আইন প্রণয়ন করা হবে – কিন্তু সে পরিকল্পনা আজও বাস্তবায়িত হয়নি৷ অপরদিকে জার্মানির সুপরিচিত গণিকা সংগঠন ‘হাইড্রা'-র মতো বহু গোষ্ঠী এ ধরনের কড়াকড়ির বিরুদ্ধে৷
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
পতিতাবৃত্তি নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পেশা৷ কিন্তু কোনো যুগে, কোনো দেশেই মানুষ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি, আজও করে না৷ তবে বিশ্বের বহু দেশেই পতিতাবৃত্তি বৈধ এবং সেখানে যৌনকর্মীরা নিয়মিত আয়করও দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
হল্যান্ডের ‘পতিতাপল্লী’ পর্যটকদের মূল আকর্ষণ
নেদারল্যান্ডসে পতিতাবৃত্তি শুধু বৈধ নয়, ইউরোপের এই দ্বীপদেশটির পতিতাপল্লী সত্যিকার অর্থেই বিশ্ববিখ্যাত৷ ঐ ‘রেডলাইট জোন’ দেখতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসে আমস্টারডামে৷ নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও দেহব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ৷
ছবি: picture-alliance/AP
জার্মানি এবং ফ্রান্সে কঠোর আইন
জার্মানি এবং ফ্রান্সেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’দেশেই যৌনকর্মীদের এই ব্যবসা করতে হয় কঠোর আইন মেনে৷ জার্মানির কিছু শহরে এখনো যৌনকর্মীরা রাস্তায় নেমে খদ্দের ডাকতে পারেন না, এভাবে খদ্দের সংগ্রহ করা সেসব জায়গায় আইনত দণ্ডনীয়৷ ফ্রান্সেও ২০১৪ সালে এমন একটা আইন হয়েছে, যা মেনে যথেচ্ছ দেহব্যবসা করা খুব কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইডেন আর নরওয়েতেও নিয়ন্ত্রিত পতিতাবৃত্তি
ফ্রান্স ২০১৪ সালে যে আইন প্রবর্তন করে, সেটা প্রথম চালু হয়েছিল সুইডেনে, ১৯৯৯ সালে৷ এ কারণে আইনটি ‘সুইডিশ মডেল’ হিসেবে পরিচিত৷ এ আইনে যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষা করে দালালদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’টি দেশে ১৯ বচর বয়স না হলে কেউ দেহব্যবসায় আসতে পারেন না৷ যৌনকর্মীদের যাতে কোনো যৌনরোগ না হয়, কিংবা তাঁদের মাধ্যমে খদ্দেরদের মাধ্যে যাতে এইডস, সিফিলিস বা অন্য কোনো রোগ ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যৌনকর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হয়৷ অবশ্য শুধু সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতে নয়, জার্মানিতেও ঐ একই নিয়ম৷
ছবি: AFP/Getty Images
গ্রিস এবং তুরস্কে পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রিত
গ্রিস এবং তুরস্কেও পতিতাবৃত্তি পুরোপুরি বৈধ, তবে দেহ ব্যবসার আইন খুব কঠিন৷ জার্মানির মতো এই দু’টি দেশেও যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা করা বাধ্যতামূলক৷ এছাড়া যৌনকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান কিনা, তা সবসময় তদারক করা হয়৷ স্বাস্থ্যকার্ডেই লেখা থাকে স্বাস্থপরীক্ষার সব তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
যে দুই দেশের পতিতাপল্লীতে ধীরে চলা মানা
ব্রিটেন আর আয়ারল্যান্ডের পতিতাপল্লী বা ‘রেড লাইট জোন’-এর প্রায় সব আইনই জার্মানির মতো ছিল৷ তবে সম্প্রতি ব্রিটেনে কিছু বেসরকারি সংস্থার দাবিতে এতে নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে৷ ব্রিটেনের রেড লাইট জোন-এ এখন যেমন ধীরে গাড়ি চালানো নিষেধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাউকে জোর করে পতিতা বানানো যায় না
ইউরোপের সব দেশেই পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ৷ তবে আইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশভেদে একটু হলেও অন্যরকম৷ যেমন স্পেন এবং পর্তুগালেও দেহব্যবসা বৈধ৷ কিন্তু স্পেনে কাউকে জোর করে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্মী বানানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
দক্ষিণ অ্যামেরিকায় অন্যরূপ
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অধিকাংশ দেশেই যৌনব্যবসা বৈধ৷ তবে কিছু দেশে মাফিয়া এবং মানবপাচার বড় সমস্যা হয়ে ওঠায়, এই ব্যবসার ওপর কড়াকড়ি এবং তদারকি বেড়েছে৷ দেহব্যবসাকে মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে রয়েছে কঠোর আইন৷ তারপরও দেশ দু’টিতে মাফিয়া চক্রের আধিপত্য রয়ে গেছে৷
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP/Getty Images
প্রতিবেশী হয়েও নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আলাদা
নিউজিল্যান্ডে যৌনব্যবসা একেবারেই বৈধ৷ তবে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজ্যে এই ব্যবসা এখনো অবৈধ৷ ২০০৩ সালে আইন করে সব প্রাপ্তবয়স্কের জন্য যৌনব্যবসাকে বৈধ করে দেয় নিউজিল্যান্ড৷
ছবি: picture-alliance / rolf kremming
এশিয়ায় লুকোনো পতিতাবৃত্তি
ভারতের পতিতাবৃত্তি বৈধ৷ তারপরও পতিতাবৃত্তি চলে আড়ালে-আবডালে৷ রাস্তায় নেমে পতিতারা খদ্দের সংগ্রহ করতে পারেন না৷ খদ্দেররা অর্থের বিনিময়ে যৌনক্ষুধা মেটাতে যায় রাতের আঁধারে৷ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে পতিতালয় কমলেও মাসাজ পার্লার এবং আবাসিক হোটেলে প্রায়ই চলে পুলিশি অভিযান৷ খদ্দেরসহ পতিতা আটকের খবর আসে তখন৷ থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সে পতিতাবৃত্তি চলে অবাধে৷ তবে দেশ দুটিতে এই ব্যবসা আইনের চোখে অবৈধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
মোট কথা, যৌনশিল্প বা যৌনকর্মীরা বহুদিন হলো ট্যাবু জোনের ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন৷ যৌনকর্মীরা একটি পরিষেবা দেন, গণিকালয়ের মালিকরা এক ধরনের শিল্পপতি, যৌনসেবার গ্রাহকরা অন্য যে কোনো পণ্যের মতো – শুধু গ্রাহকই৷ এখন দেখতে হবে যাতে এই ‘শিল্পে' শোষণ বা (মানুষ পাচারের মতো) মানবাধিকার ভঙ্গের ঘটনা না ঘটে; আইন-শৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের কোনো হানি না হয়৷
ইতিহাস যা বলে
পশ্চিম জার্মানিতে গণিকাদের নাম লেখানো আর বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যজনিত পরীক্ষার নিয়ম গোড়া থেকেই ছিল৷ বাভেরিয়ায় শুধু এসটিডি বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ, অর্থাৎ সংক্রামক যৌন রোগই নয়, ১৯৮৭ সাল থেকে নিয়মিত এইচআইভি টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়৷ কিন্তু বহু যৌনকর্মী নাম রেজিস্ট্রি বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দু'টোর কোনোটাই করাননি৷ তবে আশির দশকের শেষে এইডস ভীতির ফলে যৌন ব্যবসায়ে কিছুটা ভাটা পড়ে বৈকি – এমনকি হামবুর্গের প্রখ্যাত ‘ইরোস সেন্টার' বন্ধ হয়ে যায়৷
২০০১ সাল অবধি ‘গণিকাবৃত্তির প্রবর্ধন' জার্মানিতে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো৷ ফলে গণিকালয়ের মালিকরা সারাক্ষণ একটা আইনগত ঝুঁকির মুখে থাকতেন৷ অধিকাংশ গণিকালয় চালানো হতো বার বা পানশালা হিসেবে; সাথে থাকত ঘণ্টায় ভাড়ার কামরা৷ কিছু কিছু পৌর প্রশাসন গণিকাদের রাস্তায় খদ্দের খোঁজা রোধ করার জন্য বেশ কয়েক তলা উঁচু বাড়িও তৈরি করে দিয়েছিলেন, যেখানে গণিকারা বিনা দালালে ঘর ভাড়া করে গ্রাহক নিতে পারতেন৷ এই সব ‘গণিকাদের ডর্মিটরি' আজ ইরোস সেন্টারে পরিণত হয়েছে৷
যৌন খেলনার ইতিহাস
বর্তমান যুগে সেক্স টয় বা যৌন খেলনা, যেমন ভাইব্রেটরের মতো টয়গুলো কেবল একটা উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়, আর তা হলো আনন্দ৷ যদিও ভাইব্রেটরের আবিষ্কার হয়েছিল নারীদের যৌনতার ওপর পুরুষদের নিয়ন্ত্রণের জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Spata
সবই প্রাকৃতিক: বিশ্বের প্রথম ডিলডো
কাঁচা কলা হোক বা উটের শুকনো গোবর- প্রাচীন কালে গ্রিস ও মিশরের মানুষ এগুলোর ওপর পিচ্ছিল পর্দার্থের প্রলেপ দিয়ে যৌন খেলনা বানিয়ে নিত৷ এছাড়া আরও বিকল্প ছিল বাঁকানো পাথর, চামড়া বা কাঠের বস্তু৷ বিশ্বের প্রথম ‘ডিলডো’ কিন্তু জার্মানিতেই আবিষ্কার হয়েছিল, তাও আবার ২৮,০০০ বছর আগে৷ ২০ সেন্টিমিটার লম্বা এই পাথরটি কেবল যে ‘সেক্স টয়’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো তা-ই নয়, আগুন জ্বালানোর কাজেও ব্যবহৃত হতো৷
ছবি: Phallus von der Hohle Fels/J. Lipták/Universität Tübingen
খুলে দাও
ডিলডো শব্দটি প্রথম এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ডিলাটারে’ থেকে, ১৪০০ শতাব্দিতে৷ এর মানে হচ্ছে খুলে দাও৷ আর ইতালিতে দিলেত্তো মানে খোল৷ ইতালীয় রেনেঁসার একশ বছর পর চামড়া ও অলিভ অয়েল দিয়ে যৌন খেলনা তৈরি হতো৷ তবে ইতিহাস বলে শুনতে যতটা আনন্দদায়ক হওয়ার কথা খেলনাটি ততটা ছিল না৷
ছবি: Vassil
নারীর আকাঙ্ক্ষা?
দীর্ঘদিন ধরে সহবাস মানেই ছিল পুরুষের চরম উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছানো৷ পুরুষ শাসিত সেসব সমাজে নারীদের ‘অরগাজম’ বা তাদের তৃপ্তি দেয়াটাকে অবহেলা করা হতো৷ যেসব নারীর যৌন চাহিদা বেশি থাকত, তাদের হিস্টিরিয়া রোগী মনে করত পুরুষরা৷ তাদের জন্য নানা ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল৷
ছবি: Fleury/Siegfried Giedion
নারীদের যৌন চাহিদার চিকিৎসা
নারীদের এ ধরনের ‘হিস্টিরিয়া’ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল৷ একটা নির্দিষ্ট বয়সে প্রায় সব নারীর মধ্যেই দেখা যাচ্ছিল৷ এর ফলে কখনো কখনো অনেকের জ্বরও হতো৷ এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তাররা এই টেবিলে যোনী ম্যাসাজের পরামর্শ দিতেন৷ কেননা, সেসময় হস্তমৈথুন ছিল নিষিদ্ধ৷
ছবি: George Henry Taylor
ডিলডো যখন ভাইব্রেটরে পরিণত হলো
ধনী নারীদের যে কোনো রোগের চিকিৎসা ছিল, কেননা, ডাক্তাররা অনেক অর্থ পেতেন৷ আর তাই তারা কাজে লেগে গেলেন কীভাবে তাদের যৌন হিস্টিরিয়ার চিকিৎসা করা যায়৷ ১৮৮০-র দশকে ভিক্টোরিয়ার আমলে ড. জোসেফ মরটিমার প্রথম ইলেকট্রো ম্যাকানিকেল ভাইব্রেটর আবিষ্কার করেন৷ এই যন্ত্রের ফলে ১০ মিনিটেই চরম উত্তেজনায় পৌঁছে যেতেন নারীরা৷
ছবি: Collections of The Bakken Museum, Minneapolis, USA
সুখী গৃহিনীরা
বিংশ শতাব্দিতে বিভিন্ন কোম্পানি ভাইব্রেটর বানানো শুরু করে৷ স্বাস্থ্য সেবা হিসেবে বিজ্ঞাপন ছাপা হতে লাগলো বিভিন্ন ম্যাগাজিনে৷ ডাক্তাররা এতে মোটেও খুশি হননি৷ অনেকের মনে হলো, অরগাজমের জন্য নারীদের বুঝি আর পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজন থাকবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Grimm
6 ছবি1 | 6
গণিকাবৃত্তি আর ‘নৈতিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ' নয়
২০০২ সালের গণিকাবৃত্তি আইনের আগে গণিকাবৃত্তিকে ‘নৈতিক শৃঙ্খলার বিরোধী' বলে গণ্য করা হতো, যার নানা আইনগত ফলশ্রুতি ছিল৷ নীতিবিগর্হিত চুক্তির কোনো বৈধতা নেই, কাজেই গণিকারা বকেয়া পারিশ্রমিকের জন্য মামলা করতে পারতেন না; তাদের ঘর বা ফ্ল্যাটভাড়ার চুক্তির কোনো কার্যকরিতা থাকত না; সেখানে গণিকাবৃত্তি ঘটলে, বার কিংবা হোটেলের লাইসেন্স বাতিল করা যেত৷
যৌনকর্মীদের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন বা যৌন রোগ পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয় ২০০১ সালে৷ ২০০২ সালে গণিকাদের নিয়মমাফিক ওয়ার্ক কনট্র্যাক্ট বা কাজের চুক্তির ব্যবস্থা করা হয় – যদিও দেখা যায় যে, যৌনকর্মীরা নাম লিখিয়ে নথিভুক্ত হতে বিশেষ আগ্রহী নন৷ অপরদিকে ২০০০ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ইউক্রেন ইত্যাদি দেশের জার্মান কনসুলেটগুলি তাদের ভিসার নিয়মাবলী আরো শিথিল করার ফলে মানুষ পাচার বাড়ে ও বহু যৌনকর্মী বিদেশ থেকে জার্মানিতে আসেন৷ জার্মানিতে মোট যৌনকর্মীর সংখ্যা চার লাখের কাছাকাছি, বলে ধরা হয়৷ তাদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নাকি মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা বিদেশি৷
সুসংগঠিত জার্মানি
মানুষের যৌন প্রয়োজনকে স্বাভাবিক ও বুনিয়াদি প্রয়োজন হিসেবে মেনে নিলে – ও তার সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া যুক্ত হলে, ফলাফলটা মাঝেমধ্যে চমকপ্রদ হয়৷ যেমন বন শহরে একটি বিশেষ রাস্তায় পথ-গণিকাবৃত্তির জন্য পার্কিং মিটারের মতো মিটার লাগানো আছে৷ তথাকথিত ‘স্ট্রিটওয়াকার'-রা সেখানে কয়েন ফেলে সারারাতের জন্য টিকিট নিতে পারেন ও তাদের যৌনসেবার গ্রাহক সংগ্রহ করতে পারেন৷
অপরদিকে বিভিন্ন এজেন্সি বা সংস্থা যৌনসেবার প্রবীণ বা প্রতিবন্ধী গ্রাহকদের সঙ্গে যৌনকর্মীদের যোগাযোগ করিয়ে দেয়৷ অতীতে কোলোনের একটি সুবৃহৎ গণিকালয় ঘোষণা করেছিল যে, ৬৬ বছরের বেশি বয়সের প্রবীণ নাগরিকরা দুপুরের দিকে একটি বিশেষ ডিসকাউন্ট বা ছাড় পাবেন৷