নতুন এক সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী জার্মানিতে অতীতে যা ধারণা করা হয়েছিল তার চেয়েও বেশ কয়েক লাখ বেশি প্রাণী গবেষণাগারে হত্যা করা হয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে, এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে ইচ্ছা করে প্রাণী হত্যার সংখ্যা কম দেখানো হয়৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে প্রতি বছর লাখ লাখ প্রাণী গবেষণার জন্য জন্ম দেয়া হয় এবং তারপর সেগুলো ব্যবহার না করেই আবার মেরে ফেলা হয়৷ এক সরকারি প্রতিবেদনে জানা গেছে এই তথ্য৷ কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে জার্মানিতে ৩৯ লাখ প্রাণী হত্যা করা হয়েছে৷ গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি এক কোটি ছাব্বিশ লাখ৷
সবুজ দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাওয়া হলে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে এবং একটি জার্মান পত্রিকাকেও তা সরবরাহ করা হয়েছে৷
জার্মান সবুজ দলের প্রাণী সুরক্ষা নীতির প্রধান রেনেটা ক্যুনাস্ট দাবি করেছেন, অতীতে শুধুমাত্র গবেষণায় ব্যবহৃত প্রাণী হত্যার সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র আড়াল করতে চেয়েছে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার৷ জার্মান কৃষি মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছিল যে, ২০১৭ সালে ২৮ লাখ প্রাণী গবেষণাগারে হত্যা করা হয়েছিল৷
বাদুড় থেকে প্যাংগোলিন থেকে মানুষ
বাদুড় সম্ভবত নভেল করোনা ভাইরাসের উৎস হলেও প্যাংগোলিন যে সেই ভাইরাস বহন করে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ এই ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য জানতে পারছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H.H. Young
করোনার যোগসূত্র প্যাংগোলিন
‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণার ফল অনুযায়ী, প্যাংগোলিনই সম্ভবত করোনা ভাইরাস, বাদুড় ও মানুষের মধ্যে যোগসূত্র৷ এই প্রাণী ও মানুষের শরীরে কোভিড-১৯-এর জিনগত গঠনের মধ্যে প্রায় ৮৫ থেকে ৯২ শতাংশ মিল পাওয়া গেছে৷ উল্লেখ্য, লুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসেবে প্যাংগোলিনই সবচেয়ে বেশি চোরাকারবার হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
বাদুড়ের কেন্দ্রীয় ভূমিকা
এর আগেও বাদুড়বাহিত ভাইরাস বিশ্বে মহামারি ঘটিয়েছে৷ এবোলা এবং সার্স ও মার্সের মতো করোনা ভাইরাসের উৎসও যে বাদুড়, তা ধরে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ বিশ্বের সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই বাদুড় হওয়ায় তাই বিস্ময়ের কিছু নেই৷ গোটা বিশ্বে প্রায় ১,৩০০ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে এবং কয়েকটি প্রজাতির আয়ু ৪০ বছর পর্যন্ত ছুঁতে পারে৷ তাছাড়া বাদুড়ই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেটি পাখির মতো উড়তে পারে৷
ছবি: Narayan Prasad Koju
বাদুড় থেকে সরাসরি মানুষের শরীরে নয়
গোটা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে ব্যস্ত, তখন অভিযোগের তির বাদুড়ের দিকেই যাচ্ছে৷ তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর জন্য সরসরি বাদুড়কে দায়ী করা যায় না৷ টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর ইয়ান শিয়াং ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাধ্যমেই এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে৷ অতীতে সিভেট বা গন্ধ গোকুল এবং উট এমন ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে কাজ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library/J. Daniel
প্যাংগোলিনের ভূমিকা আবিষ্কার
ফেব্রুয়ারির শুরুতে দক্ষিণ চীন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রথম প্যাংগোলিনের সম্ভাব্য ভূমিকার কথা উঠে আসে৷ প্রায় এক হাজার বন্যপ্রাণীর নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকদের সন্দেহ আরো জোরালো হয়ে৷ ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে মালয়েশিয়া থেকে চীনে অসুস্থ প্যাংগোলিনের চোরাচালানের সময় করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে৷ তবে প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে আরো গবেষণা প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H.H. Young
এমন মহামারি বিরল
লন্ডনের কিংস কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান স্টুয়ার্ট নিল ডিডাব্লিউ-কে বলেছেন, এমন মহামারি সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাষ দেওয়া সত্যি কঠিন৷ তবে তাঁর মতে, এত বড় বিপর্যয় ঘনঘন হবার আশঙ্কা কম৷ প্রাণীর তুলনায় অন্য সূত্র থেকেই মানুষ অনেক বেশি নতুন ভাইরাস গ্রহণ করে৷ কোনো প্রাণীর শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা কাঠামোর উপর কোনো ভাইরাসের প্রভাব নির্ভর করে৷ সব প্রাণী সব ভাইরাসে মোটেই কাবু হয় না, বলেন নিল৷
ছবি: Reuters/Str
মানুষ প্রাণীর ভিটেমাটি কেড়ে নিচ্ছে
মানুষ যত বেশি বণ্যপ্রাণীর নিজস্ব চারণভূমি দখল করে নিচ্ছে, এমন মহামারির আশঙ্কা ততই বাড়ছে৷ এতকাল বেশিরভাগ প্রাণী এবং সেগুলির শরীরে জমা ভাইরাস বনেজঙ্গলেই সীমিত থাকতো৷ মানুষ এই সব প্রাণীর সংস্পর্শে তেমন আসতো না৷ কিন্তু বেড়ে চলা জনসংখ্যা ও জঙ্গল সাফ করে মানুষের বসতি, কলকারখানা ও কৃষিকাজের ফলে সেই পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে৷ ফলে মারাত্মক ভাইরাস মানুষের শরীরেও প্রবেশ করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Damanik
6 ছবি1 | 6
ক্যুনাস্ট বলেন, ‘‘এর অর্থ হচ্ছে পরিসংখ্যানে যদি একটি প্রাণীর কথা বলা হয়ে থাকে, তাহলে বাস্তবে অন্তত আরো একটি বা দু'টি প্রাণী হত্যা করা হয়েছিল৷’’
গবেষণার জন্য উৎপাদিত অনেক প্রাণী সাধারণত মেরে ফেলা হয়, কেননা, সেগুলো গবেষকদের চাহিদা মতো হয় না৷
২০১৭ সালে জার্মানিতে গবেষণার কাজে সবচেয়ে বেশি প্রাণী উৎপাদন করা হয়েছে৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেগুলোর অধিকাংশই ছিল ছোট ইঁদুর৷ এছাড়া ২৫৫,০০০ বড় ইঁদুর, ১৪০,০০০ মাছ, ৩,৫০০ বানর, ৩,৩০০ কুকুর এবং ৭১৮টি বিড়ালও ছিল৷
এসব প্রাণীর ৫০ শতাংশ বিভিন্ন গবেষণামূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষায়, ২৭ শতাংশ নতুন ঔষধ পরীক্ষায় এবং ১৫ শতাংশ সুনির্দিষ্ট কোনো রোগ নিয়ে গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে৷
উল্লেখ্য, জার্মানিতে প্রসাধন শিল্পে প্রাণী নিয়ে গবেষণা ১৯৯৮ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ আর পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০০৪ সাল থেকে এ ধরনের গবেষণা নিষিদ্ধ৷
প্রতিবেদন: এলিজাবেথ শ্যুমাখার/এআই
বাদুড় সম্পর্কে কতটা জানেন?
করোনা সংকটের কারণে বর্তমানে বাদুড়ের ভাবমূর্তি মোটেই ভালো নয়৷ কিন্তু ভুতুড়ে হলেও রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার বিস্ময়কর এক প্রাণী৷ এই প্রাণী সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৭ই এপ্রিল আন্তর্জাতিক বাদুড় কদর দিবস পালিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
শুধু অদ্ভুত গুহাবাসী নয়
অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে মেক্সিকো পর্যন্ত বাদুড়ের দেখা মেলে৷ কখনো গাছে ঝুলন্ত অবস্থায়, কখনো উঁচু পাহাড়ের উপর, গুহার মধ্যে গোপন আস্তানায়, পাহাড়ের খাঁজে অথবা ছাদের উপর বাদুড় চোখে পড়ে৷ অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশেই এই প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে৷ অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণী এমন কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না৷ স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রায় ২০ শতাংশই বাদুড়৷
ছবি: Imago/Bluegreen Pictures
ডুমুরখেকো বাদুড়
সাদা রংয়ের এই বাদুড় হেলিকোনিয়া গোত্রের এক উদ্ভিদের মধ্যে বেশ আরাম করছে৷ প্রায় ১,১০০ প্রজাতির বাদুড়ের মধ্যে মাত্র ৫টির রং সাদা৷ চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এই প্রজাতিকে কখনো ‘মার্শমেলো পাফ’ নামে ডাকা হয়৷ মূলত ডুমুর খেয়েই বেঁচে থাকে এই বাদুড়৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
রকমারি প্রজাতির বাদুড়
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভুতুড়ে প্রাণী হিসেবে বদনাম সত্ত্বেও মাত্র তিনটি প্রজাতির বাদুড় সত্যি রক্ত চোষে৷ এমনকি ধারালো দাঁত দিয়ে প্রথমে শিকারের লোম কামিয়ে ফেলে তারপর রক্ত চোষার কাজ শুরু করে৷ ঘুমন্ত গরু ও ঘোড়া এমন বাদুড়ের প্রিয় শিকার৷ এমনকি মানুষের উপর হামলা চালানো ও রোগ ছড়িয়ে দেবার ক্ষেত্রেও এই প্রজাতি পারদর্শী৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
রাতের মতো অন্ধ?
শব্দ তরঙ্গের প্রতিফলন ধরতে বাদুড়ের বিশাল কানের প্রয়োজন হয়৷ বেশিরভাগ প্রজাতির বাদুড় চোখে কম দেখে বলে রাতে শিকারের জন্য শরীরের নিজস্ব ‘সোনার’ যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল৷ এই প্রাণী কণ্ঠের মাধ্যমে অতি উচ্চ তরঙ্গের শব্দ সৃষ্টি করে সামনের দিকে নিক্ষেপ করে৷ সামনের বস্তুতে আঘাত খেয়ে প্রতিধ্বনি ফিরে এলে বড় কানে তা ধরা পড়ে৷ এভাবে মনের মধ্যে আশেপাশের পরিবেশের প্রায় নিখুঁত মানচিত্র এঁকে নিতে পারে বাদুড়৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library/J. Daniel
বাদুড় ছাড়া আভোকাডো, আম অথবা কলা হতো না
অনেক উদ্ভিদের পরাগায়নের ক্ষেত্রে বাদুড় মূল ভূমিকা পালন করে৷ কলা, আম ও আভোকাডোর মতো পাঁচশ’রও বেশি উদ্ভিদ এ কারণে বাদুড়ের উপর নির্ভরশীল৷ মেক্সিকোর ‘কলা বাদুড়’ বা ‘নাক উঁচু বাদুড়’ (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) এই কাজ করে বলে অস্বাভাবিক লম্বা জিহ্বার অধিকারী৷
ছবি: picture-alliance/All Canada Photos
প্রায় অমর
বছরে একটিমাত্র সন্তানের জন্ম দিতে পারলেও অন্য অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় বাদুড় জগতে শিশুমৃত্যুর হার অনেক কম৷ কয়েকটি প্রজাতির আয়ু এমনকি ৩০ বছর হতে পারে৷ বার্ধক্যের লক্ষণ এড়িয়ে চলার ক্ষমতাও রয়েছে এই প্রাণীর৷ বিজ্ঞানীদের মতে, অন্য কোনো প্রাণী এভাবে বয়স বাড়ার ফলে কোষের ক্ষয় এড়াতে এবং কোষ মেরামত করে ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/AGAMI/T. Douma
রোগ বহনকারী
অসংখ্য ভাইরাস বাদুড়ের শরীরে বাসা বাঁধে৷ মারবুর্গ, নিপা, এবোলা ও সার্স, মার্স এবং হালের কোভিড-১৯-এর মতো করোনা ভাইরাস এগুলির মধ্যে পড়ে৷ অভিনব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কল্যাণে বাদুড় নিজে আক্রান্ত না হলেও অনেক প্রজাতির শরীরে মারাত্মক সব ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে৷ শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা ও অ্যান্টি-ভাইরাল ‘ইন্টারফেরন’ পদার্থের কারণেই বাদুড় সহজে অসুস্থ হয় না৷
ছবি: picture-lliance/Zuma
বাদুড় সংরক্ষণের প্রয়োজন
মারাত্মক রোগ বহনের কারণে বদনাম সত্ত্বেও বাদুড় সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি৷ কারণ, বিভিন্ন ইকোসিস্টেমে বাদুড় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে৷ বাদুড় ছাড়া আফ্রিকা মহাদেশে মশার সংখ্যা মারাত্মক হারে বেড়ে যেতো এবং ম্যালেরিয়ার প্রকোপ অকল্পনীয় মাত্রা ধারণ করতো৷