জার্মানির স্বাস্থ্য খাতের জন্য সিদ্ধান্তটি বেশ বিতর্কিতই ছিল৷ ২০১৭ সালের ১০ মার্চ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীদের গাঁজা সংগ্রহের অনুমতি দেয় সরকার৷ এরপর থেকেই এর চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে৷
ডাক্তার, ফার্মেসি আর স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানিগুলো এই চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ কেননা চাহিদা অনুযায়ী দেশটিতে গাঁজার সরবরাহ নেই৷ এই পরিস্থিতিই এখন ব্যবসার বড় দুয়ার খুলে দিয়েছে গাঁজা সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য৷ মূলত নেদারল্যান্ডস আর ক্যানাডার প্রতিষ্ঠানগুলোর নজর এখন জার্মানির দিকে৷
গাঁজাসহ বেশ কিছু মাদক পৃথিবীর অনেক দেশেই অবৈধ৷ কিন্তু কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যেই বৈধ হয়েছে এসবের সীমিত সেবন ও বেচাকেনা৷ বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/empics/D. Dyckগাঁজা সেবন অনেক দেশেই আইনতভাবে অপরাধ নয়৷ এমনই একটি দেশ ল্যাটিন অ্যামেরিকার আর্জেন্টিনা৷ সেখানে চিকিৎসার জন্য গাঁজা আগে থেকেই বৈধ হলেও ব্যক্তিগত পছন্দে সেবনের জন্য গাঁজাকে ২০০৯ সাল থেকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich২০১৭ সালের ১০ মার্চ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীদের গাঁজা সংগ্রহের অনুমতি দেয় জার্মান সরকার৷ অনুমোদনের পর দেশটিতে গাঁজার চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়েছে৷
ছবি: Imago/C. Mangচিকিৎসার উদ্দেশ্যে গাঁজার সেবন ও চাষ অস্ট্রেলিয়ায় বৈধ৷ সেই দেশের আদিবাসীদের মধ্যে গাঁজা সেবনের মাত্রা শহরাঞ্চলে কিছুটা কম বলে জানা যায়৷
ছবি: Getty Images/P.Kaneপ্রাপ্তবয়স্করা সেবনের জন্য তিন গ্রাম ওজন পর্যন্ত গাঁজা সঙ্গে রাখতে পারবেন ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে৷ ২০০৩ সাল থেকে কার্যকরী এই আইনে মাথাপিছু একটি গাঁজা গাছ লাগানোকেও বৈধতা দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Reuters/P. Wojazerমাথাপিছু ৫০ গ্রাম গাঁজা কেনা বলিভিয়ায় বৈধ৷
ছবি: imago/CHROMORANGEসারা বিশ্বে আলোড়ন তুলে সব রকমের গাঁজা সেবন ও চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ক্যানাডা সরকার৷ ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে নতুন আইন এনে গাঁজা সার্বিকভাবে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/empics/The Canadian Press/J. Fransonল্যাটিন অ্যামেরিকার আরেক দেশ চিলিতেও ২০০৫ সাল থেকে বৈধ হয়েছে গাঁজা বা মারিহুয়ানার সেবন ও বিক্রি৷
ছবি: Nelson Vergara/Revista Mingaসেই ১৯৭৬ সাল থেকেই ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে গাঁজা বৈধ৷ সেই দেশের বিখ্যাত ‘কফিশপ’-গুলিতে গাঁজা বিক্রি ও সেবন বৈধ হলেও পাঁচ গ্রামের বেশি গাঁজা রাখতে পারবেন না কেউ৷
ছবি: Getty images/AFP/J. Juinenআফ্রিকার প্রথম দেশ হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১৮ সালে গাঁজা সেবন ও গাঁজা চাষকে বৈধতা দেয়৷ প্রসঙ্গত, এই দেশের ডাক্তারেরা চিকিৎসার প্রয়োজনে গাঁজা সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন ঠিকই, কিন্তু কোনো বিশেষ দোকান বা হাসপাতালে তা বিক্রির পরিষেবা এই মুহূর্তে নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bosch২০১৩ সাল থেকে উরুগুয়েতে সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়েছে গাঁজা সেবন ও বিক্রি৷ শুধু তাই নয়, নিষেধাজ্ঞা উঠেছে গাঁজা চাষের ওপর থেকেও৷
ছবি: Reuters/A. Stapffঅঞ্চল অনুসারে ভিন্ন আইন থাকায় গাঁজা বা অন্যান্য মাদক বিষয়ক আইনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্ন৷ কিছু রাজ্যে ব্যক্তিগত সেবন বৈধ হলেও দেখা যায় যে, সেখানে গাঁজার চাষে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷ কিন্তু ডাক্তারি পরামর্শে গাঁজা সেবন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অংশেই বৈধ বলে জানা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/J. Locher ক্যানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান টিলরে জার্মানির সব ফার্মেসিতে খুব শিগগিরই গাঁজার ফুল সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে৷ অন্যদিকে ডাচ প্রতিষ্ঠান নুভেরা বলেছে, কয়েক লাখ রোগীর কাছে গাঁজা সরবরাহের জন্য জার্মানিকে তারা গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে বিবেচনা করছে৷ জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে ঔষধ হিসেবে গাঁজা রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলও৷ দেশটিতে গাঁজার চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে ২০০ টি গবেষণা চলমান রয়েছে৷
স্বল্প আর্দ্রতা আর উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে ইসরায়েলে গাঁজা চাষও ভাল হয়৷ ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্রতি বছর সেখানে ১৮ টনের বেশি ঔষধি গাঁজা উৎপাদন হয়৷ দেশটির অন্যতম ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্যানাক্সিয়ার প্রধান দাদি সেগাল জানান, ইসরায়েল থেকে আমদানি করতে আগ্রহী এমন বেশ কিছু জার্মান প্রতিষ্ঠানের সাথে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
দুই বছর আগে উন্মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে প্রায় ১,০০০ জন ঔষধি গাঁজা ব্যবহার করতেন৷ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্মান অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিস্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফার্মেসিগুলো গেল বছর ৯৫,০০০ প্রেসক্রিপশন-এর আওতায় ১,৪৫,০০০ ইউনিট গাঁজার ঔষধ ও অপ্রক্রিয়াজত ফুল সরবরাহ করেছে৷ ২০১৭ সালের চেয়ে তা ১০ গুণ বেশি৷
সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও জার্মানিতে গাঁজার ঔষধের চিকিৎসা নেন এমন রোগীর সংখ্যা এখন প্রায় ১৫ হাজার বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ কিন্তু সেই অনুযায়ী সেখানে গাঁজার উৎপাদন বৃদ্ধির মতো যথেষ্ট রাজনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷
ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর ড্রাগস অ্যান্ড মেডিক্যাল প্রোডাক্টস এখন চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য ১০.৪ টন গাঁজা উৎপাদনের অনুমতি দেয়ার নিলাম আহবান করতে যাচ্ছে৷ কর্তৃপক্ষের আশা ২০২০ সালের শেষ নাগাদ জার্মানিতে প্রথম গাঁজার চাষ শুরু হবে৷
এফএস/জেডএইচ (ডিপিএ)