জার্মানিতে গির্জায় আশ্রয়ের ৪০ বছর
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩আলতুনকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে কিনা, সেই রায় দেয়ার কথা ছিল বার্লিনের উচ্চ প্রশাসনিক আদালতের৷ তুরস্কে তখন সামরিক শাসন চলছিল এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর নিপীড়ন চলছিল৷
২৩ বছর বয়সি আলতুনের ঘটনা জার্মানিতে আলোড়ন তুলেছিল৷ তার মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পর ফিলিস্তিনের কয়েকজন শরণার্থী বার্লিনের হলিক্রস গির্জার যাজক ইয়ুর্গেন কোয়ানটের কাছে গিয়ে আশ্রয়ের আবেদন করেন৷ সেই সময় তারা গির্জায় আশ্রয় দেয়া সংক্রান্ত প্রাচীন এক খ্রিস্টান ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেছিলেন৷ পরে গির্জায় তাদের আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল৷ ‘‘আমরা সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে আরও সক্রিয় হতে চেয়েছিলাম,'' ডয়চে ভেলেকে জানান ৭৯ বছর বয়সি কোয়ানট৷
এভাবেই জার্মানিতে গির্জায় আশ্রয়ের বিষয়টি শুরু হয়েছিল৷ গত ৪০ বছরে ক্যাথলিক, প্রোট্যাস্ট্যান্ট ও স্বাধীন গির্জায় কয়েক হাজার জনকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মান ইকুমেনিক্যাল কমিটি৷ যে শরণার্থীরা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নিজেদের জীবন বিপদের মুখে ফেলার হুমকি দেন, তাদেরকেই অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়ে থাকে গির্জা কর্তৃপক্ষ৷
গতমাসের মাঝামাঝি সময়ে জার্মান ইকুমেনিক্যাল কমিটি জানিয়েছিল, বর্তমানে অন্তত ৬৫৫ জন গির্জায় আশ্রয়ে আছেন, যার মধ্যে ১৩৬টি শিশু আছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম যে ইইউ দেশে পৌঁছাবেন সে দেশকেই তার আশ্রয় আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে হবে৷ তবে কোনো আশ্রয়প্রার্থী যদি জার্মানিতে অন্তত ছয়মাস বাস করে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে৷ সে কারণে বেশিরভাগ আশ্রয়প্রার্থীকে আর বেশিদিন গির্জায় থাকতে হচ্ছে না৷ কারণ ১৯৮৩ সালে যখন গির্জায় আশ্রয়দান শুরু হয়েছিল তখন প্রথমদিকে শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো থেকে রক্ষা করতে অনেকদিনের জন্য গির্জায় থাকার ব্যবস্থা করা হতো৷ তবে বর্তমানে বেশিরভাগক্ষেত্রে আশ্রয়প্রার্থীদের অন্য ইইউ দেশে পাঠানো থেকে রক্ষা করা হয়৷
তবে গির্জায় আশ্রয়ের বিষয়টি বিতর্কিত৷ রাজনীতিবিদরা মাঝেমধ্যে গির্জা পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন৷ অনেকসময় যাজকদের কাউকে কেন আশ্রয় দেয়া হয়েছে সেই ব্যাখ্যা দিতে আদালতে হাজির হতে হয়৷
গত জুলাই মাসে ফিয়ারসেন শহরে অভিবাসন কর্মকর্তারা এক গির্জায় ঢুকে সেখানে আশ্রয়ে থাকা এক কুর্দি দম্পতিকে বের করে দেন৷ এরপর দেশব্যাপী বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে তাদের আর পোল্যান্ডে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷
ক্রিস্টোফ স্টার্ক/জেডএইচ66657010