জার্মানিতে এক বছরের ব্যবধানে গৃহহীনের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার বেড়েছে৷ ২০১৭ এবং ২০১৮ সালের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে এই তথ্য৷ বিশেষ করে অভিবাসী বংশোদ্ভূতরা এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত নাজুক অবস্থানে রয়েছেন৷
ছবি: DW/Shamsan Anders
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা চার শতাংশের বেশি বেড়েছে৷ ২০১৭ সালে ইউরোপের এই দেশটিতে সাড়ে ছয়লাখের মতো গৃহহীন মানুষ ছিল৷ এক বছর পর সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার৷ গৃহহীনদের সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা বিএজি জানিয়েছে এই তথ্য৷
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ভেরেনা রোসেনকে সোমবার বলেন, ‘‘২০১৭ সালের সঙ্গে তুলনায় চার দশমিক দুই শতাংশ গৃহহীন বেড়েছে৷’’
গৃহহীনদের মধ্যে অভিবাসী বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷ গত একবছরে জার্মান গৃহহীনদের সংখ্যা বেড়েছে এক দশমিক দুই শতাংশ, অন্যদিকে অভিবাসী বংশোদ্ভূতদের মধ্যে এই হার বেড়েছে পাঁচ দশমিক নয় শতাংশ হারে৷
রোসনকের মতে সাশ্রয়ী ভাড়া বাড়ির অভাব, সামাজিক গৃহায়ন ব্যবস্থার সীমিতকরণ এবং দারিদ্র্যসীমা বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷
এআই/কেএম (রয়টার্স, কেএনএ)
২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
হামবুর্গে নিরাশ্রয়দের জন্য ‘কনটেইনার গ্রাম’
জার্মানির শহরগুলিতে একদিকে নিরাশ্রয় মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে তাদের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলেছে – বিশেষ করে শীতকালে৷ মাল পরিবহণের ইস্পাত কনটেইনারে বাসা বানানো তার মধ্যে একটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
অবশেষে নিজের একটা ঘর
বিছানা, আলমারি, টেবিল – আনা নামের মহিলাটির সাত বর্গমিটার পরিধির কনটেইনার বাসাতে সব কিছু ধরে গেছে৷ ঘরটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন আনা৷ তাঁর মতো আরো ন’জন মহিলা হামবুর্গের এই ‘কনটেইনার গ্রামের’ বাসিন্দা; এরা সবাই এর আগে বেশ কয়েক বছর ধরে রাস্তাতেই দিন কাটিয়েছেন৷ ক্যারিটাস ত্রাণ সংস্থা হামবুর্গ পলিটেকনিকের সঙ্গে মিলে ‘কনটেইনার গ্রাম’ প্রকল্পটি চালু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
পলিটেকনিকের ক্যাম্পাসে সবাই নিরাপদ
হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বিজ্ঞান মহাবিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ক্যারিটাসের কনটেইনারগুলি বসানো হয়েছে৷ বিশেষ করে নিরাশ্রয় মহিলাদের জন্য এই নিরাপত্তার মূল্য অসীম; এর আগে এরা রাস্তায় বারংবার সহিংসতা ও যৌন হামলার সম্মুখীন হয়েছেন৷ হামবুর্গের নিরাশ্রয় মানুষদের অধিকাংশ পুরুষ হলেও, নিরাশ্রয় মহিলাদের সংখ্যাও প্রায় দু’হাজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
সকালে একসঙ্গে প্রাতরাশ
একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার ও সোশ্যাল ওয়ার্ক স্নাতক পাঠক্রমের পড়ুয়ারা সারা সপ্তাহ ধরে ‘কনটেইনার গ্রামের’ মহিলাদের সঙ্গে থাকেন৷ পড়ুয়ারা সরকারি কার্যালয়ে যাবার সময়েও মহিলাদের সঙ্গে থাকেন; লক্ষ্য হল, তাদের জন্য স্থায়ী বাসার বন্দোবস্ত করা৷ হামবুর্গে যেভাবে বাড়িভাড়া বাড়ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কাজটা খুব সোজা নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
যারা শুধু নিরাশ্রয় নয়, নিরুপায়
মহিলারা এই ‘কনটেইনার গ্রামে’ থাকেন গড়ে তিন বছর করে, বলে জানালেন ক্যারিটাস সংস্থার আন্ড্রেয়া নিওপেক, যিনি কলেজে লেকচারার হিসেবেও কাজ করে থাকেন৷ ‘‘যে সব মহিলা অন্য কোথাও জায়গা পাননি, কিংবা সেখান থেকে তাদের বার করে দেওয়া হয়েছে, তাদেরই আমরা সর্বাগ্রে নিই,’’ বলেছেন নিওপেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
ট্রান্সজেন্ডার
৩৪ বছর বয়সি ট্রান্সজেন্ডার মহিলা রোজেন বহু বছর আগে বুলগেরিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছিলেন রোজগারের আশায়৷ পরে অসুখের কারণে তিনি নিরাশ্রয় হয়ে পড়েন – ওদিকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে তাঁর বাসা পাওয়া বিশেষভাবে শক্ত৷ আবার নিরাশ্রয় মহিলাদের জন্য আশ্রয়েও তাঁর স্থান হয় না; ‘‘সেখানে প্রশ্ন ওঠে, তিনি ঠিক কতোটা মহিলা,’’ জানালেন নিওপেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
নতুন জীবন
‘‘আমি এখানে নিরাপদ বোধ করি,’’ বললেন স্লোভাকিয়া থেকে আসা ট্রান্সজেন্ডার মহিলা সারা৷ জীবনে অনেক দুঃখ সয়েছেন সারা; শিশুবয়সে দুর্ঘটনার পর তাঁর একটা পা কাটা যায়; ১৫ বছর বয়স থেকে তাঁকে দেহব্যবসায়ে নামতে হয়৷ বহু বছর ধরে ফুটপাথে শোয়ার পর ‘‘আজ আমার একটা নিজের বিছানা আছে,’’ গর্ব করে বললেন সারা৷
ছবি: picture alliance/dpa/G. Wendt
জিনিসপত্র রাখার জায়গা
‘কনটেইনার গ্রামের’ অন্যান্য মহিলাদের মতো স্লোভাকিয়া থেকে আসা ইওলানা-ও কোনো সামাজিক ভাতা পান না৷ প্রকল্পটির লক্ষ্যই ছিল এভাবে অসুখ-বিসুখ, মাদকাসক্তি, গণিকাবৃত্তি বা সঠিক ভিসা না থাকার কারণে যে সব মহিলারা সরকারি সাহায্য পান না, তাদের সহায়তা করা৷