জার্মানিতে ক্রমশ বাড়ছে গৃহহীন মানুষ৷ তাদের মাথা গোঁজার জন্য স্বল্প কিংবা দীর্ঘমেয়াদি পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা নেই৷ একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ জার্মানিতে অন্তত তিন লাখ ১৩ হাজার মানুষের থাকার ঘর নেই৷ এই সংখ্যা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ৪২ হাজার পর্যন্তও হতে পারে৷ জার্মান ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস (ডিআইএমআর)-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে৷
হামবুর্গে নিরাশ্রয়দের জন্য ‘কনটেইনার গ্রাম’
জার্মানির শহরগুলিতে একদিকে নিরাশ্রয় মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে তাদের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলেছে – বিশেষ করে শীতকালে৷ মাল পরিবহণের ইস্পাত কনটেইনারে বাসা বানানো তার মধ্যে একটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
অবশেষে নিজের একটা ঘর
বিছানা, আলমারি, টেবিল – আনা নামের মহিলাটির সাত বর্গমিটার পরিধির কনটেইনার বাসাতে সব কিছু ধরে গেছে৷ ঘরটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন আনা৷ তাঁর মতো আরো ন’জন মহিলা হামবুর্গের এই ‘কনটেইনার গ্রামের’ বাসিন্দা; এরা সবাই এর আগে বেশ কয়েক বছর ধরে রাস্তাতেই দিন কাটিয়েছেন৷ ক্যারিটাস ত্রাণ সংস্থা হামবুর্গ পলিটেকনিকের সঙ্গে মিলে ‘কনটেইনার গ্রাম’ প্রকল্পটি চালু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
পলিটেকনিকের ক্যাম্পাসে সবাই নিরাপদ
হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বিজ্ঞান মহাবিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ক্যারিটাসের কনটেইনারগুলি বসানো হয়েছে৷ বিশেষ করে নিরাশ্রয় মহিলাদের জন্য এই নিরাপত্তার মূল্য অসীম; এর আগে এরা রাস্তায় বারংবার সহিংসতা ও যৌন হামলার সম্মুখীন হয়েছেন৷ হামবুর্গের নিরাশ্রয় মানুষদের অধিকাংশ পুরুষ হলেও, নিরাশ্রয় মহিলাদের সংখ্যাও প্রায় দু’হাজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
সকালে একসঙ্গে প্রাতরাশ
একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার ও সোশ্যাল ওয়ার্ক স্নাতক পাঠক্রমের পড়ুয়ারা সারা সপ্তাহ ধরে ‘কনটেইনার গ্রামের’ মহিলাদের সঙ্গে থাকেন৷ পড়ুয়ারা সরকারি কার্যালয়ে যাবার সময়েও মহিলাদের সঙ্গে থাকেন; লক্ষ্য হল, তাদের জন্য স্থায়ী বাসার বন্দোবস্ত করা৷ হামবুর্গে যেভাবে বাড়িভাড়া বাড়ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কাজটা খুব সোজা নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
যারা শুধু নিরাশ্রয় নয়, নিরুপায়
মহিলারা এই ‘কনটেইনার গ্রামে’ থাকেন গড়ে তিন বছর করে, বলে জানালেন ক্যারিটাস সংস্থার আন্ড্রেয়া নিওপেক, যিনি কলেজে লেকচারার হিসেবেও কাজ করে থাকেন৷ ‘‘যে সব মহিলা অন্য কোথাও জায়গা পাননি, কিংবা সেখান থেকে তাদের বার করে দেওয়া হয়েছে, তাদেরই আমরা সর্বাগ্রে নিই,’’ বলেছেন নিওপেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
ট্রান্সজেন্ডার
৩৪ বছর বয়সি ট্রান্সজেন্ডার মহিলা রোজেন বহু বছর আগে বুলগেরিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছিলেন রোজগারের আশায়৷ পরে অসুখের কারণে তিনি নিরাশ্রয় হয়ে পড়েন – ওদিকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে তাঁর বাসা পাওয়া বিশেষভাবে শক্ত৷ আবার নিরাশ্রয় মহিলাদের জন্য আশ্রয়েও তাঁর স্থান হয় না; ‘‘সেখানে প্রশ্ন ওঠে, তিনি ঠিক কতোটা মহিলা,’’ জানালেন নিওপেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
নতুন জীবন
‘‘আমি এখানে নিরাপদ বোধ করি,’’ বললেন স্লোভাকিয়া থেকে আসা ট্রান্সজেন্ডার মহিলা সারা৷ জীবনে অনেক দুঃখ সয়েছেন সারা; শিশুবয়সে দুর্ঘটনার পর তাঁর একটা পা কাটা যায়; ১৫ বছর বয়স থেকে তাঁকে দেহব্যবসায়ে নামতে হয়৷ বহু বছর ধরে ফুটপাথে শোয়ার পর ‘‘আজ আমার একটা নিজের বিছানা আছে,’’ গর্ব করে বললেন সারা৷
ছবি: picture alliance/dpa/G. Wendt
জিনিসপত্র রাখার জায়গা
‘কনটেইনার গ্রামের’ অন্যান্য মহিলাদের মতো স্লোভাকিয়া থেকে আসা ইওলানা-ও কোনো সামাজিক ভাতা পান না৷ প্রকল্পটির লক্ষ্যই ছিল এভাবে অসুখ-বিসুখ, মাদকাসক্তি, গণিকাবৃত্তি বা সঠিক ভিসা না থাকার কারণে যে সব মহিলারা সরকারি সাহায্য পান না, তাদের সহায়তা করা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
7 ছবি1 | 7
সংস্থাটি জানিয়েছে, সংজ্ঞাগত পার্থক্যের কারণে গৃহহীনদের নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন৷ বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তি, ক্যাম্পে থাকা শরণার্থী, জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা গাড়ি, ক্যারাভানে যারা বাস করে তাদেরকেও অনেক ক্ষেত্রে গৃহহীন হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
গৃহহীনদের চাপ সবচেয়ে প্রকট জার্মানির রাজধানী বার্লিনে৷ ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে তাদের সংখ্যা সেখানে তিনগুণ বেড়েছে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটটি ফেডারেল রাজ্যে গৃহহীনদের সংখ্যা গণনা করা হয় না এবং জাতীয়ভাবে এই বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান রাখা হচ্ছে না৷
ডিআইএমআর বলছে, জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলো অস্থায়ী থাকার জায়গাতেই আধা স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে৷ গৃহহীনদের জন্য ন্যূনতম ভাড়া নির্ধারণ করা হচ্ছে জার্মানির আইন অনুসরণ না করে৷ সেই সঙ্গে সব জায়গায় থাকার ব্যবস্থাও স্বাস্থ্যকর নয়৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব কারণে মানুষ গৃহহীন থাকছে সেই কারণগুলো নিরসনেও কোনো মনযোগ দেয়া হচ্ছে না৷ মাদকাসক্তি, মানসিক কিংবা শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় নেই পর্যাপ্ত উদ্যোগ বা সুবিধা৷
গৃহহীনদের আবাসনের জন্য একটি জাতীয় মানদণ্ড তৈরি করে দেয়া না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷